কেন, আমার কাছে আসতে পারোনি? যদি আসতে টাকায় ঠাসা আমার থলি তোমার হয়ে যেত। যদি সুবিচার চাইতে, তোমার মেয়ের এই দুর্ভোগের জন্যে যারা দায়ী তাদের চোখ দিয়ে নোনা পানি ঝরত। তোমার সাথে কেউ যদি শত্রুতা করত, তাদেরকে আমার শত্রু বলে মনে করে উচিত সাজা দিতাম। বনাসেরার দিকে তনী খাড়া করলেন ডন কর্লিয়নি, তাহলে, বিশ্বাস করো, আমাকে যেমন ভয় করে, তোমাকেও তেমনি ভয় পেত সবাই।
চোখ নামিয়ে নিল বনাসেরা। চিবুক প্রায় বুক ছোঁয় ছোঁয়। রুদ্ধ গলায় বলল, সব মেনে নিলাম। আমি আপনার বন্ধুত্ব চাই।
দুর্ভাগা লোকটার কাঁধে একটা হাত রাখলেন ডন কর্লিয়নি। ঠিক আছে। পাবে, তুমি সুবিচার। হয়তো সেদিন কখনোই আসবে না, তবুবলে রাখছি, একদিন হয়তো তোমার কাছে যাব আমি বলব এর বদলে আমার একটা কাজ করে দাও। তার আগে পর্যন্ত ভেব এই সুবিচার তোমার মেয়ের ধর্ম-মায়ের তরফ থেকে ছোট্ট একটা দান।
কৃতজ্ঞতায় অভিভূত বনাসেরার মুখ দিয়ে কথা সরল না। আনন্দে বিহ্বল লোকটা চলে গেলে দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াল হেগেন। ডন কর্লিয়নি বললেন, কাজটা ক্লেমেঞ্জাকে দাও। রক্তের গন্ধ পেয়ে খেপে উঠবে না এমন লোককে দিয়ে সারতে বলবে। মড়াপোতা ব্যাটার মাথায় যত পাগলামিই গিজ গিজ করুক, আমরা তো আর খুনে নই। বিরক্তির সাথে লক্ষ করলেন তাঁর শক্তিশালী পুরুষসিংহ জ্যেষ্ঠ পুত্রধন জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বাগানের উৎসব উপভোগ করছে। নাহ, ওর হবে না, ভাবলেন তিনি। শেখারই যদি আগ্রহ না থাকে, পারিবারিক ব্যবসাটা চালানো ওর কম্ম নয়। ডন ও কোনোদিনই হতে পারবে না। আর কাউকে বেছে নিতে হবে। এবং তাড়াতাড়ি। তিনি নিজে তো আর অমর হয়ে জন্মাননি।
হঠাৎ করে বাগান থেকে একটা আনন্দ কোলাহল ভেসে আসতে তিনজনই চমকে উঠল। একমুখ হাসি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল সনি, ছুটল দরজার দিকে। জনি, জনি–বিয়েতে জনি এসেছে। কি, বলিনি আমি?
জানালার কাছে গেল হেগেন। বলল, হ্যাঁ, আপনার ধর্ম-পুত্র এসে পৌঁছেছে। নিয়ে আসব এখানে?
না, বললেন ডন। ওর ইচ্ছে হলে আমার কাছে আসবে। হাসলেন তিনি। ছেলেটা আমার কেমন ভাল, দেখলে তো!
একটু ঈর্ষা হলো হেগেনের। গলাটা একটু পড়ে গেল তার, কম দিন তো হলো না, দুবছর! আবার হয়তো কোন ঝামেলা বাধিয়ে বসেছে, সাহায্য চায়।
তাই যদি হয়, প্রশ্ন করলেন ডন কর্লিয়নি, সাহায্যের জন্যে ওর ধর্ম-বাপ ছাড়া আর কার কাছে যাবে শুনি?
.
বিয়ের কনের যে একটা আলাদা মর্যাদা আছে, জনিকে দেখে তা আর মনেই থাকল না কনির। জনি-ই-ই! চেঁচিয়ে উঠে পাখনা মেলা পাখির মত উড়ে গিয়ে ওর বাড়িয়ে দেয়া দুই বাহুর মধ্যে সেঁধিয়ে গেল।
কনির মুখে চুমো খেলে জনি। সাদর অভ্যর্থনা জানাবার জন্যে সবাই যখন চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে ওকে, কনিকে তখনও জাপটে ধরে রেখেছে ও। সবাই এরা পুরানো বন্ধু-বান্ধব ওর, এদের সাথেই ওয়েস্ট সাইডে বড় হয়েছে জনি।
কনি ওকে টেনে নিয়ে গেল ওর সদ্য বিবাহিত স্বামীর কাছে। আজকের প্রধান ভূমিকা থেকে পদচ্যুত হয়ে ছোকরার মুখ ভার। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে খুব মজা লাগছে জনির। তাই তার সাথে হ্যাণ্ডশেক করে তাকে মোহিত করতে লেগে গেল ও। গ্লাস ভর্তি মদ খেয়ে শুভেচ্ছা জানাল।
ব্যাণ্ড বাদকদের উঁচু মঞ্চ থেকে পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, এবার একটা গান ধরতে পারলে হত না, জনি?
ঝট করে তাকাল জনি। দেখল ওর দিকে চেয়ে আছে নিনো। নিনো ভ্যালেন্টি। হাসছে। এক সময় গলায় গলায় ভাব ছিল দুজনের, একসাথে গাইত, মেয়েদের নিয়ে একসাথে হুল্লোড় করত। তখন রেডিওতে গাইতে শুরু করেনি জনি, নাম কিনতে শুরু করেনি। ছবি করতে জনি যখন হলিউডে চলে গেল, প্রথমদিকে বার দুয়েক ফোন করেছিল নিনোকে, তখন কথা দিয়েছিল ক্লাবে ও নিনোকে গাইবার ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু সে-কথা আর রাখা হয়নি। এখন নিনোর খুশির, ব্যঙ্গ মেশানো মদ খাওয়া হাসি দেখে অন্তরে চাপা পড়ে থাকা ভালবাসাটা ধড়মড় করে জেগে উঠল।
ম্যাণ্ডোলিনে নিনো একটু টুংটাং করতে না করতে জনি ফন্টেন তার কাঁধে হাত রেখে বলল, এ গান শুধু বিয়ের কনের জন্যে! বলেই পা ঠুকে পুরানো একটা সিসিলীয় অশ্লীল প্রেমের গান ধরল। আর যায় কোথা, নিনোও গানের সুরের সাথে তাল রেখে অঙ্গভঙ্গি করতে শুরু করে দিল।
কুনের মুখ রাঙা হয়ে উঠছে গর্বে। মেহমানরা চিৎকার করে জয়ধ্বনি ছুঁড়ছে। গান শেষ হবার আগে উঠে পড়ল সবাই, প্রতি চরণের শেষের চতুর দ্ব্যর্থ ব্যঞ্জক পদটি সমস্বরে গর্জন করে গাইতে শুরু করে দিল পা ঠুকে। গান তো এক সময় থামল, কিন্তু কার সাধ্যি করতালি থামায়। আরেকটা গান ধরল জনি।
ওকে নিয়ে কত গর্ব ওদের। ওদেরই একজন আপনজন ছিল ও, এখন না হয় বিখ্যাত হয়েছে, চিত্রজগতের মস্ত তারকা হয়েছে, দুনিয়ার সেরা সব লোভনীয় মেয়ে মানুষদের সাথে শোয়। কিন্তু, হ্যাঁ, ধর্ম-বাপকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে ভুল করেনি, বিয়ের দাওয়াত পেয়ে তিন হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে চলে এসেছে এখনও ও নিনো ভ্যালেন্টির মত পুরানো বন্ধুকে ভালবাসে। ওদের ছেলেবেলায় ওরা দুজন একসাথে গান করত, তা কে না দেখেছে। ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি কেউ জনি একদিন তার হাতের মুঠোয় পাঁচ কোটি মারীর হৃদয় ধরে রাখবে।