১৯২২ সালের আগে আইরিশদের অনুরূপ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়ে বসবাস করলে তাদের অনেক সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে। কিন্তু এই পদ্ধতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে প্রযোজ্য হয় না। এটা সত্য যে পাশাপাশি বসবাসরাত খ্রিস্টান ও মুসলমান জনগণের পৃথক বিবাহ আইন রয়েছে; কিন্তু ধর্মীয় ব্যাপার ছাড়া অন্য সব বিষয়ে তারা একই সরকারের অধীনতা মেনে নেয়। ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে রাষ্ট্রীয় নীতির ব্যাপারে ধর্মীয় সমতা জরুরি নয়। প্রটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক জনগণ একই সরকারের অধীন শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু সংস্কারের পর ১৩০ বছর পর্যন্ত অবস্থা এমন ছিল না।
তত্ত্বগতভাবে সমাধান করা যাবে না শৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ স্বাধীনতার মাত্রা বিষয়ক প্রশ্নটি। তত্ত্বগতভাবে যে জিনিসটি বলা যাবে না তা হলো, যেখানে যৌথ সিদ্ধান্তের অনুকূলে কৌশলগত কারণ নেই, সেখানে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে হলে জনস্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শক্তিশালী ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। এটা আশ্চর্যের ছিল না যে এলিজাবেথের রাজত্বকালে রোমান ক্যাথলিকরা যখন তাকে সিংহাসনচ্যুত করতে চায় তখন সরকার তাদেরকে বিরাগ দৃষ্টিতে দেখে। অনুরূপভাবে নিম্ন দেশগুলোর যেসব জায়গায় প্রটেস্ট্যান্টরা স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহরত ছিল সেখানে এটাই স্বাভাবিক ছিল যে স্পনীয়রা তাদের অত্যাচার করত। আজকাল ধর্মতত্ত্বের রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই; এমনকি পার্থক্য খুব গভীর না হলে তা নির্যাতনের কারণ হতে পারে না। রক্ষণশীল, উদারপন্থি ও শ্রমিক পাশাপাশি থেকে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে, কারণ তারা কেউ শক্তি প্রয়োগে সংবিধান পরিবর্তন করতে চায় না। কিন্তু একত্রিত করা কঠিন কমিউনিস্ট ও ফ্যাসিবাদীদের। গণতান্ত্রিক সমাজে শক্তি বলে ক্ষমতা দখল এবং এ ধরনের প্রচেষ্টায় উদ্দীপনা যোগানো যুক্তিসঙ্গত ভাবেই নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। কারণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনগণের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। আইনভঙ্গের উদ্দীপনা ছাড়া সব ধরনের প্রচারণার প্রতি সহনশীলতা প্রয়োজন এবং কৌশলগত দক্ষতা ও শৃঙ্খলার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আইনের প্রতি সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। আমি এ বিষয়ে প্রত্যাবর্তন করছি মনোবিজ্ঞান শিরোনামে।
ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টিকোণ থেকে কঠিন প্রশ্ন দেখা দেয় শাসন সংক্রান্ত ইউনিটের আকার সম্বন্ধে। গণতান্ত্রিক হওয়া সত্ত্বেও আধুনিক বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের রাজনৈতিক চেতনাবোধ কম। তাদের মাথাব্যথা নেই নির্বাচনের বিচার্য বিষয় কি হবে এ সম্পর্কে। সম্ভবত দৈনন্দিন জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কহীন বিষয়গুলো নিয়ে তারা চিন্তা-ভাবনা করেন। তাদের কাছে এমন মনে হয় যে, পুরো বিষয়ের তুলনায় তাদের ব্যক্তিগত ভোটের অবদান খুবই নগণ্য। প্রাচীন নগর রাষ্ট্রগুলোতে এসব অশুভ ব্যাপারগুলোর প্রভাব কম ছিল। আজকাল স্থানীয় সরকারগুলোতে অনুরূপ প্রভাব অনুপস্থিত। আশা করা যায় যে, জনসাধারণ জাতীয় সমস্যার চেয়ে স্থানীয় প্রশ্নে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থা এমন নয়। এলাকা যত বড় হবে ভোটদানে মানুষ তত বেশি অংশগ্রহণ করবে। এর আংশিক কারণ এই যে, গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে প্রচারণার জন্য অধিক অর্থ ব্যয় করা হয়। তাছাড়া নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এমনি অধিক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে থাকে। সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়গুলোর ভেতর রয়েছে যুদ্ধ ও সম্ভাব্য শত্রুর সঙ্গে সম্পর্ক। আমার মনে পড়ে, এক বৃদ্ধ ইত্তকেল ১৯১০ সালের জানুয়ারি মাসে আমাকে বলেছিলেন, তিনি রক্ষণশীলদের সমর্থনে ভোট প্রদান করবেন (যা তার অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরোধী ছিল)। কারণ তাকে বোঝানো হয়েছিল যে, যদি লিবারেলরা জয়ী হয় তবে এক সপ্তাহের ভেতর জার্মানরা আমাদের দেশে ঢুকে পড়বে। এটা আশা করা যাবে না যে, তিনি কখনও প্যারিস কাউন্সিল নির্বাচনের ভোট দিয়েছিলেন, যদিও এ বিষয় সম্পর্কে কিছুটা উপলব্ধি ছিল তার। এসব বিষয় তাকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়, কারণ এগুলো সমর্থ হয়নি গণহিস্টরিয়া সৃষ্টিতে।
সুতরাং সমস্যাটি উভয়বিধ। গণতন্ত্র মানুষকে এমন অনুভূতির জন্ম দেয় যে দল ছোট হলে রাজনৈতিক ক্ষমতার তার কার্যকরী অংশ থাকে, কিন্তু দল বড় হলে নয়। অপরদিকে দল বড় হলে বিচার্য বিষয়টি তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ছোট হলে নয়।
এই অসুবিধা আংশিকভাবে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নির্বাচনী এলাকা ভৌগোলিক না হয়ে পেশাগত হলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ট্রেড ইউনিয়নে কার্যকরীভাবে গণতন্ত্র সম্ভব। বিরক্তিকর নীতি সম্পৰ্কীয় প্রশ্নে প্রত্যেক শাখাই আলোচনায় বসতে পারে। সদস্যদের আগ্রহ ও অভিজ্ঞতায় সাদৃশ্য বিদ্যমান, তাই ফলপ্রসূ আলোচনা সম্ভব। অধিকাংশ সদস্যই অনুভব করবে যে এতে তাদের ভূমিকা ছিল-পুরো সংঘের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এমন হতে পারে।
যা হোক, স্পষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে এ পদ্ধতির। অনেক সমস্যাই ভৌগোলিকভাবে এত অপরিহার্য যে ভৌগোলিক নির্বাচনী এলাকা পরিহারযোগ্য নয়। সরকারি বিভাগগুলো নানা দিক দিয়ে আমাদের জীবন এতই প্রভাবিত করে যে, রাজনীতিবিদ নন এমন একজন ব্যস্ত মানুষ তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অধিকাংশ। আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রশ্নে পদক্ষেপ নিতে পারেন না। সবচেয়ে ভালো সমাধান। বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নির্বাচিত ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তার পদ্ধতির প্রসার। অনেক পেশারই আজকাল এ ধরনের প্রতিনিধিত্ব নেই। মনোগত ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক দরকষাকষির ক্ষেত্রে এই সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্ব ভোটারদের সংখ্যা তাদের উৎসাহ দ্বারা বিচার্য। আমি বলছি না যে সংসদের বিকল্প হবে এইরূপ প্রতিনিধিত্ব, তবে তা কাজ করবে বিভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা সংসদকে অবহিত করার মাধ্যম হিসেবে।