সুতরাং, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবহার জনকল্যাণমূলক কাজে নিশ্চিত করতে হলে গণতন্ত্র শুধু অপরিহার্য নয় বরং প্রয়োজন গণতন্ত্রের কার্যকরী ভূমিকা থাকা। কিন্তু একে অর্জন করা বর্তমান অবস্থার চেয়ে কঠিন। কারণ, সতর্কতার সঙ্গে তত্ত্বাবধান করা না হলে অফিসিয়াল শ্রেণি একত্রে কুক্ষিগত করে ফেলে সরকার এবং শিল্প ও অর্থ নিয়ন্ত্রণকারীদের ক্ষমতা। তাছাড়া হল, পত্রিকা ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের নিরঙ্কুশ মালিকানা রাষ্ট্রের অধিকারে থাকায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উপকরণ সরবরাহ করতে হয় সরকারকেই।
তাই বৃহদাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান অর্থ সংস্থাগুলোর সরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত হলেও তা যথেষ্ট নয়। এ পর্যন্ত অস্তিত্বশীল বিশুদ্ধ রাজনৈতিক গণতন্ত্রের চেয়ে অফিসিয়াল উৎপীড়কদের বিরুদ্ধে অধিকতর নিরাপদ ও স্বাধীন প্রচারণার জন্য অধিকতর উপযোগী ব্যবস্থা সংবলিত ব্যাপকতর গণতন্ত্রের সংযোজন জরুরি।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘটনাপ্রবাহ থেকেই বোঝা যায় গণতন্ত্র থেকে পরিত্যক্ত সমাজতন্ত্রের বিপদ। রাশিয়ার প্রতি কিছু মানুষের মনোভাব ধর্ম বিশ্বাসের মতো। তাদের মতে, সে দেশের সব কিছু ভালো নয় এমন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাও অসৎ কাজ। কিন্তু যুক্তিবাদী মানুষের মনে প্রাচীন উদ্যমপূর্ণ ব্যক্তির প্রমাণ দিন দিন এই বিষয়ের উপর প্রত্যয় সৃষ্টি করেছে। পরবর্তী পরিচ্ছেদগুলোতে ইতিহাস ও মনোবিজ্ঞানের যুক্তিগুলো থেকে বোঝা যাবে যে দায়িত্বহীন ক্ষমতার দ্বারা মঙ্গলের আশা করা নিরর্থক। ক্ষমতার প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যাবে ENGENE LYONE-এর নিম্নোক্ত কথাগুলো থেকে
নিরঙ্কুশতা থেকে এটা বোঝা যায় যে রাষ্ট্র একচেটিয়াভাবে অধিকার করে নেয় শতসহস্র এমনকি লক্ষাধিক ছোট-বড় স্বেচছাচারীর জীবন ও এর প্রকাশ কাজ ও আনন্দ, পুরস্কার ও শাস্তির উপকরণ। পিরামিডসদৃশ স্তর বিশিষ্ট অফিস ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় শাসন অবশ্যই কাজ করবে। বৈধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও কঠোর আইন কানুনের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ক্ষমতা নামক যন্ত্রটি অত্যাচারের হাতিয়ারে পরিণত হয়। যেখানে নিয়োগকর্তা হিসেবে শুধু রাষ্ট্রই রয়েছে ভদ্রতা সেখানে অর্থনৈতিক উধ্বতনের প্রথম ও প্রধান রীতি। যেখানে একই অফিসিয়াল দল গোপন গ্রেফতার ও শাস্তি, ভোটাধিকার হরণ, রেশন, নিবাস ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে শুধু তাদের সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয় মূর্খ ও শহীদত্বের বিকৃত রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি।
চরম স্বৈরাচারী শাসনের অশুভ প্রভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যদি রাষ্ট্রের মতো একক সংগঠনের হাতে ক্ষমতার কেন্দ্ৰায়ন না হয়ে থাকে তবে ওই সংগঠনের ভেতরে ক্ষমতার ব্যাপক বিস্তৃতি আবশ্যক এবং অধীন দলগুলোর ব্যাপক হারে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করা উচিত। গণতন্ত্র বিকেন্দ্রীকরণ ও আইনবহির্ভূত শাস্তি থেকে নিরাপদ না হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার একীভূতকরণ নতুন এক প্রকার আতঙ্কজনক নির্যাতন অস্ত্র বই কিছুই নয়। রাশিয়ায় যৌথ খামারে একজন উৎপাদনকারী কৃষক যে কোনো অনুপাতে শস্য গ্রহণ করলে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়। যখন দুর্ভিক্ষের ফলে ক্ষুধা ও তৎসমেত রোগে লাখ লাখ কৃষক মারা যায় তখন এই আইন গঠন করা হয় এবং সরকার এর নিরসনে বিরত থাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই।
(৩) ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে এখন আমি সংক্ষিপ্ত প্রচারণার শর্তে আসছি। এটা স্পষ্ট যে উৎপীড়নের প্রচার অবশ্যই হবে; আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা স্পষ্ট না হলে স্বাধীনতার আবশ্যিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আন্দোলনে; পদ্ধতি থাকতে হবে। ক্ষমতা অপব্যবহারকারী অফিসিয়ালদের অভিযুক্ত করার। বর্তমান সরকার এর স্থায়িত্ব নিরাপদ করতে পারবে না ভয় দেখানোর মাধ্যমে ভোটারদের মিথ্যা তালিকাভুক্তি এবং এ রকম কাজের মাধ্যমে। বিখ্যাত মানুষের যুক্তিনির্ভর সমালোচনার জন্য কোনোরকম শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে পারে না। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে বর্তমানকালে দলীয় সরকার এর অনেক কিছুই করেছে। ফলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনীতিবিদরা দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর হিংসাত্মক সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছে। পরিণতিস্বরূপ তাদের পক্ষে অনেক অপরাধই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এগুলোর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায়। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষমতায় রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে ঐগুলোর গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে যায়। কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত মহিলাদের কথা একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা যাক। তাদের দুঃখ এ জন্য যে বর্তমানকালে তাদের বেতন পুরুষের তুলনায় কম। তারা বৈধ পন্থায় তাদের দুঃখ প্রকাশ করতে পারেন। এজন্য নিরাপদ হবে না শাস্তি দেয়া। এ রকম মনে করার কোনো যুক্তি নেই যে সমাজতন্ত্র করলে সাথে সাথে বর্তমান অসমতা দূর হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতিতে ত্বরিত ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনের উপায় বন্ধ হয়ে যাবে। খবরের কাগজ এবং ছাপাখানা সরকারের অধীন থাকবে এবং শুধু সরকারি নির্দেশ অনুযায়ীই খবর ছাপাবে। সরকারি নীতির সমালোচনামূলক কোনো খবর ছাপাবে বলে কি মনে হয়? যদি না হয় তবে কোনো উপায় থাকবে না খবরের কাগজের মাধ্যমে রাজনৈতিক আন্দোলনের। পাবলিক হলগুলো সরকারের অধীন হওয়ার ফলে জনসভা অনুষ্ঠান সহজ নয়। পরিণামে দুঃখ প্রকাশের কোনো পথই থাকবে না রাজনৈতিক স্বাধীনতা বিধানে তুরিত উদ্দেশ্য সংবলিত সতর্ক ব্যবস্থার অভাবে। একবার সরকার নির্বাচিত হলে হিটলারের মতো অমিত শক্তির অধিকারী হয়ে পড়ে এবং মেয়াদ শেষে সহজেই ব্যবস্থা করতে পারে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার। এক বিশেষ অবস্থায় গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে। কিন্তু তা অধিক বাস্তবতা অর্জন করতে পারে না জনপ্রিয় সরকারের চেয়ে, যা স্থায়িত্ব লাভ করেছিল রোমান সাম্রাজ্যের অধীন।