কেউ যদি বলতে পারত কিভাবে একজন মানুষ ভালো কিছু আশা করতে পারেন শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রদের জন্য সঠিক পথপ্রদর্শনের চেয়ে এবং তার জন্য করতে পারেন জোর অনুমোদন। ছাত্ররা তা অনুসরণ করবে কি না সেইটা তাদের ব্যাপার। ছাত্রদের ইচ্ছার স্বাধীনতা হরণ করতে পারে না কোনো শিক্ষাই। আমি যে শিক্ষা সম্পর্কে ভাবছি, এর বৈশিষ্ট্য নিরূপণের জন্য আমার বলা উচিত যে, স্বাধীনতা ইচ্ছার স্বীকৃতি এবং এর উপর নির্ভরশীলতার মধ্যেই এর নিষ্ক্রিয়তা ও শূন্যতা স্পষ্ট এবং এতে নিহিত আছে এ পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান ত্রুটিগুলোর প্রথমটি। কারণ স্বাধীন ইচ্ছার অর্থ হলো ভালো ও মন্দের ভেতর সিদ্ধান্তহীনভাবে দোদুল্যমানতা। সুতরাং তা নিতে অপারগ সঠিক সিদ্ধান্ত। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা তাই পুরোপুরিভাবে বিলুপ্তি ঘটিয়েছে ইচ্ছার।
ভালো মানুষ তৈরি করার জন্য তার আকাঙ্ক্ষার কারণ এই নয় যে, তারা আপনা থেকে খারাপ মানুষগুলোর চেয়ে ভালো; তার কারণ এই যে, জার্মান জাতি টিকে থাকতে পারে শুধু ভালো মানুষগুলো নিয়েই। কিন্তু জার্মান রাষ্ট্র খারাপ মানুষগুলোর মাধ্যমে বিদেশি শক্তিগুলোর সঙ্গে মিশে যাবে স্বাভাবিকভাবে।
উদারনৈতিক শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত তত্ত্ব এর সবই। স্বাধীন ইচ্ছার বিলুপ্তির পরিবর্তে তিনি লক্ষ্য স্থির করবেন ব্যক্তিগত বিচার-বুদ্ধি শক্তিশালী করার জন্য। জ্ঞান অন্বেষণের ক্ষেত্রে তিনি সৃষ্টি করবেন বিজ্ঞানসম্মত মনোভাব। তিনি চেষ্টা করবেন বাস্তবভিত্তিক বিশ্বাস সৃষ্টির। তিনি ছাত্রদের সম্মুখে এমন কিছু করবেন না যার ফলে মনে হবে যে তিনি ক্ষমতা অর্জন করতে চান সর্বজ্ঞ অথবা পরম মঙ্গল সাধনের লক্ষ্যেই। রাজনীতিকের মতো শিক্ষাবিদের প্রধান বিপদ হচ্ছে ক্ষমতামোহ। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ব্যক্তি যত্নশীল হবেন ছাত্রদের প্রতি। ফিকট ও তার আদর্শের উত্তরাধিকারীরা মনে করেন, আমি নিজ সুবিধায় এখানকার বিষয়গুলো কাজে লাগাতে পারি, আমি তাদের যন্ত্রসুলভ আচরণে পরামর্শ দিতে পারি আমার উদ্দেশ্যের উন্নতি বিধানকল্পে। এ মুহূর্তে আমি দমিত হতে পারি জীবনের আনন্দ, খেলাধুলার তাড়না, স্বতঃস্ফূর্ততা, উদ্দেশ্যমূলক জীবনযাপনের আকাক্ষার দ্বারা। কিন্তু এ সবই অকার্যকর হয়ে পড়বে কয়েক বছরের স্কুল জীবনের পর। কল্পনা, শিল্প ও চিন্তাশক্তির ধ্বংস হয়ে যাবে অধীনতার ফলে। উন্মাদনা জন্ম নেবে আনন্দানুভূতি ধ্বংস হলে। পরিশেষে আমি দেখতে পাব যে, খনিজ, কয়লা বা অট্টালিকায় ব্যবহৃত পাথরের মতোই নিষ্প্রাণ আমার মানব সম্পদ। যে যুদ্ধে আমি তাদের পরিচালনা করব তাতে কেউ মারা যাবে আবার কেউ থাকবে বেঁচে। যারা মারা যাবে তারা বীরের মতোই আনন্দচিত্তে মারা যাবে, কিন্তু যারা বাঁচবে তারা থাকবে আমার দাস হয়ে। স্বাভাবিক স্নেহবৎসল মানুষের কাছে এগুলো ভয়ংকর। মোটরগাড়ির নিচে চাপা পড়া থেকে সমভাবে জরুরি বাঁচার মতোই উন্মাদনার আঁতাকলে পিষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে থাকা। এই উদ্দেশ্যে প্রয়োজন মুক্তচিন্তায় উৎসাহ প্রদান। এই মুক্তিচিন্তা কিছুটা সংশয়াপন্ন, কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত হবে। এটাই উদারনৈতিক শিক্ষার কাজ : আধিপত্য নয় বরং মূল্যায়নের অনুভূতি প্রদান, মানুষের সামর্থ্য সৃষ্টি করতে হবে মুক্ত সমাজের জন্য জ্ঞানী নাগরিক সৃষ্টিতে সহায়তাদান এবং নাগরিকত্বের সঙ্গে স্বাধীনতার সমন্বয়ে মানবজীবনে উৎকর্ষতা অর্জনে। খুব কম মানুষই এই উৎকর্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।