——-
১. বায়রন, Lord Byron (১৭৮৮-১৮২৪)। Lord Gordon নামেও মায়ের পদবীতে পরিচিত। রোমান্টিক যুগের কবি।
২. অনুবাদ মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-১৯৫৬)। তিনি বার্ট্রান্ড রাসেলের “Conquest of Happiness”-এর ভাব অবলম্বনে “সুখ” গ্রন্থটি রচনা করেন।
৩. সলোমন, solomon, খ্রিস্টপূর্ব দশম শতকের হিব্রু রাজা। খ্রিস্ট সমাজে তার চিন্তাধারাপুত ‘Legos Theology’ গৃহীত।
৪. Eccleiasten সলোমনের রচনা নয়। কিন্তু তাঁর নামের সাথেই এই গ্রন্থ সংযুক্ত।–রাসেল
৫. শেলি, P.B Shelley (১৭৯২-১৮২২), রোমান্টিক যুগের কবি। স্বল্পায়ু। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘Ode to the West Wind’, ‘The Cloud’, ‘the Skylark’ এবং ‘Song of Prosperive’
৬. মোতাহার হোসেন চৌধুরীর অনুবাদ।
৭. বেকন, Roger Bacon (১২১৪-১২৯২), ইউরোপের মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক।
৮. Coulton(কূলটন)-এর বিখ্যাত গ্রন্থ “From St. Francis to Dante” হ’তে গৃহীত।–রাসেল।
৯. ব্রাউনিং, Robert Browning (১৮১২-১৮৮৯), বিখ্যাত ইংরেজ কবি। তাঁর কবিতায় নিস্পৃহতা ও দুর্বোধ্যতার অভিযোগ তোলেন অনেক সমালোচক।
১০. ফিটজেরাল্ড (১৮০৯-৮৩), ইংরেজ কবি, পারস্যের কবি ওমর খৈয়ামের রুবাইত’-এর ইংরেজি অনুবাদক রূপে বিখ্যাত।
১১. ইবসেন, Henrik (Johan) Ibsen (১৮২৪-১৯০৬)। নরওয়ের কবি ও নাট্যকার। আধুনিক নাট্যকলার প্রবাদপুরুষ।
১২. শেক্সপীয়ার, William Shakespeare (১৫৬৪-১৬১৬)। ইংরেজী সাহিত্যের মহাকবি, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার।
১৩. Vera Meynell ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ‘Masses and Man’ নামে।-–রাসেল
০৩. প্রতিযোগিতা
আপনি আমেরিকার যে কোনও লোক অথবা ইংল্যান্ডের যে কোনও ব্যবসায়ে লিপ্ত লোকের কাছে যদি জানতে চান, জীবনকে উপভোগ করার পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক কী, তা হলে তিনি বলবেন : ‘জীবন সংগ্রাম’। তিনি অবশ্য আন্তরিকভাবেই সে কথা বলবেন। কারণ তিনি তা বিশ্বাস করেন। কথাটা একদিক দিয়ে যেমন সত্য, তেমনি অন্য অর্থে এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থেই তা মিথ্যা। জীবনসংগ্রাম এমন একটি জিনিস, যা ঘটবেই। আমরা যদি সৌভাগ্যবান না হই, তা হলে আমাদের সকলকেই জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়। কনরাডের(১) কাহিনীর নায়ক ফকের কথা উদাহরণস্বরূপ ধরে নেওয়া যায়। ফক ছিল এক পরিত্যক্ত জাহাজে। নাবিকদের মধ্যে যে দুজনের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, তাদের মধ্যে সে একজন। অন্য কয়েকজন নাবিকের শরীর ছাড়া তাদের জন্যে কোনও খাদ্যবস্তু ছিল না। দুজনে সেইসব শবদেহকে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে যখন সব শেষ হয়ে গেল তখন শুরু হল প্রকৃত জীবনসংগ্রাম। দুই জনের মধ্যে জয়ী হয়েছিল ফক। কিন্তু তারপর থেকে সে নিরামিশাষী হয়ে গেল। কোনও ব্যবসায়ী যখন জীবনসংগ্রামের কথা বলেন তখন তিনি এই ধরণের জীবনসংগ্রামের কথ ভাবেন না। তার কাছে জীবনযুদ্ধ কথাটি ভুল অর্থে ব্যবহৃত। অত্যন্ত সাধারণ একটা ব্যাপারকে মহিমা দান করার জন্যে এটিকে তিনি নির্বাচিত করেছেন। তার স্বশ্রেণীর ব্যবসায়ীদের কজন না খেয়ে মারা গেছেন, সে কথা জানতে চান তার কাছে। আরো জানতে চান তার বন্ধুরা, যারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পরে তাদের কী ঘটেছে, সকলেই জানে কোনও ব্যবসায়ী সর্বহারা হলেও তিনি আহারে-বসনে, যে লোকটি যথেষ্ট ধনী হয়ে সর্বহারা হওয়ার সুযোগ পাননি, তার চেয়ে অনেক সুখে থাকেন। এই শ্রেণীর লোকেরা জীবনসগ্রামের অর্থ বলে বোঝে জীবনে সাফল্য পাওয়ার সংগ্রামকে। যারা সগ্রামে রত, তাদের মনে এই যে ভয় নেই যে পরদিন সকালে তাদের প্রাতঃরাশ জুটবে না। তাদের ভয় হল প্রতিবেশীদের চেয়ে যদি কয়েক ধাপ ওপরে উঠতে না পারেন।
অবাক হতে হয় একথা ভেবে যে, তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না যে এমন কোনও যন্ত্রে তারা ধরা পড়েননি যা থেকে তাদের অব্যাহতি নেই। মূল কথাটা হল, যে দৈনন্দিন একঘেয়ে, বাঁধাধরা ও ক্লান্তিকর কাজ তারা করছেন। সেটা ওপরে ওঠার সোপান নয়। আমি অবশ্য উচ্চ-স্তরের ব্যবসায়ীদের কথা ভাবছি। তারা এর মধ্যেই প্রচুর উপার্জন করেছেন এবং তারা যদি চান তা দিয়েই সারা জীবন কাটাতে পারেন।
এইরকম জীবন কাটানো তাদের কাছে গ্লানিকর মনে হয়। যেন তারা শত্রুর ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যদি তাদের কাছে জানতে চান তাদের কাজ দিয়ে জনসাধারণের কোন্ উপকারটা করছেন, তা হলে তারা কর্মব্যস্ত জীবনের প্রচারমূলক অসার কিছু কথা তুলে ধরবেন। ঐ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কিছু তাদের কাছে নেই।
এই রকম একজন মানুষের জীবন বিবেচনা করুন, মনে করুন তার সুন্দর বাড়ি, সুন্দরী পত্নী এবং সুন্দর সব সন্তান রয়েছে। তিনি অন্য সবার ঘুম ভাঙার আগেই ওঠেন এবং তাড়াতাড়ি অফিসে বেরিয়ে পড়েন। সেখানে গিয়ে তাকে কুশলী কর্মকর্তার স্বরূপ প্রকাশ করতে হয়। তাকে চোয়াল দৃঢ় নিবদ্ধ করার কৌশল আয়ত্ত করতে হয়। অভ্যাস করতে হয় বাচনভঙ্গিতে দৃঢ়তা প্রকাশ এবং বাক সংযমের, যাতে অফিসভৃত্য ছাড়া আর, সবার কাছে তা প্রভাব বাড়াতে পারে। তিনি অফিসের চিঠির বিষয়ে নির্দেশ দেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে টেলিফোনে আলাপ করেন, বাজারের অবস্থা যাচাই করেন। তারপর এমন কোনও ব্যক্তির সাথে দুপুরের আহার সারেন, যার সাথে তিনি কোনও লাভজনক লেনদেন করছেন অথবা করবেন বলে আশা করেন। সারা অপরাহ্ন একই ধরণের কাজ চলে। তারপর তিনি বাড়ি ফেরেন। তখন তিনি ক্লান্ত, নৈশাহারের পূর্বে যথাযথ পোষাক পরে তিনি নৈশাহারে বসেন তারই মতো ক্লান্ত অন্য লোকদের সাথে। খাওয়ার সময়, যেসব মহিলা তখনো ক্লান্ত হওয়ার সুযোগ পাননি, তাদের সঙ্গ উপভোগ করছেন, এমন ভান করে যেতে হয়। এই হতভাগ্য লোকটি ঠিক কত ঘণ্টা পরে মুক্তি পান তা আগে বলা সম্ভব নয়। অবশেষে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং কয়েক ঘণ্টার জন্যে তার উত্তেজিত স্নায়ু বিশ্রাম পায়।