পুলিশের অন্যায় অভিযোগ থেকে আইন পালনকারী নাগরিকদের রক্ষা করতে হলে দুধরনের পুলিশ বাহিনী ও দুধরনের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রয়োজন। এর একটি পরিকল্পিত হবে দোষ প্রমাণ করার জন্য এবং অন্যটি নির্দোষ প্রতিপন্ন করার জন্য। সরকারি অভিশংসকের অতিরিক্ত সমমানের গণপ্রতিরক্ষাকারী থাকবে। দোষী ব্যক্তির দোষ প্রমাণের চেয়ে নির্দোষ ব্যক্তির বেকসুর খালাস কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অধিকন্তু প্রতিরক্ষাকারী পুলিশ দোষ প্রমাণকারী পুলিশ শক্তিতে পরিণত হতে বাধ্য, যেখানে দোষ প্রমাণকারী পুলিশ দায়িত্ব পালনকালে অপরাধ করে বসে। শুধু এভাবেই প্রশমন করা যেতে পারে পুলিশের নির্যাতন স্পৃহা।
(২) আমি এখন আলোচনা করব স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের অর্থনৈতিক সম্পর্কে। আপন বৈশিষ্ট্যের জন্য এবং এর সম্পর্কে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে বলে এই বিষয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক গণতন্ত্র আংশিকভাবে সমস্যার সমাধান দিলেও কোনোক্রমেই তা দিতে পারে না পূর্ণ সমাধান। মার্কস দেখিয়েছেন যে, অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাজতান্ত্রিক বা অলিগার্কিক থেকে গেলে শুধু রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুতরাং অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে থাকবে এবং রাষ্ট্র অবশ্যই গণতান্ত্রিক হবে। আজকাল যারা মার্কসের অনুসারী বলে দাবি করেন তারা শুধু তার মতবাদের অর্ধেক ধারণা করে আছেন এবং রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের দাবি ছুঁড়ে ফেলেছেন। এভাবে অলিগার্কের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা। ফলে অলিগার্ক সামর্থ্য লাভ করেছেন আরও শক্তিশালী এবং আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অত্যাচার চালিয়ে যাওয়ার।
ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে পুরনো গণতন্ত্র ও নতুন মার্কসবাদ উভয়ের লক্ষ্য। পূর্বোক্তটি ব্যর্থ হয়েছে কারণ তা শুধু রাজনৈতিক ছিল এবং শেষোক্তটি শুধু অর্থনৈতিক হওয়ার জন্য ব্যর্থ হয়েছে। উভয়টি সংমিশ্রণ ছাড়া সমাধান সম্ভব। নয়।
জমি ও বৃহদাকার অর্থনৈতিক সংগঠনগুলোর রাষ্ট্রীয় মালিকানার পক্ষে যুক্তি আংশিকভাবে কৌশলগত এবং আংশিকভাবে রাজনৈতিক। ফেবিয়ান সমাজ ছাড়া অন্য কোথাও কৌশলগত যুক্তির উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়নি। টিনিসি ভেলি কর্তৃপক্ষের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে আমেরিকাতে কিছু গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই যুক্তিগুলো বিশেষত বিদ্যুৎ ও পানির শক্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তা রক্ষণশীল সরকারগুলোকে ওইসব পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করে যা কৌশলগত দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী সমাজতান্ত্রিক। আমরা দেখেছি কিভাবে আধুনিক কৌশলের ফলে সংগঠনগুলোর কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকগুলো একত্রিত হচ্ছে, ফলে সুবিধা বাড়ছে। পরিণামস্বরূপ রাজনৈতিক রাষ্ট্র অধিকহারে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ হস্তগত করবে অথবা বাধা প্রদান বা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম যথেষ্ট শক্তিশালী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে আংশিকভাবে তা ছেড়ে দেবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর রাষ্ট্র শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে না পারলে এগুলো ক্রীড়নকে পরিণত হবে। যেখানেই আধুনিক কৌশল বর্তমান সেখানে যেভাবেই হোক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা সমন্বিত হবেই। সমন্বয় সাধনের দিকে এই গতির অপ্রতিরোধ্য নৈর্ব্যক্তিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মার্কস একে তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পরিবর্তনের পরিণতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর কোনো সম্পর্ক নেই শ্রেণি সংগ্রাম বা প্রলেতারীয়দের অন্যায়ের সঙ্গে।
সমাজতন্ত্র রাজনৈতিক আন্দোলনে শিল্প শ্রমিকদের স্বার্থোদ্ধারের জন্য লক্ষ্য স্থির করেছে; এর কৌশলগত সুবিধাগুলো তুলনামূলকভাবে পটভূমিতে লিখিত রয়েছে। এ রকম বিশ্বাসও রয়েছে যে, বেসরকারি পুঁজিপতির অর্থনৈতিক ক্ষমতা সাধারণ শ্রমিকদের নির্যাতন করার জন্য তাকে সামর্থ্য যোগায় এবং যেহেতু প্রাচীন হস্তশিল্পীদের মতো সাধারণ শ্রমিকরা ব্যক্তিগতভাবে উৎপাদনের উপকরণের মালিক হতে পারে না, তাই মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে সব শ্রমিকের সমন্বয়ে গঠিত সমিতির সামগ্রিক মালিকানা। এ রকম যুক্তি দাঁড় করানো হয় যে, বেসরকারি পুঁজিপতিরা দখলচ্যুত হলে শ্রমিক সমাজ রাষ্ট্র গঠন করবে। জমি ও পুঁজির রাষ্ট্রীয় মালিকানা পুরোপুরিভাবে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। এটি অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের একটি প্রস্তাব এবং তাই তা আসছে আমাদের বর্তমান আলোচ্য বিষয়ের অধীনে।
এই যুক্তি পরীক্ষা করে দেখার আগে স্পষ্ট বলার ইচ্ছা রাখি যে, নিরাপত্তা বিধান করা হলে এবং বিবর্ধিত করা হলে তা আমার বিবেচনায় বৈধ। অন্যথায় নিরাপত্তা ও বিবর্ধনের অভাবে তা বিপজ্জনক এবং এর ফলে অর্থনৈতিক উৎপীড়ন থেকে মুক্তি অনুসন্ধানীদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা এই মুক্তিকে অতিমাত্রায় পূর্ণতা দিতে চায় এবং দেখতে পায় যে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর কঠোর ও ভয়ানক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উৎপীড়ন।
প্রথমত, এক জিনিস নয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ। ধরা যাক রাষ্ট্রীয় মালিকানায় একটি রেল কোম্পানি রয়েছে এবং রাষ্ট্র হচ্ছে সব নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রেল কোম্পানির উপর সাধারণ নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ-তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। আসুন এক মুহূর্তের জন্য আমরা আমেরিকার বৃহৎ কর্পোরেশনের মালিকানা সম্পর্কে মেসার্স বার্লে ও মিনসের বক্তব্যে ফিরে যাই। তারা দেখান যে, এ ধরনের অধিকাংশ কর্পোরেশনে সব পরিচালকের সামগ্রিক মালিকানা এক অথবা দুই শতাংশে। তারপরও কার্যত তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত কর্পোরেশনগুলোর উপর।