কেন? ডনকে অসহিষ্ণু দেখাল। বিয়ের মত একটা বিশেষ দিনে দূরের আকাশেও এতটুকু মেঘ দেখা যাক তা আমি চাইনি, তাই কথা বলিনি ওর সাথে। তাছাড়া কি বিষয়ে কথা বলতে চায় ও, সেটাও জানা বাকি ছিল আমার। এখন জানি বড় জঘন্য একটা প্রস্তাব করবে।
সত্যি তাহলে ওকে প্রত্যাখ্যান করবেন?
উপর-নিচে মাথা দোলালেন ডন।
পরিবারের সবাই একসাথে বসে ভাল করে আলোচনা করে তারপর উত্তর দিলে হত।
সেই রকম ইচ্ছা বুঝি তোমার? মৃদু হাসলেন ডন কর্লিয়নি। বেশ, কাল তুমি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফিরে এলে আলোচনাই করা যাবে। প্লেনে করে গিয়ে আগে মিটিয়ে দিয়ে এসো জনির ব্যাপারটা। চিত্র জগতের ফেরেশতাটিকে রাজি করাও। আর কিছু?
ফোন এসেছিল হাসপাতাল থেকে, নীরস গলায় গভীরভাবে বলল হেগেন। কনসিলিয়রি আবানদাণ্ডের রাত কাটবে না। শেষবার দেখার জন্যে ওর বাড়ির লোকদের যেতে বলা হয়েছে।
ডন কর্লিয়ন্ত্রি মন্ত্রণাদাতা অর্থাৎ কনসিলিয়রি গেনকো আবানদাণ্ডোর ক্যান্সার হয়েছে, তাই গত এক বছর থেকে এই পদে টম হেগেনকেই অস্থায়ীভাবে বহাল করা হয়েছে। হেগেন অপেক্ষা করছে ডন কবে তাকে বলবেন পদটা তোমার স্থায়ী হলো। ডনের এ কথা না বলারই সম্ভাবনা বেশি। যাদের মা-বাপ দুজনেই ইতালীয় কেবল তাদেরকেই এতোবড় পদটা দেয়া হয়। তাই, এমন কি অস্থায়ীভাবে কাজ চালাবার জন্য হেগেনকে বেছে নেয়ায় কিছু প্রতিবাদও হয়েছে। তার বয়সও এক্ষেত্রে একটা বাধা। মাত্র পঁয়ত্রিশ। কনসিলিয়রির কাজ সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে সাফল্য অর্জন করার জন্যে যে অভিজ্ঞতা আর চার্য প্রয়োজন এত অল্প বয়সে কারও মধ্যে তা থাকে না, এই রকম ধারণা সবার।
হেগেনকে ডন কর্লিয়নি কিন্তু কোন উৎসাহই দিলেন না। প্রসঙ্গ বদলে জানতে চাইলেন। আমার মেয়ে-জামাইয়ের রওনা হবার সময় ঠিক হয়েছে?
রিস্টওয়াচ দেখল হেগেন। এই তো কেক কাটরে, তারপর আর আধঘন্টা। এই কথার সূত্র ধরে তার আরেকটা কথা মনে পড়ে গেল। জামাই বাবাজীকে কি পারিবারিক ব্যবসায় বড় কোন পদ দেয়া…।
কক্ষনো না। ডনের অস্বাভাবিক দৃঢ় কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠল হেগেন। টেবিলে চাপড় মেরে ডন আবার বললেন, প্রশ্নই ওঠে না। খাওয়া পরা চলে, হ্যাঁ, সে-ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কখনও যেন আমাদের পারিবারিক ব্যবসার কথা না, জানে। সনি, ফ্রিডো, ক্লেমেঞ্জা-সবাইকে বলে দিয়ে কথাটা।
একটু হাসলেন ডন, তারপর বললেন, ছেলেগুলোকে বলো; তিনজনকেই, আমার সাথে হাসপাতালে যেতে হবে ওদেরকে। আমি চাই গেনকো বেচারিকে ওরা শেষ শ্রদ্ধা জানাবে। বড় গাড়িটা চালাতে বলবে ফ্রিডোকে, আর. জনি যাবে কিনা জেনে নাও। বলবে, ও গেলে আমি খুশি হব।
চোখে প্রশ্ন নিয়ে ডনের দিকে তাকিয়ে আছে টম হেগেন।
আজ রাতেই ক্যালিফোর্নিয়ায় যাচ্ছ তুমি, তাহলে আর গেনকোর সাথে কখন দেখা করবে? কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে কিছু কথা যদি বলতে চাই, এখানে যেন পাই তোমাকে।
আচ্ছা। ফ্রেড গাড়ি নিয়ে কখন আসবে?
মেহমানরা আগে বিদায় হোক। চিন্তা কোরো না, আমার জন্যে অপেক্ষা করবে গেনকো, হেগেন ডন কর্লিয়নির কথাটার অর্থ করল, তিনি বলতে চাইছেন, গেনকে! আবানদাণ্ডো তার সাথে দেখা না করে মরবে না।
সিনেটর নিজে আসতে পারেননি বলে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছেন, বলল হেগেন। বললেন, কথাটা আপনি বুঝবেন। এফ. বি. আই-এর লোক দুজনের কথা ইঙ্গিত করলেন বলে মনে হলো। লোক মারফত প্রেজেন্টেশন পাঠাতে অবশ্য ভুল করেননি।
উপহারটা কেমন, ভাল? সিনেটরকে তিনি বারণ করেছিলেন আসতে, একথা আর বললেন না ডন।
খাঁটি ইতালীয় ভঙ্গিতে সমর্থন সূচক মুখভঙ্গি করল হেগেন, তবে তার আধা আইরিশ আধা-জার্মান চেহারায় সেটা তেমন মানাল না,। রূপোর প্রাচীন জিনিস, মেলা দাম দিয়ে কিনেছেন সিনেটর। হাজার ডলারের কম নয়। প্রচুর সময় খরচ হয়েছে সিনেটরের উপযুক্ত জিনিসটা খুঁজে বের করতে।
খুশি হলেন ডন কর্লিয়নি। লুকা ব্রাসির মত তার ক্ষমতার প্রাসাদের আরেক শুভ এই সিনেটর ভদ্রলোক। এই উপহার পাঠিয়ে তিনিও ডন কর্লিয়নির বশ্যতা স্বীকার করলেন নতুন করে।
.
সাংঘাতিক আশ্চর্য হয়ে গেল কে অ্যাডমস। এ তোমার অন্যায়, মাইক! জনি ফন্টেনকে তোমরা চেনো একথা আগে বলোনি কেন? এখন আর কোন দ্বিধা নেই, বিয়ে আমি তোমাকেই করব।
ওর সাথে কথা বলবে?
এখন? না। জানো, ক্যাপিটালে যখনই গাহত ও, নিউইয়র্কে এসে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলতাম আমি। কি যে ভাল লাগে ওকে, তিন বছর ওকে ছাড়া আর কোন পুরুষকে তো ভাবতেই পারতাম না।
গান শেষ হলো জনির।ডন কর্লিয়নির সাথে তাকে বাড়ির ভিতর যেতে দেখল কে অ্যাডামস। মাইকেলের আপাদমস্তক দেখে নিয়ে সে বলল, কি ব্যাপার? তোমার বাবার সাথে গেল যে জনি ফন্টেন? ওকেও তোমার বাবার অনুগ্রহ চাইতে হয়, নিশ্চয়ই একথা বলবে না তুমি? কে ভাবছে, খুব ব্যঙ্গ করতে পেরেছে মাইকেলকে।
জনি বাবার ধর্মপুত্র, বলল মাইকেল। ওর এত বড় ফিল্ম স্টার হবার পেছনে বাবারই বেশি দান রয়েছে।
সত্যি? আনন্দে হেসে উঠল কে। তোমার একথার মধ্যেও কেমন যেন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি আমি।
এদিক ওদিক মাথা নাড়ছে মাইকেল। তোমার না শোনাই ভাল।
আমাকে বিশ্বাস করো না?
অগত্যা বলল মাইকেল। গল্পটা হাস্যকর শোনাল না। গর্বের সাথেও বলল না। মাইকেল। ব্যাখ্যা দেবার ঝামেলায় না গিয়ে জানাল, বছর সাত-আট আগে এখনকার তুলনায় আরও খেয়াল খুশি মাফিক চলতেন ওর বাবা, এবং ঘটনার সাথে তার ধর্মপুত্র জড়িত থাকায় নিজের আত্মসম্মানের ব্যাপার বলে ধরে নিয়েছিলেন সেটাকে। সংক্ষেপে বলে গেল মাইকেল: