আমার উদ্দেশ্য বস্তুর উপর নয়, মানুষের উপর ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা। কিন্তু মানুষের উপর কৌশলগত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বস্তুর উপর ক্ষমতার ভিত্তিতে। যাদের অভ্যাস আছে শক্তিশালী গঠন কৌশলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার এবং এই নিয়ন্ত্রণ দ্বারা যারা মানুষের উপর ক্ষমতা অর্জন করেছেন, তারা তাদের প্রজা সম্পর্কে গঠন করতে পারেন একটি কাল্পনিক দৃষ্টিভঙ্গি। ওইসব মানুষ থেকে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, কারণ তারা যুক্তি-পরামর্শের উপর নির্ভরশীল। আমাদের অনেকেই গোলমাল বাধিয়ে দেখেছেন কেমন হৈচৈ শুরু হয়ে যায় খামখেয়ালি পিপীলিকার বাসায়। নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী দালানের উপর থেকে নিচে তাকালে দেখা যায়-মানুষগুলো মানুষ নয় যেন কিম্ভুতকিমাকার। কেউ বজ্র ও অশনিসহ সশস্ত্র হলে জড-এর মতো একে সজোরে জনতার উপর ফেলার প্রবণতা জাগত। এক্ষেত্রে তাড়নাটি পিপীলিকার বাসায় ঘটিত তাড়নার মতো। বিমান থেকে আবিসিনীয়দের দেখে মুসোলিনির যে অনুভূতি জেগেছিল স্পষ্টতই এটা তার অনুরূপ। কল্পনা করা যাক একটি বৈজ্ঞানিক সরকার যে হত্যার ভয়ে থাকে এরোপ্লেনে এবং মাঝে মধ্যে নামে উঁচু টাওয়ারের চূড়ায় বা সমুদ্রে ভাসমান বেপটের উপর। এ ধরনের সরকারের পক্ষে কি সম্ভব জনকল্যাণমূলক যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করা? অপরপক্ষে এটি বাস্তব সত্য নয় কি যে তা তাদেরকে মেশিনের মতোই মনে করবে অনুভূতিহীন? কিন্তু যখন কোনো ঘটনা দ্বারা বুঝতে পারে যে এরা মেশিন নয় তখন উদয় হয় তার চৈতন্য এবং ধ্বংস করে দেয় এর সব রকম বাধা।
আমি এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে পারতাম যে পাঠকের কাছে মনে হবে এ সব কিছুই অপ্রয়োজনীয় নেশা। যান্ত্রিক ক্ষমতা নতুন মানসিকতার জন্ম দেয় এ আমার বিশ্বাস। যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সরকার নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে বের করা। গণতন্ত্র কঠিন হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কৌশলগত উন্নতির দরুন এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। বিশাল যান্ত্রিক ক্ষমতা রয়েছে আজ্ঞাধীন যে মানুষটার, অনিয়ন্ত্রিত হলেও নিজেকে তিনি মনে করে বসতে পারেন ঈশ্বর–তবে তা খ্রিস্টানদের ঈশ্বর নন, পৌত্তলিকদের অধিদেবতা।
লিওপার্ডি ভিসেরিয়াস স্লোপে ভলকেননা ক্রিয়ার ফলাফল বর্ণনা করেন এভাবে:
These lands that now are strewn
With sterilising cinders and embossed
With lava frozen to stone
That echones to the lonely pilgrims foot
Where nestling in the sun the snake lies coiled.
মানুষ এখন এই ফলাফল অর্জন করতে পারবে। এগুলো অর্জিত হয়েছে গার্মিকোতে; অদূর ভবিষ্যতে এগুলো লন্ডনে অর্জিত হবে। কি ফায়দা লাভ করা যাবে এমন ধ্বংসের মাধ্যমে অলিগার্ক থেকে গজিয়ে ওঠা ডমিনিয়োন থেকে? লন্ডন ও প্যারিস নতুন দেবতাদের বত্র ও অশনি দ্বারা ধ্বংস না হয়ে যদি বার্লিন ও রোম ধ্বংস হতো তবে ধ্বংসকারীদের ভেতর একজনেরও পরও কি অবশিষ্ট থাকতে কোনো মানবতা?
প্রারম্ভিক মানবিক অনুভূতি ছিল যেসব মানুষের তারা কি পাগল হয়ে যেত না অতিরিক্ত মায়ায়? এমনকি খারাপ হয়ে যেত না কি তাদের চেয়েও যাদের করুণা, সহানুভূতি ঢাকা দেয়ার হয়নি প্রয়োজন।
পুরাকালে মানুষ মোহিনীশক্তি লাভ করার জন্য শয়তানের কাছে বিলীন করে দিত তার নিজের সত্তা। আজকাল মানুষ নিজেই বিজ্ঞান থেকে এ শক্তি লাভ করে হয়ে যায় শয়তান। কোনো আশা নেই শক্তির লালন ও পোষণ করে এক মানবতার সেবায় ব্যবহার করতে না পারলে। এ গোষ্ঠীর বা ওগোষ্ঠীর নয় এই উন্মাদ অত্যাচারী, বরং তা সাদা, হলুদ এবং কালো, ফ্যাসিস্ট, কমিউনিস্ট এবং গণতন্ত্রী নির্বিশেষে সব মানুষের জন্যে। কারণ, হয় সবাই বেঁচে থাকবে অথবা সবাই মারা যাবে–বিজ্ঞান এটি অনিবার্য করে দিয়েছে।
০৩. ক্ষমতার রকমভেদ
ক্ষমতার সংজ্ঞা দেয়া যেতে পারে অভিপ্রেত ফলাফল সৃষ্টি সাপেক্ষে। সুতরাং ধারণাটি পরিমাণগত; একই রকম আকাক্ষা পোষণ করেন এ ধরনের দুই ব্যক্তির ভেতর তিনিই অধিকতর ক্ষমতার অধিকারী যিনি অধিকতর আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম। কিন্তু তাদের ক্ষমতা তুলনা করার কোনো উপায় থাকে না যখন ওই দুই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হন। মনে করা যাক ভালো ছবি আঁকা ও ধনী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন দুজন শিল্পী। যদি তাদের একজন ভালো ছবি অংকনে সমর্থ হন এবং অপরজন ধনী হতে সক্ষম হন তবে কার ক্ষমতা বেশি নিরূপণ করা অসম্ভব। আমরা শুধু বলতে পারি A-এর অভিপ্রেত কাজের ফলাফল B-এর চেয়ে বেশি হলে A-এর ক্ষমতা বেশি B-এর চেয়ে।
ক্ষমতার শ্রেণিবিভাগ করা যায় বিভিন্নভাবে : মানুষের উপর ক্ষমতা এবং জড়বস্তুর বা প্রাণীর উপর ক্ষমতা। আমি প্রধানত আলোচনা করব মানুষের উপর ক্ষমতা নিয়ে, কিন্তু আধুনিক বিশ্বে পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে জড়বস্তুর উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ–এ কথা মনে রাখা দরকার। বিজ্ঞানের কাছে এ সত্য আমরা ঋণী।
মানুষের উপর ক্ষমতার শ্রেণিবিভাগ করা যেতে পারে জনসাধারণকে প্রভাবিত করার রীতি অথবা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নমুনা সাপেক্ষে।
প্রভাবিত হতে পারে ব্যক্তি বিশেষ : A. সরাসরি ক্ষমতা আরোপ করে শরীরের উপর। যেমন, কাউকে কারারুদ্ধ করে বা হত্যা করে। B. উদ্দীপকস্বরূপ পুরস্কার অথবা শাস্তির দ্বারা। যেমন, কাউকে উৎসাহ প্রদান করে চাকরিতে নিযুক্তির মাধ্যমে। C. প্রভাব ফেলে মতামতের উপর। যেমন, এই সর্বশেষ শিরোনামে আমি অন্যের ভেতর অভিপ্রেত অভ্যাস সৃষ্টির সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করব এক ব্যাপক অর্থে প্রচারণা দ্বারা। যেমন, অভিপ্রেত অভ্যাস সৃষ্টি করা হয় সামরিক অনুশীলনের মাধ্যমে। পার্থক্য শুধু এই যে, এ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া চলতে পারে কোনোরকম মধ্যবর্তী মতামত ছাড়াই।