পোপ ও ফ্রেডারিকের ভেতর দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় পোপের সার্বিক জয়ের পেছনে প্রধানত দুটো কারণ ছিল : উত্তর ইতালীয় বাণিজ্যিক শহর তাসকানি ও লম্বার্ডের সামন্ত প্রথার প্রতি বিরোধিতা এবং ফ্রান্সিসকানদের দ্বারা ধর্মীয় উৎসাহের জাগরণ। প্রেরিত পুরুষদের দারিদ্র্য ও বিশ্বজনীন প্রেমের বিচার করতেন সেন্ট ফ্রান্সিস; কিন্তু তার মৃত্যুর কয়েক বছরের ভেতর তার অনুসাীরা সার্জেন্টদের নিযুক্তি শুরু করেন চার্চের সম্পত্তি রক্ষার জন্যে তুমুল যুদ্ধের জন্যে। সম্রাটের পরাজয়ের কারণ ছিল এই যে, ঈশ্বরভক্তি ও নৈতিকতার ঢঙে তিনি দাঁড় করাতে পারেননি তার যুক্তিগুলো।
অনেকেই নৈতিকতার কারণে একই সময়ে পোপের এই সংগ্রামকালীন যুদ্ধ প্রস্তুতি পোপের মর্যাদা সম্পর্কে সমালোচনামুখর করে তোলে। CAMBRIDGE MEDIEVAL HISTORY (Vol-5, Page-176)-এ ফ্রেডারিকের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ পোপ চতুর্থ ইনোসেন্টের মৃত্যুর সময় উল্লেখ আছে।
তাঁর পূর্বসূরি যে কোনো পোপের চেয়ে পোপের মর্যাদা সম্পর্কে তার ধারণা অধিকতর ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। তার মতে তার দুর্বলতা ও এর প্রতিকার ছিল রাজনৈতিক। তিনি সর্বদা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ব্যবহার করতেন অর্থ সংগ্রহ, বন্ধুত্ব অর্জন এবং শত্রুকে ঘায়েল করার জন্যে। পোপীয় মর্যাদার প্রতি সর্বত্রই মানুষের ঘৃণার উদ্রেক করে তার অপরিণামদর্শী কার্যকলাপ। কলঙ্কময় ছিল তার কর্মপদ্ধতি। আধ্যাত্মিক কর্তব্য এবং স্থানীয় অধিকার অবমাননা করে তিনি চার্চের সম্পত্তি, পোপীয় রাজস্ব ও রাজনৈতিক পুরস্কারের উপায় হিসেবে ব্যবহার করেন। যাজকীয় বৃত্তির জন্য পোপের জন্য মনোনীত চার ব্যক্তিকে এক এক করে অপেক্ষমান থাকতে হতো। এ ধরনের পদ্ধতির নাম ছিল নিকৃষ্ট নিযুক্তি। আবার দূত নির্বাচন ছিল ধর্ম ও কূটনীতির ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সম্পূর্ণরূপে জাগতিক না হওয়ার চেয়েও বেশি কিছু। তার কারণে সৃষ্ট আধ্যাত্মিক প্রভাব ও সম্ভ্রমহানির ব্যাপারে ইনোসেন্ট সচেতন ছিলেন না। সদিচ্ছা থাকলেও তার নীতি ভালো ছিল না। খুব কমই সৌভাগ্য ও বিপর্যয় দ্বারা বিচলিত হয়েছে তার সাহস, অজেয় সংকল্প ও ধূর্ততায় সমৃদ্ধ ঠান্ডা মেজাজ। তিনি ধৈর্য সহকারে ধূর্ততা ও বিশ্বাসহীনতার সঙ্গে তার লক্ষ্যের দিকে ধাবমান ছিলেন, যার পরিণতিস্বরূপ চার্চের মান নিচে নেমে যায়। তার বিশাল প্রভাব ছিল ঘটনা প্রবাহের উপর। তিনি সাম্রাজ্য ধ্বংস করেন। পোপীয় পতনের সূচনা ঘটে তার হাতেই। তিনি নির্মাণ করেন ইতালির ভাগ্য।
পোপীয় নীতির কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি ইনোসেন্ট-৪-এর মৃত্যুতে। তার উত্তরাধিকারী URBAN-IV সম্পূর্ণ সফলতার সঙ্গে FREDERICK-এর পুত্র MANFRED-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যান। এবং তৎকালীন ইতালির উদীয়মান পুঁজিবাদের সমর্থন লাভ করেন। কর্তৃত্বের আকর্ষনীয় ব্যবহার দ্বারা এর স্থিতিশীলতা যতই ব্যাহত হোক না কেন নৈতিকতার ক্ষেত্রে তা প্রচারণা ক্ষমতা থেকে অর্থনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তনে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। পোপীয় রাজস্ব সংগ্রহের ব্যাপক লেনদেনের জন্য অধিকাংশ ব্যাংকার ইতিমধ্যেই পোপের পক্ষে ছিল, কিন্তু কিছু শহরে যেমন, SIENA ও GHIBELLINE-এ অনুভূতি এত প্রবল ছিল যে, ব্যাংকাররা প্রথমত মেনফ্রেডের পক্ষ অবলম্বন করে। যেখানেই তা ঘটেছে পোপ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের জানিয়ে দেন যে, ঋণ পরিশোধ না করাই হচ্ছে খ্রিস্টানদের দায়িত্ব। তৎক্ষণাৎ এ ঘোষনা ঋণগ্রহীতাদের কাছে কতৃত্বাদেশ হিসেবে গৃহীত হয়। ফলে ইংরেজদের সঙ্গে বাণিজ্য হারাল SIENA। ইতালির সর্বত্র যেসব ব্যাংকর ধ্বংস এড়াতে পারল তারাই পোপীয় কৌশলের দ্বারা বাধ্য হলো GUELPH হতে।
কিন্তু এ উপায়ে ব্যাংকারদের রাজনৈতিক সমর্থন লাভকরতে পারলেও পোপের স্বর্গীয় কর্তৃত্বের দাবির প্রতি জনসাধারণের শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে পারেনি।
দুটি প্রথার ভেতর প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে পশ্চিমা সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে যোড়শ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত সমগ্র যুগটিকে দেখা যেতে পারে : একটি রাজকীয় রোমের অপরটি টিউটনিক অভিজাত শ্রেণির। প্রথমটি চার্চের অঙ্গীভূত এবং দ্বিতীয়টি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অঙ্গীভূত। রাজকীয় রোমের ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন রোম সম্রাটরা। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক ছাড়া তারা সবাই অজ্ঞতাবশত রোমের ঐতিহ্যকে বুঝতে পারেনি। যে সামন্ততান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাদের পরিচিত ছিল তা ছিল জার্মানির। পান্ডিত্যাভিমানীভাবে প্রাচীন তথ্যাদি থেকে গৃহীত হয় রাজকীয় চাকরিজীবীসহ সব শিক্ষিত ব্যক্তির ভাষা। রোমানদের ছিল আইন, গ্রিকদের ছিল দর্শন কিন্তু প্রথা ছিল উৎসের দিক থেকে টিউটনিক যা ভদ্র ভাষায় বর্ণনা করার মতো ছিল না। আধুনিক শিল্প পদ্ধতি বর্ণনায় বর্তমান যুগের সনাতনী পন্ডিতদের ল্যাটিন ভাষায় যে অসুবিধা মোকাবেলা করতে হচ্ছে তার অনুরূপ অসুবিধা ছিল। টিউটনিক প্রথা বর্ণনাময় সংস্কার আন্দোলন ও ল্যাটিনের পরিবর্তে আধুনিক ভাষা গ্রহণের আগে পশ্চিমা ইউরোপীয় সভ্যতার টিউটনিক উপাদান সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল।