ক্লান্ত বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে জনিকে। তবু ধৈর্যের সাথে বলল, গড ফাদার, আসল কথা হলো যথেষ্ট প্রতিভা নেই যে ওর। ভাল, অস্বীকার করি না, কিন্তু তেমন সাফল্য ও কোনদিনই অর্জন করতে পারবে না।
পাতা দুটো নেমে এসে চোখ প্রায় বুজে এলো ডন কর্লিয়নির। বলেন, আর এখন তোমার, ধর্ম-পুত্র? যথেষ্ট প্রতিভা তোমারও তো নেই। তাহলে নিনোর সঙ্গেই কাকরের ট্রাকে তোমাকেও একটা কাজ যোগাড় করে দিই, কি বলো?
জনি কথা বলছে না দেখে ডন বলে চললেন, ধর্মপুত্র, বন্ধুত্বই সব। প্রতিভাও বন্ধুত্বের কাছে কিছু না। সরকারের চেয়েও বড় বন্ধুত্ব। প্রায় পরিবারের সমান, এই বন্ধুত্ব। আমার এই কথাটা কখনও ভুলো না। বন্ধুত্বের একটা প্রাচীর যদি গড়ে তুলতে পারতে, আজ তাহলে তোমাকে আমার কাছে সাহায্যের জন্যে হাত পাততে হত না। এবার বলো দিকি, গাইতে না পারার কারণ কি? বাগানে বেশ গাইলে, শুনলাম তো। প্রায় নিনোর মতই ভাল।
ডনের এই সূক্ষ্ম খোঁচা উপভোগ করে জনি এবং হেগেন দুজনেই হাসল।
গলার জোর হারিয়ে ফেলেছি, বলল জনি। দুএকটা গান করার পর বুজে আসে গলা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাইতে পারি না আর। মাঝে মধ্যে এমনও হয় দিনের পর দিন গাইতে পারি না। রিহার্সল থাকে, কয়েক বার করে রেকর্ড করতে হয়, কিন্তু পারি না। সাংঘাতিক কোন রোগ হয়েছে আমার গলায়।
মেয়েমানুষ নিয়ে সমস্যা। গলায় লোগ। হুঁ। এবার বলো, হলিউডের সেই কর্তা, তার সাথে ঝগড়াটা কিসের? হেগেন বুঝল, এতক্ষণে হাতে কলমে কাজে নামছেন ডন।
আপনার যে-কোন কাপ্তানের চেয়ে তার ক্ষমতা অনেক বেশি, বলল জনি। সে-ই স্টুডিওটার মালিক। সিনেমার মাধ্যমে যুদ্ধের যত প্রপাগাণ্ডা হয়েছে, তার মূলে ছিল এই লোক। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ছিল সে-ই। মাসখানেক আগে চলতি বছরের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের চিত্রত্ব খরিদ করেছে সে। বইটা বেস্ট সেলার। বইয়ের নায়ক হুবহু আমার চরিত্র, অবিকল আমার মত। অভিনয় করার দরকারই পড়বে না আমার, স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করলেই খাপে খাপে মিলে যাবে। একটা গান পর্যন্ত গাইতে হবে না। সবাই স্বীকার করছে চরিত্রটা শুধু আমাকেই মানাবে, আবার সুনাম হবে আমার। এবার অভিনয় করে। কিন্তু ওই শালা হারামজাদা জ্যাক ওলটস কিছুতেই চরিত্রটাতে অভিনয় করতে নেবে না আমাকে। পণ করে বসে আছে সে, নেবেই না। ঘোষণা করে দিয়েছে, স্টুডিওর কমিনারিতে গিয়ে সবার সামনে যদি ওর পাছায় চুমু খাই, ব্যাপারটা ভেবে দেখতে রাজি হবে।
হাত নেড়ে ডন কর্লিয়নি এমন একটা ইঙ্গিত করলেন যার অর্থ দাঁড়ায়, আরে থামো, অমন কত দেখা আছেধর্মপুত্রের কাঁধ চাপড়ে আশ্বাস দিলেন তিনি। তুমি দেখছি একেবারেই ভেঙে পড়েছ। ভেবেছ কারও কোনরকম সাহায্য করার নেই তোমাকে? রোগাও হয়ে গেছ দেখছি। মদ খাচ্ছ বুঝি খুব? ঘুমের জন্যে বোধহয় ট্যাবলেট খাও? এসবে যে তার সমর্থন নেই মাথা নেড়ে তা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন তিনি।
বললেন, এখন থেকে তুমি আমার হুকুম মেনে চলল, এই আমি চাই। এক মাস থাকো আমার কাছে। খাও দাও ঘুমাও। তোমার সঙ্গ আমার ভালই লাগবে। আর তোমার ধর্ম-বাপের কাছ থেকে তুমিও হয়তো দুনিয়াদারি সম্পর্কে এমন কিছু শিখতে পারো যেটা তোমাদের ওই বোকার স্বর্গ হলিউডেও কাজে লেগে যেতে পারে। কিন্তু গান গাইতে পারবে না, মদ খেতে পারবে না, মেয়েমানুষের ছায়া পর্যন্ত। মাড়াতে পারবে না। আজ থেকে ঠিক এক মাস পর হলিউডে ফিরে যাবে তুমি, গিয়ে দেখবে তোমার সেই .৯০ ক্যালিবারের কাপ্তান সাহেব তার ছবিতে তোমাকে নেবার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রাজি?
ডন কর্লিয়নির এত ক্ষমতা আছে, ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না জনি ফন্টেনের। কিন্তু যে কাজ তার দ্বারা হবে না,সে কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি তিনি কখনও কাউকে দেন না, গড ফাদার সম্পর্কে এই কথাটাও জানা আছে তার। ব্যাটাচ্ছেলে কিন্তু যা তা লোক নয়। জে এডগার হভারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সামনে দাঁড়িয়ে সাহস করে কথাই বলা যায় না।
মুচকি একটু হাসলেন ডন কর্লিয়নি। ধর্মপুত্রের সংশয় টের পেয়েছেন তিনি। বললেন, সেতো একজন ব্যবসায়ী। তার লাভ হবে এমন প্রস্তাবই তাকে দেব।
এখন আর সময় নেই, বলল জনি। সবাইকে দিয়ে কন্ট্রাক্ট সই করানো হয়ে গেছে। আগামী হপ্তায় শুটিং। তোমার কিছুই করার নেই এ ব্যাপারে, গড ফাদার।
সব দায়িত্ব আমি নিলাম, এরপর আবার কথা কিসের? জনিকে ঠেলে বের করে দিলেন তিনি ঘর থেকে তোমার জন্যে ওরা সবাই অপেক্ষা করছে, যাও, হৈ হন্না করোগে।
ডেস্কের পিছনে বসে সব নোট করে নিয়েছে হেগেন। আর কিছু আছে নাকি? তাকে প্রশ্ন করলেন ডন।
ক্যালেণ্ডারের দিকে তাকিয়ে হেগেন বলল, ভার্সিল সোযোকে তো আর এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এই হপ্তার ভেতরই আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে সে।
শ্রাগ করলেন ডন। বিয়েটা চুকে গেল, এখন যেদিন বলো তুমি।
উত্তরটা শুনে দুটো জিনিস বুঝল হেগেন। এক, এবং এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,-ভার্সিল সলোযোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হবে। দুই, বিয়ের আগে আলোচনায় না বসার অর্থ ডন কর্লিয়নি ভাবছেন এর ফলে কিছু গোলমাল হতে পারে।
সাবধানের মার নেই, এই কথা ভেবে সে বলল, ক্লেমেঞ্জা কে এ-বাড়িতে কিছু লোক এনে রাখতে বলব?