এই যুগে এথেন্সে বেশ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিভাবান মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল। এস্কাইলাস, সফোক্লিস এবং ইউরিপাইডিসের মতো মহৎ নাট্যকাররা ছিলেন পঞ্চম শতকেরই মানুষ। এস্কাইলাস ম্যারাথনের যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং সালামিসের যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সফোক্লিস অবশ্য তখনো ধর্মীয়ভাবে গোড়াপন্থী ছিলেন। তবে ইউরিপাইডিস প্রোটাগোরাসের দ্বারা এবং সে সময়ের মুক্তচিন্তার লোকজনদের চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন; পুরাণের ব্যাপারে তার বিচার ছিল সংশয়বাদী এবং নাশকতাপূর্ণ। কমিক কবি অ্যারিস্টোফ্যানিস সক্রেটিস, সফিস্ট এবং দার্শনিকদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সিম্পোজিয়াম নামক সংলাপে প্লেটো সক্রেটিসের সঙ্গে অ্যারিস্টোফ্যানিসের অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি, স্থপতি ফিডিয়াস ছিলেন পেরিক্লিসের বন্ধুবৃত্তের অন্তর্ভুক্ত।
এই যুগে এথেন্সের উৎকর্ষ ঘটেছিল বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি শিল্পকলার ক্ষেত্রে। একমাত্র সক্রেটিস ছাড়া পঞ্চম শতকের কোনো বড় গণিতজ্ঞ বা দার্শনিকই এথেনীয় ছিলেন না। আর সক্রেটিস লেখক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এমন। একজন মানুষ যিনি নিজেকে মৌখিক আলাপ-আলোচনার কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ সালে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ বেধে গেলে এবং ৪২৯ সালে পেরিক্লিসের মৃত্যু হলে এথেনীয় ইতিহাসে এক অন্ধকার যুগের সূচনা ঘটে। এথেনীয়রা ছিল নৌশক্তিতে সেরা, কিন্তু স্থলশক্তিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল স্পার্টানরা এবং ওই বছরের গ্রীষ্মকালের মধ্যে তারা এথেন্স ছাড়া বারবার আটিকা দখল করে। ফলে এথেন্স জনভারে বিপন্ন হয় এবং প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবে বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। ৪১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্স সিরাকুজ দখলের উদ্দেশ্যে এক বিরাট অভিযান চালায়, যে সিরাকুজ ছিল স্পার্টার মিত্র। কিন্তু এথেন্স তা দখল করতে ব্যর্থ হয়। যুদ্ধের ফলে এথেনীয়রা দুর্ধর্ষ ও নিষ্ঠুর শাস্তিপরায়ণ মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। ৪১৬ সালে তারা মেলোস নামে একটি দ্বীপ জয় করে, সেখানকার যুদ্ধ করতে সমর্থ সব লোককে হত্যা করে এবং অন্যান্য অধিবাসীদের দাস বানিয়ে ফেলে। ইউরিপাইডিসের দি ট্রয়ান উইমেন নাটকটি ছিল এ ধরনের বর্বরতার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। সংঘাতটির একটি মতাদর্শগত দিক ছিল, কারণ স্পার্টা ছিল ধনিকতন্ত্রের পক্ষে, আর এথেন্স ছিল গণতন্ত্রের পক্ষে। এথেনীয়রা যে তাদের নিজেদের অভিজাত শ্রেণির কাউকে কাউকে রাষ্ট্রদোহী বলে সন্দেহ করেছিল তার কিছু কারণ ছিল। মনে করা হতো যে, ৪০৫ সালের এগোসপটামির যুদ্ধে এথেন্সের নৌশক্তির চূড়ান্ত পরাজয়ের জন্য অংশত এথেন্সের অভিজাত সম্প্রদায়ের একটি অংশ দায়ী ছিল।
স্পার্টানরা যুদ্ধ শেষে এথেন্সে একটি ধনিকগোষ্ঠীর সরকার গঠন করে, যারা তিরিশ স্বৈরশাসক বলে পরিচিত। এই তিরিশ স্বৈরশাসকের নেতা ছিলেন ক্রিটিয়াস। তিনিসহ আরো কয়েকজন একসময় সক্রেটিসের শিষ্য ছিলেন। তারা কারণসঙ্গতভাবেই অজনপ্রিয় ছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। স্পার্টার সম্মতিক্রমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা ছিল একটি তিক্ত গণতন্ত্র। ওই গণতন্ত্রে অভ্যন্তরীণ শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সব ব্যবস্থাই ছিল, অভিযুক্তদের রাজক্ষমতা প্রদর্শনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, বরং যেকোনো অজুহাতে তাদের দণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে খুব উৎসাহ ছিল। সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুদণ্ড এ রকম একটি পরিবেশেই কার্যকর হয়েছিল।