শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে থাকলে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের সব দিকের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বাকপটু সমর্থকদের বক্তব্য বিবিসির মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের দৃষ্টিগোচর করতাম। শিক্ষকদের উচিত ছেলেমেয়েদের আমন্ত্রণ জানানো ব্যবহৃত যুক্তিগুলোর সংক্ষিপ্তসার উঘাটনে এবং ভদ্রভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সপক্ষে সমর্থন লাভ করা যে, যুক্তির সঙ্গে বাকপটুতা ব্যস্ত আনুপাতিক। নাগরিকদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্রেরর বাকপটুতা থেকে মুক্তি অর্জন করা।
আধুনিক প্রচারকরা অন্ধ বিশ্বাস সৃষ্টির ক্ষেত্রে পটু ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। শিক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত অশিক্ষত মানুষের বিশ্বাসপ্রবণতা ও অবিশ্বাস প্রবণতা ব্যাহত করে দেয়ার উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ যুক্তিহীন জোরালো বক্তব্যে বিশ্বাস ও যুক্তিসঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও দুর্বল বক্তব্যে অবিশ্বাস প্রবণতা ব্যাহত করা প্রয়োজন। শিশু স্কুল দিয়ে শুরু করি আমি, যেখানে শিশুরা চেষ্টা করবে দুটি বিকল্প মিষ্টির ভেতর উত্তমটি বেছে নেয়ার একটি অতি ভালো এবং উপাদান সম্পর্কিত যথাযথ বর্ণনার দ্বারা অনুমোদিত; অপরটি অপরিচ্ছন্ন, কিন্তু দক্ষ ঘোষকের আপ্রাণ চেষ্টায় প্রশংসিত। পরে ছুটি কাটানোর জন্য দুটো জায়গার ভেতর উত্তমটি বেছে নেয়ার জন্য বলি : কন্টোর মানচিত্রে বর্ণিত একটি ভালো জায়গা এবং অপরটি সুন্দর পোস্টারে বর্ণিত একটি বিশ্রী জায়গা।
এই আঙ্গিকে হওয়া উচিত ইতিহাসের শিক্ষাদান। অতীতে প্রসিদ্ধ বাগ্মী বক্তা ও লেখকরা বিষয়গুলোর সমর্থন দিতেন যাদুকরের বাস্তবতা ও দাসত্বের উপকারিতার মতো। আমি যুবকদের বলব এই বাগ্মী বক্তাদের জেনে নিতে এবং তাদের ভ্রমাত্মক অগ্রযাত্রা বুঝে নিতে। তারপর ক্রমে আমি প্রবৃত্ত হব বর্তমান সমস্যাগুলো আলোচনায়। এই পর্যায়ে আমি তাদের প্রথমে ডেইলি মেইল ও পরে ডেইলি ওয়ার্কার পত্রিকায় স্পেন সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা পড়ে শুনাব। তারপর তাদের প্রকৃত ঘটনা জেনে নিতে বলব। কারণ গণতান্ত্রিক জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো পত্রিকায় প্রচারিত মিথ্যাচার সম্পর্কে জেনে নেয়া। এই উদ্দেশ্যে পরামর্শ দেয়া যায় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পত্রিকাগুলোর সঙ্গে পরবর্তীকালে লিখিত ইতিহাসের তুলনা করে দেখার জন্য। সহজেই বোধগম্য হবে যুদ্ধকালীন পত্রিকাগুলোতে দৃষ্ট যুদ্ধোন্মাদনার সৃষ্টির প্রয়াস। তাই আপনারা কর্তব্য হবে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়া যে, যদি তারা ভারসাম্যপূর্ণ ও যুক্তিপূর্ণ বিচার করতে ব্যর্থ হয় তবে প্রথম স্পর্শেই তারা পতিত হবে সরকারের সৃষ্ট অনুরূপ ভীতিপ্রদ ও রক্তপিপাসু উন্মাদনায়।
যা হোক, আমার সম্পূর্ণ বিরাগ মনোভাব প্রচারের উদ্দেশ্য নেই; আমার পরামর্শ এই নয় যে, ধ্বংসাত্মক বিশ্লেষণের অধীনে আনতে হবে সব তীব্র অনুভূতিই। সামগ্রিক উত্তেজনার ভিত্তিমূল ওইসব আবেগের সাপেক্ষে আমি এই মনোভাব সমর্থন করছি কারণ সামগ্রিক হিস্টরিয়াই যুদ্ধ ও একনায়কত্বের সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু প্রজ্ঞা শুধু বুদ্ধিবৃত্তিই নয়। বুদ্ধিবৃত্তি পথনির্দেশ দিতে পারে, কিন্তু কোনো কিছু বাস্তবায়নের প্রেরণা যোগাতে পারে না। অবশ্যই আবেগ থেকে জন্ম লাভ করবে প্রেরণা। সামাজিক পরিণতিজনিত আবেগ সহজে জন্ম দেয় না ঘৃণা ও ভয়ের। এগুলোর সৃষ্টি অনেকাংশেই নির্ভর করে মানুষের শৈশবকাল ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর। সু-আবেগ সৃষ্টির উপযোগী উপাদান যোগানো ও উৎকৃষ্ট মানবজীবন গঠনের সহায়ক উপলব্ধি অর্জনের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু করা যেতে পারে।
অনুরূপ উদ্দেশ্য ছিল অতীত ধর্মের। যা হোক, চার্চগুলোর অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে সমস্যা সৃষ্টি করে এগুলোর ধর্মীয় মতবাদ। যাদের কাছে গতানুগতিক ধর্মের মূল্য নেই তাদের জন্য অন্য পথ খোলা রয়েছে। তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারে কিছু কবিতা ও কিছু সঙ্গীত। কিছু লোকের বেলা জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুরূপ উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক। আমরা যখন বিশ্বব্রহ্মান্ডের আকার ও এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে ভাবি তখন গুরুত্বহীন গ্রহের উপর বিতর্ক হয়ে যায় এবং হাস্যকর মনে হয় বিতর্কটি। যখন আমরা নেতিবাচক আবেগতাড়িত হয়ে মুক্তি লাভ করি তখন আমরা ইতিহাস অথবা বিজ্ঞান, সুন্দর অথবা বেদনা, সঙ্গীত অথবা কবিতার মাধ্যমে আরও পরিপূর্ণরূপে বুঝতে সক্ষম হই যে, মানবজীবনের মূল্যবান জিনিসগুলো ব্যক্তিগত-যুদ্ধক্ষেত্র, রাজনৈতিক সংঘাত ও আরোপিত লক্ষ্যের দিকে গণঅগ্রযাত্রায় ঘটিত জিনিসের অনুরূপ নয়। প্রয়োজন সম্প্রদায়ের ভেতর সংঘটিত জীবনযাপন। মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়গুলো মহান ধর্মীয় শিক্ষকদের কথিত বিষয়গুলোর অনুরূপ। সংঘবদ্ধ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাসী ব্যক্তিরা বলে থাকেন যে, আমাদের উচ্চমান কাজগুলো অর্জন করা সম্ভব যৌথ প্রচেষ্টায়। আমি বলি যে, আমরা সবাই অগ্রসর হই ওই লক্ষ্যগুলো অর্জনে ভিন্ন ভিন্ন পথে। কিন্তু আবেগপ্রবণ একতাবদ্ধ জনগণ সক্ষম শুধু নিম্নমান কাজ।
তা-ই বিদ্যমান পার্থক্য উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সর্বধ্বংসী দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর। এ কথা পূর্বোক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মনে করা হয় যে ব্যক্তি মানুষের মঙ্গলসাধনই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কল্যাণের ভিত্তিমূল। কিন্তু শেষোক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কল্যাণই চরম লক্ষ্য, জনগণ এর অপরিহার্য উপাদানমাত্র। ব্যক্তিগত কল্যাণ সামগ্রিক কল্যাণের অধীন হবে, কিন্তু ব্যক্তিগত কল্যাণ শাসকদের স্বার্থের পরিপন্থি। রাষ্ট্রীয় উপাসনা মতবাদের ধারক ছিল প্রাচীন রোম, কিন্তু খ্রিস্টবাদ ম্রাটের পাশে দাঁড়ায় এবং পরিনামে জয়ী হয়। জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে খ্রিস্টীয় ঐতিহ্য অনুসরণ করে উদারনৈতিক মতবাদ। কিছু খ্রিস্টপূর্ব মতবাদ এর বিরোধী ছিল। প্রথম থেকেই শিক্ষাকে সফলতার উপায় মনে করত রাষ্ট্রীয় উপাসকরা। জার্মান জাতির উদ্দেশ্যে ফিকটের ভাষণ শিক্ষা সম্পৰ্কীয় বিস্তারিত বর্ণনা। নিচে উল্লিখিত উক্তিতে ফিকট যা আশা করেন তা দেয়া হলো :