ফেডারেশন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ফেডারেশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উদ্দেশ্য ও অনুভূতি অপেক্ষা নির্বাচনী এলাকাগুলোর স্থানীয় উদ্দেশ্য ও অনুভূতি জোরালো হলেই। আন্তর্জাতিক সরকারের অস্তিত্বের জন্য স্পষ্টত যথাযথ ক্ষমতার অধিকারী জাতীয় সরকারগুলোর ভেতর ফেডারেশন প্রয়োজন হয়। ইতিমধ্যে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য সংবলিত আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ বিরাজমান রয়েছে। যেমন ডাকমাশুল সম্পর্কিত। কিন্তু এসব উদ্দেশ্য জনগণের ভেতর জাতীয় সরকারের চেয়ে বেশি আগ্রহ সৃষ্টি করে না। এই শর্তের অভাব দেখা দিলে ফেডারেল সরকার ক্ষমতা লঙ্ঘন করে কতগুলো ইউনিট সমন্বয়ে গঠিত সরকার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করে। যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান বিধিবদ্ধ হওয়ার পর ফেডারেল সরকার রাজ্যগুলোর বিনিময়ে লাভবান হয়। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে একই প্রবণতা বিরাজ করে। উত্তরাধিকার সংক্রান্ত গৃহযুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়লে এবং বিজয়ী হলে বিশ্ব ফেডারেল সরকার জাতীয় সরকারের চেয়ে অমিত শক্তির অধিকার হয়ে ওঠে। সুতরাং পদ্ধতি হিসেবে ফেডারেশনের ফলপ্রদতা অত্যন্ত সীমিত; তবে তা কাম্য ও গুরুত্বপূর্ণ এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে।
আধুনিক বিশ্বে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা অনেক বড় হওয়া অপরিহার্য বলে মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে শান্তি ও যুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বব্যাপী এলাকাই একমাত্র সমাধানযোগ্য বলে বিবেচিত। বড় এলাকাগুলোর মনোগত অসুবিধা বিশেষত ভোটারদের ভেতর ব্যর্থতাবোধ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের অজ্ঞতা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। আংশিকভাবে পৃথক উদ্দেশ্য সংবলিত সংগঠনের মাধ্যমে এবং আংশিকভাবে ফেডারেশন বা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে তা কমাতে হবে। সামাজিক সংগঠন পরিবৃদ্ধির অপরিহার্য পরিণতি হচ্ছে ব্যক্তি বিশেষের অধীনতা। কিন্তু যুদ্ধের বিপদ দূর করতে হলে যেসব সমস্যা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে ওইগুলোর চেয়ে স্থানীয় সমস্যাগুলো অনেক বেশি বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ যুদ্ধের ভয় অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে দূরবর্তী দেশগুলো ও সরকারের বাহ্যিক কাজকর্মের দিকে মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে বেশি।
এখনও অত্যাচারীর হাত থেকে ব্যক্তি মানুষ ও সংখ্যালঘু জনগণের নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজন রয়েছে গণতান্ত্রিক সমাজে। আইন প্রশাসন ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের পক্ষে মন্টেস্কুর ওকালতি, দমন ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় ইংরেজদের চিরাচরিত বিশ্বাস, বেনথেসের রাজনৈতিক মতবাদ এবং উদারনৈতিকতা-এ সবই ছিল স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষমতা অনুসরণের পথে বাধাস্বরূপ। কিন্তু এ ধরনের পদ্ধতি দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নিঃসন্দেহে যুদ্ধ বিষয়ক অফিস ও অশ্বারোহী প্রহরীদের পৃথকীকরণ সামরিক একনায়কত্বের বিরুদ্ধে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। কিন্তু এর ফলাফল ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ছিল ভয়াবহ। আগেকার দিনগুলোতে বিপজ্জনক অচলাবস্থা সৃষ্টি হতো আইন পরিষদ ও নির্বাহীদের ভেতর মতানৈক্য দেখা দিলে। বর্তমানে ইংল্যান্ডে মন্ত্রী পরিষদের হাতে উভয় ক্ষমতা অর্পণ করে দক্ষতার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর স্বৈরাচারী ক্ষমতা প্রতিবিধানের পদ্ধতি বর্তমান পরিবেশের উপযোগী নয়। তাছাড়া এ ধরনের পদ্ধতি ফলপ্রসূও নয়। স্বাধীনতার নিরাপত্তা বিধান ও তৃরিত সমালোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা অপব্যবহারকারী অফিসিয়াল, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের উপর প্রভাব সৃষ্টির জন্য সমিতির প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি কর্মের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ শাখায় বিশেষ রাজনৈতিক ভারসাম্যের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গণতন্ত্র এ কারণে বিপদাপন্ন যে সারাদেশে বিরাজমান জনমতের চেয়ে ঢের বেশি প্রতিক্রিয়াশীল পুলিশ ও বিমানবাহিনীতে বিরাজমান সাধারণ মতামত।
গণতন্ত্র যে ধরনের হোক না কেন নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন হলে ব্যক্তিবিশেষ ও সংগঠনগুলো অবাঞ্ছিত ক্ষমতা অর্জন করে। পুলিশের বেলা তা বিশেষভাবে সত্য। সুষ্ঠু তত্ত্বাবধানের অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী ও আমাদের শৃঙ্খলাবিবর্জিত পুলিশ বাহিনী থেকে উদ্ভূত পাপগুলোর বিবরণ আরনেস্ট জেরন হপকিনস জোরের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ের সারসংক্ষেপ হচ্ছে যে, অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে পুলিশকে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং অপরাধের স্বীকারোক্তি কোর্ট গ্রহণ করে থাকে। ফলে অপরাধ স্বীকার না করা পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির উপর নির্যাতন চালিয়ে যেতে পুলিশের আগ্রহ খেয়াল করা যায়। এই পাপ প্রতিটি দেশেই কমবেশি বিদ্যমান। ভারতে তা যত্রতত্র রয়েছে। স্বীকৃতি আদায়ের অভিলাষই হচ্ছে তদন্ত কাজে গৃহীত নির্যাতনের ভিত্তি। পুরনো চীনে সন্দেহভাজন ব্যক্তির উপর নির্যাতন করা অভ্যাসগত হয়ে পড়েছে। কারণ, অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন কোনো সম্রাট রায় প্রদান করেন যে, কাউকে নিন্দা করা যাবে না স্বীকারোক্তি আদায় না করে। পুলিশের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা অপরিহার্য যে, কোনো অবস্থায়ই প্রমাণ। হিসেবে স্বীকারোক্তি গণ্য করা যাবে না।
যা হোক, প্রয়োজনীয় হলেও এই সংস্কার যথেষ্ট নয়। প্রতিটি দেশের পুলিশি ব্যবস্থা নির্ভরশীল এই ধারণার উপর যে, সন্দেহভাজন অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রমাণগুলো জনগণের আগ্রহের ব্যাপারে। কিন্তু তার পক্ষের প্রমাণগুলো তার ব্যক্তিগত আগ্রহের ব্যাপার। সচরাচর বলা হয়ে থাকে যে, দোষী ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার চেয়ে নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবসময়ই অপরাধের প্রমাণ খুঁজে বের করা পুলিশের কর্তব্য-নির্দোষ ব্যক্তির দোষহীনতায় প্রমাণ খুঁজে বের করা পুলিশের কাজ নয়। দরুন আপনি অন্যায়ভাবে খুনের অপরাধে অভিযুক্ত এবং আপনার বিরুদ্ধে প্রথম লব্ধ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত অনেক যুক্তিই রয়েছে। আপনার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রমাণাদি খুঁজে বের করার জন্য সব ধরনের রাষ্ট্রীয় তৎপরতা চালানো হবে এবং জুরিদের মনে। আপনার বিরুদ্ধে ধারণা সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সবচেয়ে ভালো আইনজীবী নিয়োগ করা হবে। ইতিমধ্যে সরকারি সাহায্য ছাড়া নিজেকে নির্দোষ প্রতিপন্ন। করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যয় করতে হবে। দারিদ্যের ওজর দেখালে আপনাকে পরামর্শদাতার ব্যবস্থা দেয়া হবে। তবে তিনি অধিক দক্ষ হবেন না সরকারি অভিশংসকের চেয়ে। নির্দোষ প্রতিপন্ন হলে আপনি শুধু রোববার সংবাদ অথবা সিনেমার মাধ্যমে দেউলিয়াপনা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু অন্যায়ভাবে আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করার সম্ভাবনাই বেশি।