এর আগে কলেজে দুটো প্রেমের স্বাদ পাওয়ার সুযোগ ঘটেছিল লুসির। কোনটা থেকেই মিষ্টি কিছু পায়নি। এক হপ্তার বেশি টেকেনি-কোনটা। দ্বিতীয় প্রেমিকটা ঝগড়ার মধ্যে নিচু গলায় বলতে চেয়েছিল বা বলেই ফেলেছিল যে ওর ওইটা নাকি সাংঘাতিক প্রশস্ত। অর্থটা ঠিকই ধরতে পেরেছিল লুসি, এবং তারপর থেকে ওভাবে আর কারও সাথে মিশতে রাজি হয়নি সে।
বান্ধবী কনি কর্লিয়নির বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল, এই উপলক্ষ্যে লুসি কদিনের জন্যে থেকেই গিয়েছিল এবাড়িতে। এই সময়ই সনি কর্নিয়নি সম্পর্কে নানারকম অবিশ্বাস্য, রোমাঞ্চকর কানাঘুষো কানে গেছে তার। এক রোববার দুপুরে সনির বউ সাণ্ডা দিল খুলে গল্প করছিল। বউটা হয়তো একটু স্থূল, কিন্তুমনটা সাদা জন্মেছে ইটালিতে, তবে অল্প বয়সেই নিয়ে আসা হয়েছে আমেরিকায়। দশাসই শরীর, বুক দুটোর ওজন কম করেও সের পাঁচেক, পাঁচ বছরে তিন ছেলেমেয়ে বিইয়ে বসে আছে। সে, এবং আর সব বিবাহিতা মেয়েরা, ফুলশয্যা রাতে কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটবে তা নিয়ে কনিকে ঠাট্টাচ্ছলে ভয় দেখাবার চেষ্টা করছে।
ফিক ফিক করে হাসছে সাণ্ডা। বলছে, আই বাপ! সনির ওই মুগুর দেখে আমার তো… কথা শেষ করতে পারে না সে, হেসেই গড়িয়ে পড়ে। …যখন বুঝলাম ওই মুগুর আমাকে নিতেই হবে, অমনি এমন তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম-হি হি হি-হি-হি… হাসি থামতে আবার বলল, বছর খানেকের মধ্যে আমার ওখানের কি অবস্থা হলো–যেন এক ঘণ্টা ধরে ম্যাকারনি সেদ্ধ করা হচ্ছে, গলে ছাতুর মত থেলথসে। তারপর যেই শুনলাম অন্য মেয়েদের দিকে ওর নেক নজর পড়েছে, অমনি গির্জায় ছুটে গেলাম। মোমবাতি জ্বেলে ধন্যবাদ দিয়ে এলাম যীশুর মাকে।
সাণ্ডার কথা শুনে মুখে হাত চাপা দিয়ে সে কি চাপা হাসি সবার। কিন্তু লুসি হাসেনি। কথাগুলো শোনেনি সে, গোগ্রাসে গিলেছিল। দুই পায়ের মাঝখানে শরীর শিরশির করে উঠেছিল তার।– রোমাঞ্চকর ভীতিবোধটাকে উপভোগ করছে লুসি। সিঁড়ি বেয়ে সনির কাছে ছুটে যাবার সময় শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে দাউ দাউ কামনার আগুন। সিঁড়ির মাথায় পৌঁছতেই ওর হাত চেপে ধরে হলঘরের পাশের একটা শোবার ঘরে টেনে নিয়ে গেল ওকে সনি। দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পেরেই পায়ের সবটুকু জোর হারিয়ে ফেলল লুসি। নিজের ঠোঁটে সনির ঠোঁট অনুভব করছে। সনির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা বাতাসে তামাকের কটু গন্ধ। লুসি মুখ খুলল। গাডনের নিচে সনির হাত, অনুভব করছে। খানিকটা ছিঁড়ে গেল রেশমী কাপড়। দুই হাত তুলে সনির গলা জড়িয়ে ধরল লুসি। ব্যস্ত হয়ে পোশাক খুলছে সনি।
তারপর লুসির নিতম্বের নিচে দুটো হাত রেখে উপর দিকে তাকে তুলে ধরল সনি। শূন্যে লাফ দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে থাকল লুসি। সনির জিভ লুসির মুখের ভিতর, ললিপপের মত চুষছে লুসি। সনি তাকে সামনের দিকে ঠেলে দিতেই দরজায় ঠুকে গেল লুসির মাথা। গনগনে আগুনের ছোঁয়া অনুভব করছে লুসি। মিলনের সীমাহীন আনন্দে দম. আটকে যাচ্ছে তার। জীবনে এই প্রথমবারের মত পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করল সে। হাঁপিয়ে গেছে দুজনেই, পরস্পরের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শব্দটা বুঝি কিছুক্ষণ ধরেই হচ্ছে, খেয়াল করেনি ওরা। হঠাৎ শুনল কে যেন ধীরে ধীরে টোকা দিচ্ছে দরজায়। দ্রুত দরজার গায়ে শরীর ঠেকিয়ে কাপড় চোপড় পরে নিল সনি। ঝটপট তৈরি হয়ে গেছে লুসিও, ব্যস্ত, হাতে ঠিকঠাক করে নিচ্ছে গোলাপী গাউনটা।
বাইরে থেকে নিচু গলা ভেসে এলো টম হেগেনের, আছ নাকি, সনি?
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে লুসির দিকে তাকান সনি, চোখ মটকাল। কি ব্যাপার, টম?
গলা আরও খাদে নামিয়ে হেগেন জানাল, ডনের অফিসে। এক্ষুণি! হেগেনের পায়ের আওয়াজ দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে।
দেরি করল না সনি, দরজা খুলে অনুসরণ করল হেগেনকে।
চুলে চিরুনি চালাচ্ছে লুসি। কাপড়-চোপড় ঠিক আছে কিনা দেখে নিল আরেকবার, সোজা করল মোজার গার্টার, তারপর দরজা খুলে ধীর স্থির পায়ে সিঁড়ি, ভেঙে সোজা বাগানে নেমে এল। কনির পাশে, কনের টেবিলে বসল সে। মৃদু বিরক্তির সুরে কনে তাকে বলল, কোথায় যাওয়া হয়েছিল রে? নেশা করেছিস মনে হচ্ছে? খবরদার, আমাকে ছেড়ে নড়বি না কোথাও।
লুসির জন্যে গ্লাসে মদ ঢালছে বর। এক মাথা সোনালী চুল নেড়ে সবজান্তার ভঙ্গিতে হাসল সে। এসবে কিছুই এসে গেল না লুসির। গ্লাসে চুমুক দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে সে। শরীরের কাপুনিটা এখনও একটু একটু আছে। ঠোঁটে গ্লাস তুলে ইতিউতি তাকাচ্ছে, দৃষ্টি খুঁজে বেড়াচ্ছে সনি কর্লিয়নিকে। আর কেউ ওকে আকর্ষণ করতে পারছে না। কনির কানের কাছে মুখ নিয়ে চালাকি করে বলল সে, আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো, নিজেই টের পাবে ব্যাপারটা।
নিঃশব্দে হেসে ফেলল কনি।
.
টম হেগেনের পিছু পিছু কোণার ঘরে ঢুকে আমেরিগো বনাসেরা দেখতে পাচ্ছে বিরাট এক ডেস্কের পিছনে বসে আছেন ডন কর্লিয়নি। ঘরে সনি কর্লিয়নিও রয়েছে, জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে বাগানের দিকে।
আজ এই প্রথম কেমন যেন উদাসীন আচরণ করলেন ডন কর্লিয়নি। প্রার্থীকে আলিঙ্গন, তো করলেনই না, তার সাথে করমর্দনও করলেন না। প্রার্থী আমেরিগো বনাসেরাকে রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সে একজন আণ্ডারটেকার; তার ব্যবসা হলো মৃতদেহ সমাধিস্থ করার আয়োজন এবং শবাধার তৈরি করা। ডনের স্ত্রীর সাথে তার স্ত্রীর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব, সেকারণেই নিমন্ত্রণ পাবার উপযুক্ত বিবেচিত হয়েছে সে। এমনিতে ডন কর্লিয়নি এই লোকের উপর অত্যন্ত চটে আছেন।