লুকা ব্রাসি ছিল ওই জাতের একজন মানুষ। কিন্তু ওই জাতের মধ্যে সে ছিল অসাধারণ। তাই অনেকদিন পর্যন্ত কেউ তাকে মারতে পারেনি। এ-ধরনের লোকেদের সাথে আমাদের তেমন কোন সম্পর্ক থাকে না। তবে লুকার মত একজন। নোককে যদি ঠিকমত ব্যবহার করা যায়, তোমার হাতে সে একটা মারাত্মক অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। রহস্যটা হলো, মৃত্যুকে যখন ভয় পায় না সে, বরং তাকে খুঁজে বেড়ায়, তার মানে নিজেকে তোমার এমন ভাবে গড়ে নিতে হবে যাতে শুধু তোমার হাতে মরতে চাইবে না সে। তার মনে এই একটাই ভয়, সে ভয় মৃত্যু নয়–তুমি যদি তাকে মারতে চাও, সেই ভয়। তা যদি করতে পারো, ওই লোক কেনা গোলাম হয়ে থাকবে তোমার।
মারা যাবার আগে মাইকেলকে যত জ্ঞান দিয়েছেন ডন সেগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে মূল্যবান। এবং সেই জ্ঞান ব্যবহার করেই নেরিকে লুকা ব্রাসিতে পরিণত করুল মাইকেল।
.
ব্রঙ্কস। অ্যালবার্ট নেরির ফ্ল্যাট।
নেরি ছাড়া আর কেউ নেই বাড়িতে। আজ আবার অনেকদিন পর পুলিশের পোশাকটা পরতে যাচ্ছে সে। অত্যন্ত যত্নের সাথে পুরানো নীল সার্জের ইউনিফর্মটায় বুরুশ চালাচ্ছে সে। এরপর পালিশ করতে হবে হোলস্টারটা। টুপিটাকেও বাদ দেবে না আর মজবুত কার্লো জুতোটাকেও চকচকে না করলে নয় মনটা আজ আশ্চর্য একটা আনন্দে ভরে আছে তার। ছোটখাট কাজগুলো করতে খুব উৎসাহ পাচ্ছে। আজ দুবছর হলো ওকে ছেড়ে চলে গেছে রিটা, তারপর থেকে এই প্রথম কোন কাজ করে মজা পাচ্ছে নেরি। প্রত্যেক মানুষের দুনিয়ায় একটা নিজের জায়গা থাকে, সেই জায়গা কেউ খুঁজে পায়, কেউ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শুধু খুঁজেই বেড়ায়। নেরি তার মনের মত জায়গাটা পেয়ে গেছে। মাইকেল কর্লিয়নি তাকে একাগ্রভাবে বিশ্বাস করে। তার সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করবে না আজ নেরি।
৪.১২ একই দিনের ঘটনা
১২.
একই দিনের ঘটনা!
লং বীচ। উঠানে এসে থামল দুটো গাড়ি। একটা গাড়ি কনি, তার মা, আর তার দুই ছেলেকে নিয়ে এয়ারপোর্টে যাবে। কার্লোর পরিবার ভেগাসে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে সেখানে উঠে যাবার আগে এটা ওদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার মহড়া বলা যেতে পারে। কনি অবশ্য আপত্তি করেছে, কিন্তু তা জেনেও কার্লোকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে নিজের ইচ্ছাটাকে কাজে পরিণত করেছে মাইকেল। বার্জিনির সাথে শান্তি সভায় বসার আগে সবাইকে উঠান থেকে সরিয়ে দিতে চায় ও, কিন্তু কথাটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। শান্তি সভা আয়োজন সম্পর্কে অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে, পরিবারের অল্প কয়েকজন মাথা ছাড়া আর কেউ জানে না ব্যাপারটা।
দ্বিতীয় গাড়িটা কে আর তার ছেলেদের জন্যে। কে তার বাপের বাড়ি নিউ হ্যাম্পশায়ারে বেড়াতে যাচ্ছে। ওদের সাথে মাইকেল যাচ্ছে না, তার কারণ কাজের সাঙ্ঘাতিক চাপ পড়েছে, উঠান ছেড়ে বেরুবার উপায় নেই তার।
গতরাতে লোক মারফত খবর পাঠিয়ে কার্লোকে জানিয়ে দিয়েছে মাইকেল, বিশেষ জরুরী ব্যাপারে দিন কয়েক তাকেও থাকতে হবে উঠানে। হপ্তার শেষের দিকে ভেগাসে গিয়ে পরিবারের সাথে মিলিত হতে পারবে সে। খবরটা শুনে ভীষণ চটে গেছে কনি। ফোনে মাইকেলকে ধরার চেষ্টা করেছিল সে গতরাতেই, কিন্তু। ব্যস্ততার অজুহাতে মাইকেলের সাথে যোগাযোগই করতে দেয়া হয়নি তাকে। এই মুহূর্তে কনির দুটো চোখ চঞ্চল হয়ে খুঁজছে মাইকেলকে। কে যেন বলল টম হেগেনের সাথে গোপন পরামর্শে বসেছে ও, এখন ওর সাথে দেখা করা অসম্ভব। অগত্যা গাড়িতে উঠে বল কনি। চোখ রাঙিয়ে স্বামীকে বলল, দুদিন পর তোমাকে যদি ভেগাসে না দেখি, আমি নিজে ফিরে এসে কানটি ধরে নিয়ে যাব, মনে থাকে যেন!
স্বামীসুলভ যৌন ষড়যন্ত্রের একটা ভাব মেশানো হাসি দেখা গেল কার্লোর ঠোঁটে। ঘাবড়াও মাত, কাজ শেষ হলেই ছুটব আমি।
জানালা দিয়ে মুখটা বাইরে বের করে দিল কনি আচ্ছা, মাইকেল তোমাকে আটকে দিল কেন বলো তো? ভুরু কুঁচকে উঠল তার দুশ্চিন্তায় ভুগছে। অস্বাভাবিক মোটা হয়ে গিয়ে চেহারাটা বিশ্রা করে তুলেছে! মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করল কার্লোর
অনেক দিন থেকেই তো বলছে, আমাকে খুব বড় একটা দায়ি; দেবে, বলল কার্লো। হয়তো সে ব্যাপারেই আলাপ করতে চায় যা বলল তাতে তো এই রকম আভাসই পেলাম। শান্তি সভার কথা কিছুই জানে না কার্লো।
সত্যি? আগ্রহের আতিশয্যে চোখ দুটো চকচক করছে কনির।
উপর-নিচে মাথা নেড়ে স্ত্রীকে আশ্বস্ত করল কার্লো কয়েক সেকেণ্ড পরই ফটক পেরিয়ে গেল গাড়িটা।
প্রথম গাড়িটা উঠান ছেড়ে চলে যাবার পর প্রায় সাথে সাথে স্ত্রী এবং ছেলেদেরকে নিয়ে বেরিয়ে এল মাইকেল। ওদেরকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে তুলে দেবে ও। এগিয়ে এল কার্লো! সৌজন্য দেখিয়ে কে-কে বলল, তার বেড়ানো যেন। উপভোগ্য হয়। দ্বিতীয় গাড়িটাও বেরিয়ে গেল উঠান ছেড়ে।
তোমাকে ধরে রাখতে হলো, সেজন্যে আমি দুঃখিত, কার্লো, মৃদু গলায় ভগ্নীপতিকে বলল মাইকেল।
কি আশ্চর্য, বলল কার্লো। এতে দুঃখিত হবার কি আছে? কাজ কাজই। আমি কিছু মনে করিনি।
আর, হ্যাঁ, শোনো, ফ্লোনের কাছাকাছি থেকো তুমি, কেমন? বলল মাইকেল। হাতের কাজ শেষ করেই ডাকব তোমাকে হাতের কাজ মানে, কয়েকটা খবর জানতে হবে আমাকে। ঠিক আছে?