এরিস্টটল এসব কার্যাদির কলঙ্কময় বর্ণনা বিবৃত করেছেন এথেন্সের সংবিধান সম্বন্ধে প্রণীত বইয়ে। ৫৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আগুন দিয়ে ধ্বংস করা হয় ডেলপীয় গির্জা এবং আলমেনিদ কর্তৃক গ্রিসের সর্বত্র অর্থসগ্রহ করা হয় তা পুনঃনির্মাণের জন্য। দৃঢ়ভাবে এরিস্টটল বলেন, এই তহবিলের একটি অংশ পিথনেসকে উৎকোচ হিসেবে প্রদান করা হয় এবং পিসিস্ট্রেসাসের পুত্র হেপিয়াসের পতন ঘটানোর জন্য অবশিষ্টাংশ ব্যয় করা হয়। এভাবে তাদের পক্ষে নিয়ে আসা হয় এপোলোকে।
এসব কলঙ্ক সত্ত্বেও রাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয় হয়ে রইল ডেলপিতে দৈববাণীর নিয়ন্ত্রণ, আর এটাই মারাত্মক যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়াল। ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার জন্য এটি ধর্মযুদ্ধ বলে অভিহিত হয়। কিন্তু পরিণামে দৈববাণী রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্মুক্ত, এ সত্যের খোলাখুলি স্বীকৃতি মুক্তচিন্তা বিকাশে উৎসাহ সৃষ্টি করে। পরিশেষে রোমানদের জন্য অপবিত্রতাজনিত ঘৃণা ব্যতিরেকে গ্রিক গির্জাগুলোর অধিকাংশ সম্পদ ও এর সর্বসময় কর্তৃত্ব লাভ সম্ভব করে তোলে। অধিকাংশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হয় সাহসী ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্মনিরপেক্ষ উদ্দেশ্যে এবং এর ফলে বাজেয়াপ্ত হয় এগুলোর ক্ষমতানির্ভর সম্মান। আরও সুন্দরভাবে এবং অন্যান্য স্থানের চেয়ে তুলনামূলক কম চরমে পৌঁছেই তা ঘটেছিল গ্রিসীয় রোমান দুনিয়ায়। কারণ ধর্ম কখনও কোথায় এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপের মতো এত শক্তিশালী ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে চীন হচ্ছে গ্রিক ও রোমের অনুরূপ একমাত্র দেশ।
যেগুলো স্মরণাতীত কাল থেকেই চলে এসেছে এবং যেগুলোর ঐতিহাসিক উৎস আমাদের জানা নেই এ পর্যন্ত আমরা ঐসব ধর্ম নিয়ে আলোচনা করলাম। কিন্তু এর সবগুলোকে অতিক্রম করেছে প্রবর্তকের কাছ থেকে প্রাপ্ত ধর্ম। একমাত্র সিন্টো ও ব্রাহ্মণ্যবাদ হচ্ছে ব্যতিক্রম। নৃবিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ধর্মগুলোর মতো সনাতন ধর্মগুলোর উৎস সম্পূর্ণরূপে অস্পষ্ট বর্তমান বর্বর সমাজে। আমরা দেখেছি যে কোনো সুনির্দিষ্ট যাজক সম্প্রদায় ছিল না প্রাচীনতম বর্বর সমাজে; এটা অনুমিত হয় যে প্রাথমিক অবস্থায় অগ্রাধিকার ছিল যাজকয়ি কাজে বৃদ্ধ লোকের, বিশেষত যারা বিচক্ষণ এবং ক্ষতিকর যাদুবিদ্যায় খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
অধিকাংশ দেশে সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে যাজকরা অবশিষ্ট জনগণ থেকে ক্রমাগতভাবে পৃথক এবং ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। কিন্তু রক্ষণশীল ছিলেন প্রাচীন প্রথার ধারক হিসেবে। তারা ক্ষমতা ও সম্পদের অধিকারী হিসেবে ব্যক্তিগত ধর্মের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন অথবা উদাসীন হয়ে পড়ে। বিপ্লবী নবীর অনুসারীদের দ্বারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাদের সবকিছুই। ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত বুদ্ধ, খ্রিস্ট ও মোহাম্মদ (সাঃ)। তাদের অনুসারীদের ক্ষমতা প্রথমে বিপ্লবী ছিল এবং ক্রমান্বয়ে তা প্রথায় পরিণত হয়। প্রক্রিয়াগতভাবে তারা আত্মীকৃত করে নামমাত্র যেসব প্রথার পরিসমাপ্তি তারা পূর্বাহ্নে ঘটিয়েছেন সেসব প্রথার অধিকাংশই।
যে কোনো উপায়ে যতটুকু সম্ভব প্রথার প্রতি আবেদন রেখেছেন সবচেয়ে স্থায়ী সফল ধর্মীয় ও নিরপেক্ষ প্রবর্তকরা এবং পারতপক্ষে হ্রাস করেছেন তাদের পদ্ধতির অভিনবত্বের মাত্রা। স্বাভাবিক পরিকল্পনা হবে কাল্পনিক অতীত আবিষ্কার করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুনরুদ্ধারের দাবি করা। যাজকগণ কিভাবে আইনের বই পান এবং রাজা কিভাবে আদেশ পালনে প্রত্যাবর্তন ঘটান তা 2 kings xxii নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে। নবীদের কর্তৃত্বের প্রতি আবেদন রাখে নতুন টেস্টামেন্ট; এনাবেপ্টিস্টরা নতুন টেস্টামেন্টের প্রতি; ইংরেজ গোঁড়া খ্রিস্টানরা ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়ে বিজয়পূর্ব ইংল্যান্ডের কাল্পনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি। জাপানিরা .৬৪৫ সালে মিকাডোর ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে; ১৮৬৮ সালে তারা ৬৪৫ সারেল সংবিধান পুনরুদ্ধার করে। একটা পুরো বিপ্লবী শ্রেণি মধ্যযুগব্যাপী এবং পরে ১৮ মেয়ার পর্যন্ত পুনরুদ্ধার করে রোমের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শার্লিম্যানের সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন নেপোলিয়ান, কিন্তু তা মনে করা হতো অতিশয় নাটুকেপনাপূর্ণ তুচ্ছ বলে। বাগিতার যুগকে তা প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়। এগুলো এলোমেলো কতগুলো উদাহরণমাত্র। এগুলো প্রথাগত ক্ষমতার বেলায় দেখিয়েছেন মহান প্রবর্তকরা।
ক্যাথলিক চার্চ হচ্ছে ইতিহাসে জ্ঞাত যাজকীয় সংগঠনগুলোর বেতর সবচেয়ে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায়ে আমি আলোচনা করব শুধু প্রথাগত ক্ষমতা নিয়ে। সুতরাং আমি আলোচনা করব বর্তমান বিপ্লবী আদর্শে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত চার্চের ক্ষমতার প্রাচীন যুগ নিয়ে। রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর, চার্চের পক্ষে দুটো প্রথা জনসমক্ষে তুলে ধরার সুযোগ হয় : খ্রিস্ট ধর্মের প্রথার সাথে তা রোমের প্রথারও বাস্তবরূপ দেয়। বর্বরদের ক্ষমতা ছিল, কিন্তু চার্চের ছিল উন্নত সভ্যতা ও শিক্ষা। একটা সুসঙ্গত নৈর্ব্যক্তিক উদ্দেশ্য, ধর্মীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভীতির প্রতি আবেদন সৃষ্টির উপায় এবং সর্বোপরি তা ছিল একমাত্র সংগঠন যা পুরো পশ্চিম ইউরোপব্যাপী বিস্তার লাভ করে। তুলনামূলকভাবে গ্রিক চার্চ স্থিতিশীল সাম্রাজ্য কনস্টান্টিনোপোল ও মস্কোর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে সম্পর্ক রক্ষাকারী রাষ্ট্রের অধীন হয়; কিন্তু সংস্কার সাধনের আগে পর্যন্ত পরিবর্তনশীল ভাগ্যের ভেতর দিয়ে সংগ্রাম চলছিল এবং তা আজ পর্যন্ত জার্মানি, মেক্সিকো ও স্পেনে শেষ হয়নি।