নৃবিজ্ঞানীদের পরিচিত সামজে প্রাথমিক হলেও যাজক এবং রাজা বিদ্যমান। একই ব্যক্তি কখনও উভয় কাজ সম্পাদন করে থাকেন। তা শুধু বর্বর সামজেই নয়, বরং অত্যধিক সভ্য সমাজেও দেখা যায়। রোমে প্রধান যাজক ছিলেন অগাস্টাস এবং প্রদেশগুলোতে দেবতা। ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রের অধিকর্তা ছিলেন খলিফা। অনুরূপ বর্তমানকালে সিন্টো ধর্মের সিকাডোর অবস্থান। রাজার ধর্মনিরপেক্ষ কার্যকলাপ হারানোর এক প্রবল প্রবণতা দেখা দিয়েছে ধার্মিকতার জন্য এবং এভাবে তিনি পরিণত হন একজন যাজকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সত্ত্বেও স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট হয়ে পড়েছে রাজা ও যাজকের পার্থক্য।
চিকিৎসক হচ্ছে যাজকের প্রাচীনতম রূপ, যার ক্ষমতা দুই প্রকার। এই দুই প্রকার ক্ষমতাকে নৃবিজ্ঞানীরা ধর্ম ও ঐন্দ্রজালিক বলে অভিহিত করেছেন। অতিমানবীয় সত্তার সাহায্যের উপর ধর্মীয় ক্ষমতা নির্ভরশীল। অথচ ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা প্রাকৃতিক। যা হোক আমাদের কাছে উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয় এ ধরনের ক্ষমতা। গুরুত্বপূর্ণ যা তা হচ্ছে ধর্ম বা ইন্দ্রজাল দ্বারা অন্য লোকের উপকার বা ক্ষতি করতে সামর্থ্য চিকিৎসক। তাছাড়া সবার জন্য উন্মুক্ত নয় এই ক্ষমতা। এটুকু ভাবা হয় যে ইন্দ্রজাল পেশা বহির্ভুত কিছু মানুষ ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে চিকিৎসকের ইন্দ্রজাল কঠিন। কেউ যখন পীড়িত হয় বা দুর্ঘটনায় পতিত হয় তখন বুঝতে হবে যে তা ঘটেছে কোনো শত্রুর অমঙ্গলকারী ম্যাজিকের দ্বারা। কি করে এই সম্মোহন দূর করা যায় চিকিৎসক তা জানেন। এভাবে ডিউক অব ইয়র্ক দ্বীপের একজন চিকিৎসক রোগীর পীড়িত হওয়ার কারণ বের করেন তার সুচতুর অনুমান দ্বারা। তিনি এক প্যাকেট চুন বের করেন এবং আওড়ান জাদুমন্ত্র : এই যাদুমন্ত্র অসাড় এটা মনে করা যাবে না। এ ধরনের মন্ত্রের প্রতি বেশি আকৃষ্ট সভ্য লোকের চেয়ে বর্বরেরা। এ জন্য এ জাতীয় মানুষের দ্বারা তাদের রোগ সৃষ্টি এবং উপশমও হয়।
রিভার্সের মতানুসারে একজন যাদুকর নতুবা ধর্মযাজক ম্যালোনেশিয়ার অধিকাংশ স্থানের রোগ উপশমকারী। চিকিৎসক ও অন্যান্য লোকের ভেতর আপাত স্পষ্ট পার্থক্য নেই এসব অঞ্চলে এবং যে কোনো মানুষ দ্বারা তা সহজতরভাবে উপশম সম্ভব।
যারা সমন্বয় ঘটিয়েছেন চিকিৎসার সাথে ধর্মীয় ও ঐন্দ্রজালিক আচরণের স্বভাবতই তারা দক্ষতা অর্জন করে থাকেন দীক্ষা এবং শিক্ষার মাধ্যমে। এমন জ্ঞান পয়সা দিয়ে কিনে নিতে হয় ম্যালোনেশিয়াতে। সবচেয়ে পরিপূর্ণ শিক্ষা ছাত্রদের কোনো কাজেই আসে না যতক্ষণ পর্যন্ত না চিকিৎসা-ইন্দ্রজাল বা চিকিৎসা-ধর্মীয় কলাকৌশলের কোনো শাখায় তাদের পকেট থেকে পয়সা প্রশিক্ষকদের হাতে পৌঁছায়।
এসব সূচনা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, আরও গুরুত্বপূর্ণ ঐন্দ্রজালিক ও ধর্মীয় ক্ষমতাসম্পন্ন একটি নির্দিষ্ট যাজক সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধি, পরিণামে যে সম্প্রদায় গোটা সমাজের উপর এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। মিসর ও ব্যাবিলনের রাজার সঙ্গে দ্বন্দ্বে তাদের ক্ষমতা রাজার চেয়ে বেশি–এটা প্রতীয়মান হয়। তারা নাস্তিক ফেরাউন ইকনাটনকে পরাজিত করেন এটা অনুমান করা যায় এবং সাইরাসকে বিশ্বাসঘাতকপূর্বক ব্যাবিলন বিজয়ে সাহায্য করেন। কারণ তাদের দেশীয় রাজা প্রবণতা দেখিয়েছেন যাজকমন্ডলীর বিরুদ্ধাচারণের।
প্রাচীন সমাজে গ্রিস ও রোম পৃথক সত্তার অধিকারী ছিল যাজকীয় ক্ষমতা থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকার জন্যে। অনুমিত হয়, গ্রিসে পরিচালিত এ রকম ধর্মীয় ক্ষমতা প্রধানত দৈববাণী প্রকাশের স্থান ডেলপিতে পুঞ্জীভূত ছিল, যেখানে পিথনেস ভাববিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং এপেলো কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে উত্তর। করেছিলেন। যা হোক মহাজ্ঞানীদের ঘুষ দেয়া হতো হেরোডেটাসের সময়। আলমেনিদে নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ এথেনীয় পরিবার পিসিস্ট্রেসাস কর্তৃক নির্বাসিত হয় বলে হেরোডেটাস ও এরিস্টটল উভয়েই উল্লেখ করেছেন এবং তার ছেলেদের বিরুদ্ধে ডেলপির সমর্থন লাভ করে দুর্নীতির মাধ্যমে। কৌতূহল উদ্দীপক ছিল হেরোডেটাসের বক্তব্য : তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, ব্যক্তিগত অথবা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে এথেনীয়রা ঘুষ দিয়ে পিথনেসকে এথেন্সবাদদিদের বলার জন্য রাজি করাতে পারতেন যে, তারা অবশ্যই এথেন্সকে মুক্ত করে দেবে। সুতরাং কোনো উত্তর না পেয়ে লেসিডিমনীয়রা অস্টারের পুত্র। এনকিমলিয়াসকে (যিনি এথনীয়দের বিরুদ্ধে সংগঠিত সেনাবাহিনীর প্রধান। ছিলেন) আদেশ করেন পিসিস্ট্রিডীয়দের তাড়িয়ে দেয়ার জেন্য; যদিও তাদের ভেতর সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। কারণ তারা বেশি সম্মান প্রদর্শন করত মানবীয় বিষয়ের চেয়ে স্বর্গীয় বিষয়ের প্রতি।
পরাজিত হলেও এনকিমিলিয়াসের পরবর্তী বড় অভিযান সফল হয়েছিল। ক্ষমতা ফিরে পায় আলমেনিদ পরিবার অন্যান্য নির্বাসিতরা এবং পুনরায় স্বাধীনতা লাভ করে এথেন্স।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই বর্ণনায়। হেরোডেটাস পুরোপুরিভাবে বিশ্বনিন্দাবাদ বিবর্জিত একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এবং তিনি স্পার্টাবাসীদের সম্পর্কে ভালো মনোভাব পোষণ করতেন দৈববানী মেনে চলার জন্যে। কিন্তু তার কাছে স্পার্টার চেয়েও এথেন্সের গুরুত্ব বেশি। তিনি এথেন্সবাসীদের ব্যাপারে পিসিস্ট্রেসাস পরিবারের বিরোধী। তা সত্ত্বেও তিনি উল্লেখ করেন, এথেন্সবাসীরাই উৎকোচের কর্তৃত্বদানকারী এবং তাদের অধার্মিকতার জন্য বিজয়ী দল বা পিথনেস পরিবারের উপর শাস্তি নেমে আসেনি। হেরোডেটাসের সময়ও আলমেনিদ পরিবার প্রাধান্য বিস্তার করত। প্রকৃতপক্ষে আলমেনিদ পরিবারের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি তার সমসাময়িক পরিবেশক ছিলেন।