স্বৈরতন্ত্রের কথা আসে অরাজকতার পর। কারণ তা সহজ হয়ে পড়ে স্বাধীনতা ও কর্তৃত্বের প্রবৃত্তিগত বিষয়াবলির দ্বারা। তা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা যায় পরিবার, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়। স্বৈরতন্ত্রের চেয়ে কঠিন উভয়মুখি সহযোগিতা। এর সঙ্গতি প্রবৃত্তির সঙ্গে অনেককম। পূর্ণ কর্তৃত্বের জন্য চেষ্টা সবার জন্য স্বাভাবিক হয়ে যায় উভয়মুখি সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করলে। এর কারণ অধীনতামুলক তাড়না নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। একটা সাধারণ আনুগত্য মেনে চলা সংশ্লিষ্ট সব মানুষের জন্য প্রয়োজন। চীনে পরিবারভিত্তিক ব্যবসা সর্বদাই সাফল্য লাভ করে পরিবারের প্রতি কনফিউসীয় আনুগত্য থাকার জন্য। কিন্তু সেখানে নৈর্ব্যক্তিক যৌথ কারবার অচল প্রমাণিত। কারণ সেখানে একজন শেয়ার মালিক অন্য শেয়ার মালিককে সতোর জন্য বাধ্য করে না। সফলতার জন্য আইনের প্রতি একটি সাধারণ শ্রদ্ধাবোধ থাকতেই হবে যেখানে সরকার আলোচনা ও সতর্ক বিবেচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। তা না হলে সেই শ্রদ্ধা থাকতে হবে জাতির প্রতি অথবা সব দলের নীতির প্রতি। সংশয়মূলক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বন্ধুসমাজে কোনো ভোট নেয়া হয় না বা সংখ্যাগরিষ্ঠের নীতি মেনে চলে না। তারা আলোচনা করে চলে পবিত্র আত্ম কর্তৃক প্রণোদিত হয়ে সভার মূল চেতনার কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত। তাদের বেলা সমশ্রেণিভুক্ত সমাজই ছিল আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয়। কিন্তু সরকার সততা ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে অচল হয়ে পড়ে।
সরকার গঠনের উপযোগী ঐক্যবোধ ফুগায় ও রথশেল্ডস-এর মতো পরিবারে, কুয়েকারের মতো ছোট ধর্মীয় সংগঠনে, বর্বর সামজে, যুদ্ধকালীন বা যুদ্ধের আশংকায় জর্জরিত সমাজে আলোচনার মাধ্যমে বিনা দ্বিধায় সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর ফলে অনিবার্য হয়ে পড়ে বাহ্যিক চাপ। পৃথক ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলার ভয়ে দলীয় সদস্যরা একসাথে থাকে। সমতা সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো একটা সাধারণ বিপদ। অবশ্য পুরো পৃথিবীর ক্ষমতা সংকট সমাধানের দিকনির্দেশনা নয়। যুদ্ধ সংহতি সৃষ্টি করে সত্য, ক্ষমতা সংকট সমাধানের দিক নির্দেশনা নয়। যুদ্ধ সংহতি সৃষ্টি করে সত্য, কিন্তু এর বিপদ দূর করতে চাই আমরা। সামাজিক সহযোগিতা নষ্ট করতে চাই না আমরা। এটি রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে একটি কঠিন সমস্যা এবং বিচার-বিবেচনা করলে দেখা যায় কোনো প্রাথমিক স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে কোনো জাতির এ ধরনের সমাধান সম্ভব। অভিজাততন্ত্রের মতোই কঠিন জাতিতে-জাতিতে মুক্ত সহযোগিতা ও বিভাগপূর্ব পুলিশ। এক্ষেত্রেও সাধারণ ত্রাণ অপেক্ষা ধ্বংস অগ্রগণ্য। সরকার মানবজাতির জন্য প্রয়োজন, কিন্তু অরাজকতাপূর্ণ সামজে প্রথমে স্বৈরতন্ত্রের কাছেই জনগণ বশ্যতা স্বীকার করে। তাই প্রথমেই চেষ্টা করা প্রয়োজন স্বৈরতন্ত্রের কাছেই জনগণ বশ্যতা স্বীকার করে। তাই প্রথমেই চেষ্টা করা প্রয়োজন স্বৈরাচারী সরকার গঠনে। শুধু সফল গণতন্ত্রের আশা করা যায় সরকার পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হলেই। পরম ক্ষমতা সংগঠন সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন। সামাজিক চাপ সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট পরম ক্ষমতা সংগঠন সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন। সামাজিক চাপ সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট সবার কল্যাণে ক্ষমতা ব্যবহারের দাবিতে। চার্চ ও রাজনীতির ইতিহাসে এই চাপ স্থির থাকলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর উপরিস্থিতি ইতিমধ্যেই ঘটেছে।
আমি এ পর্যন্ত শাসক ও শাসিতের সম্পর্কেই বললাম। কিন্তু তৃতীয় এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা এ দুয়ের কোনো পর্যায়েই পড়ে না। অধীনতাকে অগ্রাহ্য করার সাহস রাখে এমন কিছু মানুষও আছে। আবার তারা শাসন করবে এ রকম ঔদ্ধত্যও দেখায় না। এ ধরনের মানুষ নিজেকে সমাজ কাঠামোতে মানিয়ে নিতে পারে না। কমবেশি নির্জন স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে এ রকম একটা আশ্রয় তারা যে কোনোভাবে খুঁজে বের করে। কখনও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এই প্রকৃতির মানুষরা। গোড়ার দিকে এই একই জেনাসের দুই প্রজাতি ছিল খ্রিস্টান ও আমেরিকার প্রথম কর্মীরা। এই আশ্রয় কখনও মানসিক এবং কখনও তা বাস্তব। সন্ন্যাসীর আশ্রমের মতো কখনও কখনও তারা পূর্ণ নির্জনতা চায়। আবার কখনও সামাজিক নির্জনতা চায় মঠের মতো। মানসিক আশ্রয় প্রার্থীদের ভেতর রয়েছে অস্পষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ যাদের স্বার্থ নির্দোষ খামখেয়ালের অন্তর্ভুক্ত। যারা অর্জন করেছেন দুর্বোধ্য ও গুরুত্বহীন পাণ্ডিত্য। এরা তাদের অন্তর্ভুক্ত। পনেরো বছর ধরে শুধু ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে একত্রে বাস করছেন এমন বাস্তব আশ্রয় প্রার্থীদের ভেতর রয়েছেন সভ্যতার সীমারেখা সন্ধানকারী এবং আমাজন অববাহিকার বেটস অনুসন্ধানকারী প্রকৃতিবিজ্ঞানী। বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্যের জন্য কিছু সন্ন্যাসী মেজাজ অপরিহার্য উপাদান। এটি মানুষকে ঈর্ষাপরায়ণতার পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যেতে, জনপ্রিয়তার লোভ সংবরণে এবং সাধারণ উদারতা ও নির্ভুল সিন্ধান্তে উপনীত হতে সামর্থ্য যোগায়।
অকৃত্রিমভাবে উদাসীন নয় তৃতীয় দলের কেউ কেউ। স্বাভাবিকভাবে তারা তা অর্জন করতে অসমর্থ। হতে পারে এসব মানুষ দরবেশ বা বিরুদ্ধ মতাবলম্বী। শিল্প অথবা সাহিত্যের ক্ষেত্রে সন্ন্যাসী জীবনধারা নব্য পন্থার প্রবর্তন করতে পারে। এরা তাদের শিষ্যত্ব অর্জন করে যারা অধীনতাপ্রীতির সঙ্গে বিদ্রোহাত্মক আবেগের সমন্বয় সাধন করে। গোঁড়ামির বিরোধিতা করেন শেষোক্ত ব্যক্তিরা। কিন্তু কোনোরকম বাছবিচার না করেই প্রথমোক্ত ব্যক্তিরা নতুন মতবাদ গ্রহণ করে। এর উদাহরণ টলস্টয় ও তার অনুসারীরা। অকৃত্রিম নির্জনতা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। সবিষাদ জেস এর পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ। তিনি নির্বাসন কাটিয়েছেন ভালো সর্দারদের সঙ্গে এবং কোর্টে ফেরার পরিবর্তে খারাপ সর্দারদের সঙ্গে জঙ্গলে কাটিয়েছেন। সভ্যতার ছোঁয়া পেতেই আমেরিকার প্রথম দিকের অনেক কর্মী কষ্ট ও বঞ্চনা ভোগ করে খামার বিক্রি করে আরও পশ্চিমে সরে পড়েন। এ ধরনের মানুষেরা পৃথিবীতে খুব কমই সুযোগ পেয়ে থাকে। এরা ধাবিত হয় কিছুটা অপরাধের দিকে, কিছুটা বিষণ্ণতার দিকে এবং কিছুটা অসামাজিক দর্শনের দিকে। তাদের মনোভাব গড়ে ওঠে সঙ্গীদের সঙ্গে বেশি মেলামেশার ফলে মনুষ্যদ্বেষিতায়। আর তাই যখন নির্জনতা লাভ করা যায় না তখন তা হিংস্রতায় মোড় নেয়।