বোতল কাত করে হুইস্কি ঢেলেছে মুখে, এমন সময় শব্দ হলো। দরজার তালায় চাবি ঢোকাবার শব্দ। কলঙ্কিনী স্ত্রী আসছে, বুঝতে পেরেও উঠছে না জনি। গলায় মদ ঢালছে।
কামরায় ঢুকল মেয়েটা। জনির সামনে এসে দাঁড়াল।
জনির চোখে কি অপূর্ব সুন্দর এই মেয়ে। চোখ দুটো বেগুনি, সাগরের গভীরতা সেখানে। দেবীর মত অম্লান মুখ। নিখুঁত, একহারা, কোমল শরীর। সিনেমার পর্দায় ওর রূপ আরও কয়েকশো গুণ বেড়ে যায়। দুনিয়ার দশ কোটি পুরুষ মার্গট অ্যাশটনের প্রেমে অন্ধ। গাঁটের পয়সা খরচ করে ওকে দেখতে যায় তারা।
কোন চুলোয় যাওয়া হয়েছিল? জানতে চাইল জনি।
কোথায় আবার, একটু ঢলাঢলি করতে বেরিয়েছিলাম।
মাতাল জনি তার উপর কতটা রেগে আছে, বুঝতে পারেনি মার্গট। লাফ দিয়ে ককটেল টেবিলটা টপকাল জনি, মার্গটের গলা টিপে ধরল। কিন্তু বেগুনি চোখের এত কাছে এসে কেমন যেন হয়ে গেল জনি। মূহুর্তে পানি হয়ে গেল তার রাগ। এই সময় একটু ভুল করে বসল মার্গট। ঠোঁট বাঁকা করে ব্যঙ্গের হাসি হাসল সে। এক পলকে আবার মাথায় রক্ত চড়ে গেল জনির। মারবে বলে ঘুষি তুলল সে।
না-না, জনি, চেঁচিয়ে উঠল মার্গট। মুখে মেরো না। আমি এখন ছবি করছি যে! হাসছে সে।
পেটে এক ঘুষি মেরে তাকে মাটিতে ফেলে দিল জনি। পরমুহর্তে ডাইভ দিয়ে পড়ল তার শরীরের উপর। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মার্গটের। হাঁসফাস করছে। তার কনুইয়ে ঘুষি মারছে জনি। চাপড় মেরে পাঁচ অঙুলের দাগ বসিয়ে দিচ্ছে রোদে পোড়া উরুতে।
কিশোর বয়সে হেলস কিচেন, নিউ ইয়র্কের গুণ্ডাপাড়ায় ছোট ছোট ছেলেদের ধরে উত্তম-মধ্যম দিত জনি, ঠিক সেই রকম করে মারছে তার স্ত্রীকে। ব্যথা কোথাও কম লাগছে না, তবে একটা দাঁত নড়ে বা নাক ভেঙে রূপের স্থায়ী কোন ক্ষতি হচ্ছে না।
খুব যে জোরে মারছে জনি, তা নয়। আসলে হাতে জোর পাচ্ছে না সে। মার খাচ্ছে, কিন্তু ফিক ফিক করে হাসছে মার্গট। হাই-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে মেঝেতে, উপর দিকে উঠে গেছে গাউন, কিন্তু সি থামছে না তার। আর সেই সাথে কথার হুল ফোটাচ্ছে, এসো, জনি, এসো। কাজ সারো..আসলে তাই তো চাইছ।
উঠে পড়ল জনি।
গড়িয়ে সরে গেল মার্গট, নৃত্য-পটিয়সীর মত লাফ দিয়ে উঠে জনির মুখোমুখি দাঁড়াল। ছোট্ট মেয়ের মত নাচছে, নাচতে নাচতে সুর করে বলছে, মারেনি, মারেনি! জনি আমাকে মারেনি! হঠাৎ ম্লান হয়ে গেল তার চেহারা, নাচ থামাল মর্গট। গাম্ভীর্য ফুটে উঠল চোখেমুখে, তাও নয়ন ভরে দেখার মত সুন্দর! বলল, বোকা, জনি, তুমি চিরকেলে বোকা। আহাম্মক, হাতে-পায়ে খিল ধরিয়ে দিলে আমার। কিভাবে প্রেম করতে হয় তাও তুমি জানো না। আনাড়ী খোকা। এখনও তুমি ভাবো ন্যাকামি ঢংয়ে যেভাবে গান গাইতে, মেয়েদের সাথে সেভাবে প্রেম করতে হয়! মাথা নাড়ছে মার্গট। বেচারা! তোমাকে আমি করুণা:করি, জনি। গুড বাই, জনি। শোবার ঘরে চলে গেল সে। শব্দ শুনে জনি বুঝল ভিতর থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়া হলো।
মেঝেতে বসল জনি। মুখ ঢাকল দুহাতে। অদ্ভুত একটা গ্লানি অনুভব করছে সে। অপমানে, নৈরাশ্যে অস্থির হয়ে উঠছে মন। নিঃসম্বল হাতে ছেলেদেরও প্রাণশক্তির কিছুটা জোর থাকে, সেই জোর খাঁটিয়ে ফোন তুলল জনি। একটা ট্যাক্সি ডাকল। এয়ারপোর্ট যাবে। ফিরে যাবে নিউইয়র্কে। ক্ষমতা দরকার এর দরকার বিচক্ষণ পরামর্শ। ভালবাসা দরকার, দরকার আত্মবিশ্বাস। এসব তাকে মাত্র একজনই দিতে পারেন। পৃথিবীতে একমাত্র তার কাছেই এসব চাইতে পারে জনি। তার কাছেই যাচ্ছে সে। তিনি ওর ধর্মপিতা। গড ফাদার
ডন কর্লিয়নি।
.
রুটিওয়ালা নাজোরিনি। প্রকাণ্ড একটা ইটালিয়ান রুটির মতই চেহারাটা। ফাপা ফোলা। একবার স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছে, একবার যুবতী মেয়ের দিকে, তারপর চট করে দেখে নিচ্ছে সহকারী এমজোকে। তার ভুরু, জোড়া কোঁচকানো। সারা গায়ে ময়দা মেখে সাদা ভূত হয়ে আছে।
পোশাক পাল্টে, গায়ে যুদ্ধবন্দীর উর্দি চড়িয়েছে এনজো। জামার আস্তিনে। একটা ব্যাণ্ড, তাতে সবুজ সংখ্যা লেখা। গভর্নর্স আইল্যাণ্ডে হাজিরা দিতে দেরি হয়ে গেলে বারোটা বাজবে তার, এই ভয়ে আধমরা হয়ে আছে। হাজার হাজার ইটালিয়ান যুদ্ধবন্দীকে প্রতিদিন পেরোলে মুক্তি দেয়া হয়, আমেরিকার অর্থনীতিকে মোটা তাজা করার কাজে যাতে সাহায্য করতে পারে, তারা। এনজোর ভয়, সুযোগটা যদি কেড়ে নেয়া হয়। তাই আজকের এই ব্যাপারটা তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঝাঁঝের সাথে জানতে চাইল নাজোরিনি, মেয়ের ইজ্জৎ নিয়ে প্রশ্ন। আমি জানতে চাই, তুমি কি ওর ধর্ম নষ্ট করেছ? স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ছোট কোনো পোটলা ওকে উপহার দিয়েছ? যুদ্ধ থেমে গেছে, আমেরিকা এখন তোমাকে.পোদে লাথি মেরে তাড়াবে। সিসিলির সেই অজ গায়ে ফেরত পাঠানো হবে তোমাকে।
খুব চওড়া শরীর এনজোর। ভাঁজ করে হাত দুটো বুকে রাখল সে। চেহারা কাদো কাদো। দেখুন, যীশু-মাতার কিরে, আপনার মেয়ে.•ওকে আমি ভালবাসি। ওকে আমি বিয়ে করতে চাই। কিন্তু একবার যদি ওরা আমাকে ইটালিতে ফেরত পাঠায়, জীবনে কখনও আর এখানে ফেরা হবে না আমার। আর ফিরতে না পারলে ক্যাথারিনকে হারাতে হবে, চিরতরে।
ঢং কোরো না! ধমকের সুরে বলল ফিলোমিনা, তারপর ফিরল স্বামীর দিকে। এখন কি করতে হবে তা তোমার অজানা নয়। থেকে যাবে এনজো। লং আইল্যাণ্ডে আমাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, তাদের কাছে ওকে লুকিয়ে রাখো।