অবশ্যই, মাইকেল, অবশ্যই, সমীহের সাথে বলল কার্লো
মাইকেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে এল সে। এখান থেকে ফোন করল তার রক্ষিতা মেয়েটাকে বাল, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশি রাত করে যাবে সে এই মেয়েটার ব্যাপারে সম্ভাব্য সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করে কার্লো। অত্যন্ত গোপনে ওয়েস্ট বারির একটা ফ্ল্যাটে রেখেছে। তাকে।
এক বোতল হুইস্কি নিয়ে জানালার ধারে বসল কার্লো মাইকেল যখন বলেছে, অপেক্ষা করতেই হবে। বসে বসে মদ খেয়ে অনেকটা সময় পার করে দিল সে। দুপুরের একটু পর থেকে উঠানের ফটক দিয়ে গাড়ি ঢুকতে শুরু করল।
একটা গাড়ি থেকে পীট ক্লেমেঞ্জাকে নামতে দেখল কার্লো। একটু পর আরও একটা গাড়ি ঢুকল উঠানে। টেসিও নামল সেটা থেকে। একজন সেটি মাইকেলের বাড়িতে নিয়ে গেল দুজনকে।
আরও কয়েকটা ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। ক্লেমেঞ্জা মাইকেলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে উঠান ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু টেসিওকে বেরিয়ে আনতে দেখল না কার্লো।
নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে উঠানে ঘুর ঘুর করছে এখন কার্লো, নির্মল বাস খাচ্ছে উঠানে যারা পাহারা দেয় তাদের সবাইকে চেনে সে, কয়েকজনের সাথে এক আধটু আলাপালাপও আছে মনে মনে ভাবল, ওদের সাথে গল্পগুজ করে কিছুটা সময় কাটানো যেতে পারে কিন্তু প্রহরাদের কাছে এসে হতভম্ব হয়ে গেল সে। এরা কারা, এদেরকে তো কখনও দেখেনি কার্লো: কিছুক্ষণ বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকার পর ধীর পায়ে ফটকের দিকে এগোল সে এখানে এসে যা দেখল, তাতে বিস্ময়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেল তার ফটক পাহারা দিচ্ছে রকো ল্যাস্পনি। কিন্তু ফটক পাহারা দেবার মত হালকা কাজ করার লোক নয় সে। রকো ল্যাম্পনি আরও অনেক উঁচুদরের কর্মচারী তার মানে, বিদ্যুৎ চমকের মত টের পেয়ে গেল কার্লো, অৰাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্ধুরে উষ্ণ হাসি উপহার দিয়ে কার্লোকে হ্যালো বলল রকো
পেশীতে আশ্চর্য টান অনুভব করছে কার্লো। রকোকে আন্তরিকভাবে হাসতে দেখে সতর্ক হয়ে গেল সে।
শুনলাম, বলল রকো, আপনি নাকি ডনের সাথে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন?
শ্রাগ করল কার্লো, বলল, না ভেগাসে যাবার কথা ছিল আমার, কিন্তু মাইকেল আমাকে কি একটা দায়িত্ব দেবে বলে দুদিন থেকে যেতে বলেছে।
তাই নাকি? একটু খুশি, একটু অবাক দেখাল রকাকে। আমাকেও তো তাই বলেছে। তারপর ডেকে বলল ফটকের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে আমাকে। ভাবো একবার! এর কোন মানে হয়? যাক বাবা, আমার কি, হুকুমের চাকর বৈ তো নই। মালিক যা বলে শিরোধার্য। তার কথা শুনে মনে হলো, বলতে চায়, বাপের সাথে মাইকেলের তুলনা হয় না কথায় একটু যেন নিন্দার সুর।
কিন্তু সুরটাকে উপেক্ষা করে গভীর ভাবে বলল কার্লো, সব কিছুর ভাল মন্দ জেনেই কাজ করে মাইক।
রূঢ় উত্তরটা মুখ বুজে গ্রহণ করল রকে। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ম্রাবার নিজের বাড়িতে ফিরে এল কার্লো। কিছু একটা ঘটবে ঠিকই, কিন্তু সে সম্পর্কে রকো কোন খবর রাখে না।
.
মাইকেলের লিভিংরুম জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ও। দেখতে পাচ্ছে উঠানে ঘুর ঘুর করছে কার্লো একটা গ্লাসে হুইস্কি ঠেলে তার হাতে সেটা ধরিয়ে দিল টম হেগেন। কৃতজ্ঞ বোধ করল মাইকেল, চুমুক দিল গ্লাসে।
পিছন থেকে কথা বলছে হেগেন। মাইকেলের কানে আশ্চর্য কোমল শোনাচ্ছে তার কণ্ঠস্বর। সময় হয়েছে, মাইক। কাজ শুরু করো এবার।
বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মাইকেলের, বলল, এত তাড়াতাড়ি চাইনি আমি, হেগেন। বাবা আরও কিছু দিন বাচলে ভাল হত।
আমি যখন টের পাইনি, বলল হেগেন, আর কেউ টের পাবার প্রশ্নই ওঠে না। সব ঠিকঠাক মত ঘটবে, কোথাও কোন গোলমাল হবে না। চমৎকার হয়েছে তোমার পরিকল্পনাটা।
ঘুরে দাঁড়াল মাইকেল। এতে বাবার অবদানই বেশি, বলল ও। এত বুদ্ধি রাখেন উনি তা আগে কখনও বুঝিনি। কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই জানো।
তার সাথে কারও তুলনা হয় না, কোমল কণ্ঠে বলল হেগেন। কিন্তু এ-ও অপূর্ব। এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারত না। তার মানে তুমিও কম যাও না।
কি হয় দেখা যাক, বলল মাইকেল। ক্যাপোরেজিমিরা উঠানে?
হ্যাঁ।
এক চুমুকে গ্লাসটা খালি করে ফেলল মাইকেল আমার কাছে পাঠিয়ে দাও ক্লেমেঞ্জাকে। আমি নিজে সরাসরি নির্দেশ দেব ওকে। আর টেসিওর মুখ দেখতে চাই না আমি। আধ ঘন্টা পর তাকে নিয়ে বার্জিনির সাথে দেখা করতে যাব, এইটুকু শুধু বলে রাখো। তারপর ওর ভার নেবে ক্লেমেঞ্জার সৈনিকরা।
টেসিওকে রেহাই দেবার কোন উপায় নেই? উদাস ভঙ্গিতে জানতে চাইল হেগেন।
নেই।
.
বাফেলো সিটি। শহরের ছোট একটা রাস্তা। রাস্তার ধারে ছোট একটা পিটসা পাইয়ের দোকান। খুব ভিড় হয় দোকানটায়, চুটিয়ে ব্যবসা করছে মালিক লোকটা। অন্যান্য দিনের মত আজও লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যেতে ভিড় একেবারে কমে গেল। একটু পরই দেখা গেল দোকান একেবারে খালি। সিমেন্টের প্লাস্টার করা উঁচু ওভেনের মাথার উপর একটা থাক রয়েছে, ট্রে থেকে অবশিষ্ট কয়েকটা পাই-এর সুইস সেখানে তুলে রাখল দোকানদার। আর একটা মাত্র পাই বেক হচ্ছে ওডেনে, উঁকি দিয়ে দেখে নিল, সেটাকে। এখনও ফুটতে শুরু করেনি চিজটা। খদ্দেররা অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাই কেনে এখান থেকে। তাদের জন্যে আলাদা একটা কাউন্টার আছে। হঠাৎ চোখ পড়তেই দোকানদার দেখতে পেল, কাউন্টারে একটা হাত রেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন লোক। কাউন্টারের ওপর হাতের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে তবলা বাজাচ্ছে সে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখাচোখি হতেই একটু হাল খদ্দের। এক স্নাইস দাও দেখি আমাকে।