——-
১. ভিকার অব ওয়েকফিল্ড (Vicar of Wakefield), অলিভার গোল্ডস্মিথ, Oliver gold smith (১৭৩০-১৭৭৪), রচিত কালজয়ী উপন্যাস। এই উপন্যাসের রচনাকাল ১৭৬১ ৬২ এবং প্রকাশিত হয় ১৭৬৬ সালে। অলিভার গোল্ডস্মিথ এ্যাংলো আইরিশ লেখক এবং কবি। পেশায় চিকিৎসক।
২. জীন আইলিন, Jean Ayling (১৮৯৪-১৮৭৬)। তার আসল নাম Dorothy Mand Wincln মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাসেক্সে জন্ম, বিখ্যাত গবেষক। তাঁর গবেষণা গ্রন্থে, ‘The Retreat from Parenthood’ উচ্চবিত্ত, পেশাজীবীদের মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের সমস্যাকে অন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখা হয়েছে।
১৪. কাজ
কাজকে সুখের কারণ রূপে স্থাপন করা উচিত না দুঃখের কারণরূপে, মনে হয় তা বিবেচনা করা হচ্ছে একটা সন্দেহজনক প্ৰশ্নরূপে। এমন অনেক কাজ আছে যা খুবই ক্লান্তিকর এবং অতিরিক্ত কাজ করা সব সময়েই খুব কষ্টকর। কিন্তু আমি মনে করি অধিকাংশ লোকের কাছে কাজটা যদি অতিরিক্ত না হয়, সেই কাজ সবচেয়ে নীরস হলে অলসতার চেয়ে কম দুঃখের। কাজের সবরকম শ্রেণী আছে। কাজের প্রকৃতি এবং কর্মীর দক্ষতা অনুযায়ী সেসব শ্রেণীর একপ্রান্তে যেমন থাকে একঘেয়েমির হাত থেকে মুক্তি, অন্যপ্রান্তে থাকে গভীরতম আনন্দ। অধিকাংশ লোক যেসব কাজ করে তার উল্লেখযোগ্য অংশই শুধু কাজ বলেই তা আকর্ষণীয় তা নয়। তবু এমন কাজেরও কয়েকটি বড় সুবিধার দিক রয়েছে। কাজে শুরুতে কী করা উচিত তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ না করেই দিনের অনেকটা সময় কাজ করা যায়। অধিকাংশ লোকই যখন তারা নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজে সময় কাটাবার স্বাধীনতা পায়, তখন কোন কাজে তারা প্রচুর আনন্দ পাবে তা চিন্তা করতে পারে না এবং যখন একটা কিছু ঠিক করে, তখন ভাবে অন্য কাজটা করলে হয়তো বেশি আনন্দের হত। অবসর সময় কীভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাটানো যায় সেটা স্থির করাই হচ্ছে সভ্যতার শেষ কাজ এবং এখন পর্যন্ত কম লোকই সেই স্তরে পৌঁছাতে পেরেছে। তাছাড়া, পছন্দ করার কাজটাও তো ক্লান্তিকর। অসাধারণ উদ্যোগী ছাড়া, অন্যদের উপদেশ দেওয়া যদি খুব বেশি অসন্তোষজনক না হয়, তা হলে দিনের প্রতিটি ঘণ্টা কী করতে হবে তা বলে দেওয়া হয় তাহলে ভালই লাগে। অধিকাংশ কর্মহীন ধনীরা অবর্ণনীয় রকমের একঘেয়েমিতে ভোগে, যা থেকে মুক্তির জন্যে অনেক কঠিন মূল্য তাদের দিতে হয়। কখনো তারা মুক্তি খোঁজে আফ্রিকায় পশু শিকার করে, কখনও আকাশযানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু এ ধরনের উত্তেজনাময় কাজের সংখ্যা সীমিত, বিশেষ করে যখন যৌবন অতিক্রান্ত হয়। সে জন্যে যেসব ধনীব্যক্তি বুদ্ধিমান তারা যদি গরীব হতেন তখন যেমন পরিশ্রমের কাজ করতেন, প্রায় তেমন পরিশ্রম করেন। আর ধনী মহিলারা এমন সব অসংখ্য নগণ্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, যার মাটি-কাঁপাননা গুরুত্ব বিষয়ে তাদের ধারণাকে কেউ বদলাতে পারবে না।
সুতরাং বিরক্তির প্রতিষেধক হিসাবে প্রথম এবং প্রধান স্থান হল কাজের। কারণ প্রয়োজনীয় অথচ নীরস কাজ করতে গিয়ে যে বিরক্তি জাগে তা কোনও কাজ না থাকার বিরক্তির তুলনায় কিছুই নয়। কাজের এই সুবিধার সাথে আরো একটা সুবিধা যুক্ত আছে তা হল ছুটির দিন যখন আসে তা অনেক বেশি আনন্দময় হয়ে ওঠে। যদি অবশ্য এমন কঠিন কাজ কোনও মানুষকে করতে না হয়, যা তার জীবনীশক্তি নষ্ট করে দেয়, তাহলে সে অলস লোকের কাজের চেয়ে ছুটির সময়ে তৃপ্তির স্বাদ পেতে অনেক বেশি উদ্দীপনা খুঁজে পাবে।
পারিশ্রমিক পাওয়া অধিকাংশ কাজের এবং বিনা পারিশ্রমিকের কিছু কাজের দ্বিতীয় সুবিধা এই যে, তা উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যে সাফল্য এবং সম্ভাবনা এনে দেয়। অধিকাংশ কাজের সাফল্য পরিমাপ করা হয় উপার্জন দিয়ে এবং যতদিন আমাদের ধনতান্ত্রিক সমাজ থাকবে তাকে লঙ্ঘন করা যাবে না। একমাত্র শ্রেষ্ঠ কাজের ক্ষেত্রেই এই পরিমাপ প্রয়োগ করা হয় না। মানুষের উপার্জন বাড়ানোর ইচ্ছা যতটুকু সাফল্যের ইচ্ছাও ততটুকু কারণ অতিরিক্ত উপার্জনেই শুধু অতিরিক্ত আরাম পাওয়া যাবে। কাজ যত নীরসই হোক তাতে যদি সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তা সহ্য করাও যায়– তা সেই প্রতিষ্ঠা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক অথবা নিজের সমাজ-চক্রের মধ্যেই থাকুক। উদ্দেশ্যের অবিচ্ছিন্নতাই হচ্ছে আগামী দিনের সুখের প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে একটি এবং প্রায় অধিকাংশ লোকের জীবনে তা আসে কাজের ভিতর দিয়ে। এই বিষয়ে সেসব রমণীদের গৃহকর্মে ব্যস্ত থাকতে হয়, তারা পুরুষদের তুলনায় অথবা যেসব রমণী বাইরে কাজ করে তাদের চেয়ে কম ভাগ্যবতী। যে নারী সংসারের কাজ করে তার জন্যে কোনও পারিশ্রমিক পায় না। তার নিজের অবস্থা ভাল করার কোনও উপায় নেই, স্বামী শুধু তাকে স্বীকার করে নেয় (সে কী করে তা প্রায় দেখেই না)। কিন্তু গৃহকর্মের জন্যে তার কোনও মূল্য নেই, যদি অন্য কোনও গুণ থাকে তবে সে তার মূল্য পায়। যেসব রমণী অবশ্য যথেষ্ট স্বচ্ছল তাদের বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। তারা সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে পারে, সুন্দর বাগান করতে পারে এবং ক্রমে। প্রতিবেশীদের ঈর্ষার পাত্রী হয়। কিন্তু তাদের সংখ্যা বড় কম। অধিকাংশ রমণীর পক্ষেই গৃহকর্ম সেই পরিমাণ তৃপ্তি দেয় না, যা পুরুষদের এবং পেশাজীবী নারীদের অন্যসব কাজ দেয়। সময় কাটাবার এবং যত অল্পই হোক, উচ্চাকাঙ্ক্ষা সার্থক করে তোলার জন্যে কিছু পথ খুলে দেওয়ার মূল্য কাজের মধ্যেই বেশি পাওয়া যাবে এবং যার কাজ বিরক্তিকর, তাকেও কর্মহীনের তুলনায় বেশি তৃপ্তি দেবে। কিন্তু কাজ যখন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তখন তা শুধুমাত্র একঘেয়েমি থেকে মুক্তির চেয়ে অনেক ওপরের স্তরের তৃপ্তি দিতে পারে। আমি যেসব কাজের আকর্ষণ কোমল, তা থেকে শুরু করে একজন মহান ব্যক্তির সম্পূর্ণ শক্তি নিয়োজিত করে রাখার মতো উপযুক্ত কাজ দিয়ে এই সাজানোটা শেষ করব।