ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিক রয়েছে সুযোগ প্রশ্নটির : এটা গুরুত্বপূর্ণ। যে দস্যু, রাহাজানি অথবা স্বেচ্ছাচারী জীবন গঠনের সুযোগ থাকবে না। তবে অপেক্ষাকৃত কম ধ্বংসশীল পেশার সুযোগ থাকা উচিত। পশ্চাৎপদ সমাজের চেয়ে ক্রম অগ্রসরমান সমাজে তা অনেক বেশি সহজ। সম্পদের সঙ্গে নৈতিক স্তরের কোনো সম্পর্ক নেই যে সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে নৈতিক স্তরের পরিবর্তন হবে। আজকাল রাইন থেকে প্রশান্ত অঞ্চল পর্যন্ত সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির কঠোরতার প্রধান কারণ এই যে, বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে
দক্ষতার গুরুত্ব অনেক ক্ষমতাপ্রীতির স্বরূপ নির্ধারণে। সাধারণভাবে বলতে গেলে বিশেষ ধরনের আধুনিক যুদ্ধ ছাড়া ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দক্ষতার প্রয়োজন খুবই কম। কিন্তু গঠনমূলক কাজে সবসময়ই এর প্রয়োজন রয়েছে এবং উচ্চ পর্যায়ে এর প্রয়োজন অনেক বেশি। কঠিন দক্ষতা অর্জন করেছেন এমন অধিকাংশ মানুষ এর অনুশীলনে আনন্দ পান এবং সহজগুলোর চেয়ে এগুলোর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কারণ অন্যান্য দিক একই হলে এই কঠিন দক্ষতা ক্ষমতাপ্রীতির জন্য অধিকতর তৃপ্তিদায়ক। যিনি উড়োজাহাজ থেকে বোমা নিক্ষেপের কৌশল শিখেছেন তিনি শান্তির সময়ে উন্মুক্ত নীরস পেশার চেয়ে এর অধিক গুরুত্ব দেবেন। কিন্তু যিনি সংক্রামক জ্বরের চিকিৎসা শিখেছেন তিনি যুদ্ধকালীন সার্জনের কাজের চেয়ে এর গুরুত্ব বেশি দেবেন। আধুনিক যুদ্ধে বড় রকমের দক্ষতার প্রয়োজন হয় এবং তা দক্ষ মানুষের কাছে যুদ্ধকে আকর্ষণীয় করে তোলে। শান্তি ও যুদ্ধকালীন অনেক বৈজ্ঞানিক দক্ষতার প্রয়োজন হয়; কোনো বৈজ্ঞানিক শান্তিবাদী ব্যক্তি এ কথার নিশ্চয়তা দিতে পারেন না যে, তার আবিষ্কার পরবর্তী যুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞ সহজতর করে তুলবে না। তা সত্ত্বেও শান্তির সময়ে এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত দক্ষতার পার্থক্য রয়েছে। এ ধরনের পার্থক্য বজায় থাকলে কোনো মানুষের ক্ষমতাপ্রীতি অর্জিত দক্ষতার ক্ষেত্র অনুযায়ী তাকে শান্তিপ্রবণ করে তুলবে অথবা তাকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করবে। এমন বলা যাবে যে, ক্ষমতাপ্রীতি কোন পথে চালিত হবে তা নির্ধারণে কৌশলগত প্রশিক্ষণের ভূমিকা অনেক।
এ কথা সর্বতোভাবে সত্য নয় যে, যুক্তি-পরামর্শ এক জিনিস এবং শক্তি প্রয়োগ অন্য জিনিস। অনেক যুক্তি-পরামর্শ প্রত্যেকে অনুমোদন করলেও ওইগুলো প্রকৃতপক্ষে একপ্রকার শক্তিপ্রয়োগ। ধরুন আমরা আমাদের সন্তানদের বেলায় কি করি? আমরা তাদের বলি না যে কিছু মানুষ মনে করে পৃথিবী গোলাকার; কিন্তু অন্যান্য মানুষ মনে করে তা চেপ্টা; তুমি যখন বড় হবে তখন পারলে তুমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তোমার সিদ্ধান্ত ঠিক করে নেবে। এর পরিবর্তে আমরা তাদের বলি পৃথিবী গোলাকার যে বয়সে আমদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা প্রমাণের উপযুক্ত হয় সে বয়সে আমরা তাদের মুক্ত চিন্তার দ্বার বন্ধ করে দেই। ফলে পৃথিবী চেপ্টা মতবাদের পক্ষে জোরালো যুক্তি পরামর্শ কোনোরূপ আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারে না। নৈতিক শিক্ষার বেলাও তা প্রযোজ্য। নাকের শ্লেষা ফেলো না বা ছুরি ব্যবহার করে মটরশুটি খাবে না ইত্যাদি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যতটুকু জানি ছুরি ব্যবহার করে মটরশুটি খাবার পেছনে প্রশংসাসূচক যুক্তি রয়েছে, কিন্তু প্রাথমিক সম্মোহক প্রভাব আমাকে পুরোপুরিভাবে অসর্মথ করে দিয়েছে এগুলোর গুণাগুণ বিচারে।
বৈধ ও অবৈধ ক্ষমতার পার্থক্য নিরূপণে ক্ষমতার নীতিবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত নয়। এই মাত্র আমরা দেখেছি যে বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের যুক্তি-পরামর্শ শক্তি প্রয়োগের শামিল। প্রায় প্রত্যেকেই কায়িক প্রচন্ডতা ও এমনকি সহজবোধ্য শর্তে হত্যাও অনুমোদন করে থাকেন। ধরুন ট্রেনে গুলি চালানোর সময় আপনি মি. হকসের সম্মুখীন হলেন এবং ধরুন, শুধু তাকেই গুলি করে আপনি ধ্বংসযজ্ঞ থেকে তাকে প্রতিহত করতে পারতেন; অধিকাংশ শান্তিবাদী ব্যক্তিই স্বীকার করবেন যে, আপনি গুলি করে ঠিক কাজটিই করতেন। বিমূর্ত সাধারণ নীতির সাহায্যে এই প্রশ্নের বিচার তুচ্ছ; অবশ্যই এর ফলাফল দ্বারা ক্ষমতানুশীলনের বিচার করতে হবে এবং তাই আমাদের অবশ্যই স্থির করতে হবে যে আমরা কি ফলাফল আশা করতে পারি।
আমার বেলা আমি মনে করি কোনো কিছু ভালো অথবা মন্দ যাই হোক না কেন তা প্রথমে ব্যক্তি জীবনে ও পরে সমাজ জীবনে বাস্তবায়িত হয়। যৌথ রাষ্ট্রের সমর্থনদানে ব্যবহার্য কিছু দর্শন, বিশেষভাবে হেগেলের দর্শন মনে করে যে, নীতিশাস্ত্রীয় সদ্গুণ সম্প্রদায়েরই অংশবিশেষ এবং তা এমনই যে একটি রাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকলেও প্রশংসিত হতে পারে। আমি মনে করি ক্ষমতাসীনদের সুযোগ-সুবিধা যুক্তিযুক্ত করে তোলার জন্য এগুলো কৌশল মাত্র। আমাদের রাজনীতি যাই হোক না কেন অগণতান্ত্রিক নীতির কোনো বৈধ যুক্তি থাকতে পারে না। অগণতান্ত্রিক নীতি বলতে আমি এমন এক নীতি বুঝি যা মানবজাতির একটা অংশকে আলাদা করে ফেলে এবং বলে, এই ভালো লোকগুলো উপভোগ করবে এবং অন্যরা তাদের সমর্থন দিয়ে যাবে। যে কোনো ক্ষেত্রে আমার উচিত এমন নীতি অগ্রাহ্য করা। কিন্তু আমরা এ ধরনের নীতির আপনা আপনি খন্ডন হয়ে যাওয়ার অসুবিধা প্রত্যক্ষ করেছি। কারণ এটা খুবই অসম্ভব যে বাস্তবে শ্রেষ্ঠ মানুষ অভিজাত তাত্ত্বিকদের কল্পিত জীবনযাপন করতে সমর্থ হবেন।