সাধারণভাবে স্টক মালিকদের বোর্ড নির্বাচনে তিনটি বিকল্প রয়েছে। তিনি ভোটদানে বিরত থাকতে পারেন অথবা তার ভোটদান ক্ষমতা কর্পোরেশন ব্যবস্থাপনায় প্রক্সি কমিটির নির্ধারিত ব্যক্তিদের হাতে হস্তান্তরিত করার জন্য প্রক্সি কমিটিতে দরখাস্ত করতে পারেন। স্টক খুব বিশাল না হলে সভায় ব্যক্তিগত ভোটের মূল্য নেই বললেই চলে। বাস্তবে তাই স্টক মালিক ভোট না দেয়ার বিকল্প পথ বেচে নিতে বাধ্য হন অথবা তার ভোটদান ক্ষমতা এমন ব্যক্তিদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, যাদের উপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বা যাদের নির্বাচনের সময় তিনি অংশগ্রহণ করেননি। বরং প্রক্সি কমিটির মনোনয়নদানকারীদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে–যেহেতু প্রক্সি কমিটি বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক নিয়োজিত। তাই শেষোক্তটি নির্বাচন করতে পারে তাদের পরবর্তী কমিটি।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, উপরে বর্ণিত অসহায় ব্যক্তিরা প্রলেতারীয় নয়, পুঁজিপতি। সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশনে তাদের মালিকানা রয়েছে, আইনগত অধিকারের ফলে তারা ভাগ্যক্রমে এর থেকে কিছু আয় করে থাকেন। কিন্তু তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এই আয় দৈবাধীন হয়ে পড়ে। ১৮৯৬ সালে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যাই, তখন অসংখ্য রেল কোম্পানির দেউলিয়াপনা দেখে আমি মর্মাহত হই; তদন্ত করে জানতে পারি যে দেউলিয়াপনার কারণ পরিচালকদের অযোগ্যতা নয় বরং অদক্ষতা। অন্যান্য কোম্পানিতে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল অসাধারণ শেয়ার মালিকদের নিয়োজিত মূলধন, ফলে পরিচালকদের বেশ কিছু মুনাফা অর্জিত হয়। এটা অপরিপক্ক পদ্ধতি, কিন্তু আজকাল আরও সুন্দরভাবে তার ব্যবস্থা হয়ে থাকে, যদিও অপরিবর্তিত রয়েছে এর প্রকৃতি।
মালিকানার চেয়ে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম বিকীর্ণকর কর্পোরেশনগুলোতে। এর ফলে আনীত সুবিধাগুলো প্রথম দিকে রাজনৈতিক হলেও পরে অপরিমিত সম্পদের উৎসে পরিণত হয়। বিনীত বিনিয়োগকারীদের ভদ্রভাবে লুণ্ঠন করা যায়; একমাত্র সীমাবদ্ধতা এই যে, তিনি অবশ্যই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন না যে, তিনি ভবিষ্যৎ সঞ্চয় অন্য কোথাও জমা রাখতে পারেন। রাষ্ট্র কর্পোরেশনের স্থলাভিষিক্ত হলে মূলত পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয় না; প্রকৃতপক্ষে কর্পোরেশনের বিশালত্বই শেয়ার মালিকদের অসহায় করে তোলে। অনুরূপভাবে রাষ্ট্রের কাছে শেয়ার মালিকরা আরও বেশি অসহায়। একটি যুদ্ধ জাহাজ হচ্ছে সরকারি সম্পদ। কিন্তু এই সুবাদে যদি আপনি আপনার স্বত্বাধিকারের অনুশীলন করেন তবে শিগগিরই আপনাকে অনেক নিচু অবস্থানে যেতে বাধ্য করা হবে। এটা সত্য যে আপনার সামনে একটি পথ খোলা আছে। নৌবাহিনীর বাজেট সংকোচনের কোনো প্রার্থীকে আপনি পরবর্তী নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন অথবা আপনি পত্রিকায় লিখতে পারেন যে দর্শনার্থীদের প্রতি নাবিকদের নম্র হওয়া উচিত। কিন্তু আপনি পারবেন না এর অতিরিক্ত কিছু করতে।
আলোচিত যুদ্ধ জাহাজটি পুঁজিবাদী দেশের। কিন্তু সব কিছু ভিন্নরূপ ধারণ করে এর মালিকানা সমাজতান্ত্রিক দেশের হলে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমার কাছে এই সত্য উপলব্ধির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বলে মনে হয় যে, এখন অর্থনৈতিক ক্ষমতার বিষয়টি ব্যবস্থাপনার, মালিকানার নয়। ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল কর্পোরেশনের জাতীয়করণ করল। তারপরও এর ব্যবস্থাপনার জন্য মানুষের প্রয়োজন হবে; বর্তমান ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা অথবা অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ভিন্ন মানুষ থাকতে পারে। শেয়ার মালিকদের প্রতি তারা বর্তমানে যে মনোভাব দেখাচ্ছে ভবিষ্যতে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি তারা একই মনোভাব দেখাবে। এটা সত্য যে, তারা থাকবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কিন্তু এর দৃষ্টিভঙ্গি অফিসিয়ালদের দৃষ্টিভঙ্গির কাছাকাছি থেকে সরে যাবে যদি সরকার গণতান্ত্রিক এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক না হলে।
মার্কসবাদীরা বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের ধ্যান-ধারণাই ধারণ করে আছে মার্ক্স-এঙ্গেলসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তারা এখনও মনে করেন যে ব্যবসা ব্যক্তি পুঁজিপতির মালিকানাধীন। তারা কোনো শিক্ষা লাভ করতে পারেননি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের বিভাজন থেকে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিরাই গুরুত্বপূর্ণ-নামমাত্র স্বত্বাধিকারী নন। বিশপ প্রাসাদের স্বত্বাধিকারী নন, তারপরও এমন মনে করা অযৌক্তিক হবে না যে, নির্বাসন সংক্রান্ত অবস্থার দিক দিয়ে তারা সাধারণ আয়ের মানুষের চেয়ে ভালো নন। অগণতন্ত্রী যে কোনো প্রকার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার অধীন এমন অর্থ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিরা কোনো কিছুর মালিক না হলেও রাজকীয় সরকারি বাসভবন, বিলসাবহুল গাড়ি, রাজোচিত আপ্যায়ন ভাতা, সরকারি খরচে ছুটি কাটানোর জন্য সরকারি ছুটির আশ্রয় এবং এ রকম আরও কত কিছু ভোগ করে থাকেন। কেন সাধারণ শ্রমিকদের জন্য তাদের চিন্তা এখনকার অর্থ নিয়ন্ত্রণকারীদের চেয়ে বেশি হবে? সাধারণ শ্রমিকরা যদি বর্তমান অবস্থান থেকে সরকার ক্ষমতা না রাখে তবে শ্রমিকদের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ থাকার কোনো কারণ থাকতে পারে না। অধিকন্তু বর্তমান কর্পোরেশনগুলোতে ছোট ছোট বিনিয়োগকারীদের অধীনতামুলক মনোভাব থেকে এটা স্পষ্ট যে, গণতন্ত্রের উপর অফিসিয়ালদের ক্ষমতা অর্জন করত সহজ হয় গণতন্ত্র পুঁজিপতিদের সমন্বয়ে গঠিত হলে।