আমরা যদি কিশোর-কিশোরীদিগকে ভয় ও দমন হইতে মুক্ত রাখিতে পারি, আমরা যদি তাহাদিগকে বিদ্রোহী এবং প্রতিহত প্রবৃত্তিগুলির আক্রমণ হইতে রক্ষা করিতে পারি তবে আমরা তাহাদের নিকট জ্ঞানের রাজ্য সম্পূর্ণ অবারিত করিয়া দিতে পারিব। বিজ্ঞতার সহিত শিক্ষা দিলে তখন শিক্ষাগ্রহণকার্য শাস্তির মতো মনে না হইয়া শিশুর নিকট আনন্দদায়ক হইয়া দাঁড়াইবে। শিশুকে এখন যে পরিমাণ শিক্ষণীয় বিষয় শিখানো হয় তাহা অপেক্ষা বেশি শিখানো প্রয়োজন হইবে না। শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণ ব্যাপারে মনোভাবের পরিবর্তন সাধনই বিশেষ প্রয়োজন শিক্ষা ব্যাপারটিকে ছাত্র যেন স্বাধীনতার ভিতর দিয়া নূতন বিষয় আবিষ্কারের জন্য আনন্দপ্রদ অভিযান বলিয়া মনে করে। শিক্ষাক্ষেত্রে এইরূপ ভাবধারা প্রবর্তিত হইলে বুদ্ধিমান ছাত্রগণ নিজেদের চেষ্টায় তাহাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াইতে চেষ্টা করিবে এই বিষয়ে তাহাদিগকে সাহায্য করিবার জন্য সকল রকম সুযোগ-সুবিধা দিতে হইবে। জ্ঞান মানুষকে ধ্বংসকারী প্রবৃত্ত ও আবেগ হইতে রক্ষা করে, জ্ঞান বিনা আমাদের আশার জগৎ গড়িয়া তোলা সম্ভব হইবে না। আমাদের নির্জন মনের গোপনস্তরে কুসংস্কারের ভয় লুকাইয়া থাকে কিন্তু সকল বালক-বালিকা যদি নির্ভীক স্বাধীনতার মধ্যে শিক্ষালাভের সুযোগ পায় তবে এক পুরুষকালের মধ্যেই তাহারা আমাদের অপেক্ষা ব্যাপকতর এবং বলবত্তর আশার অধিকারী হইবে। আমরা দেখিতে পাইব না কিন্তু আমরা যে মুক্ত নরনারী নূতন শিক্ষাব্যবস্থার ভিতর দিয়া গড়িয়া তুলিব তাহারাই নূতন জগৎ দেখিতে পাইবে প্রথমে দেখিবে তাহাদের আশার স্বপ্নে; পরে দেখিবে বাস্তবের পরিপূর্ণ মহিমায়।
পথ পরিষ্কার। যেইরূপ সন্তানপ্রীতি থাকিলে এই পথ গ্রহণ করিতে বাসনা জাগে তাহা কি আমাদের আছে? কিংবা আমরা নিজেরা যেইরূপ দুর্ভোগ ভুগিয়াছি আমাদের শিশুদিগকেও সেইরূপ ভুগিতে দিব? আমরা কি তাহাদিগকে নির্যাতন ও নিপীড়নের ভিতর দিয়া বাল্যকাল কাটাইতে দিয়া যৌবনে নিরর্থক প্রতিরোধ্য যুদ্ধে নিহত হইতে দিব? সুখসমৃদ্ধি ও মুক্তির পথে তাহার রকমের ভয় ও বাধা বিঘ্ন আসিয়া উপস্থিত হয় কিন্তু প্রেমপ্রীতির শক্তি সব রকম ভয় জয় করিতে পারে; আমরা যদি আমাদের সন্তানদের প্রকৃতই ভালোবাসি জগতে কিছুই আমাদিগকে এই কল্যাণকর কার্য হইতে নিবৃত্ত করিতে সমর্থ হইবে না।