ইউসুফ, ছেলেমি করো না। আব্দুল্লাহ ফিরে তার বায়ু ধরে টেনে বললেন, বাকীটা পরে হবে। যেয়াদ, ওর দিকে ভালো করে খেয়াল করো।’ যেয়াদ আবার তেমনি মাথা নাড়লো। ইউসুফ আব্দুল্লাহর সাথে বেরিয়ে গেলেন বাইরে।
*
পথে ইউসুফ প্রশ্ন করলেন, কি মতলব করলে তুমি?’
আব্দুল্লাহ বললেন, ‘শোন, তুমি আমায় নয়ীমের বিবির বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে কয়েদখানায় চলে যাও। ওখান থেকে নয়ীমকে বের করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে কোনো অসুবিধা হবে না তো?
‘কোন অসুবিধা নেই।’
“আচ্ছা, তুমি বলেছিলে, তোমার কাছে দুটি ভালো ঘোড়া রয়েছে। আমার ঘোড়া রয়েছে ফউজী আস্তাবলে। তুমি আর একটি ঘোড়ার ব্যবস্থা করতে পারবে না?
দশটি ঘোড়ারও ব্যবস্থা করা যাবে, কিন্তু নয়ীমের তিনটা ঘোড়াওততা তার বাড়িতে মওজুদ রয়েছে।’
‘আচ্ছা, তুমি নয়ীমকে ওখান থেকে বের করে নিয়ে নিজের বাড়িতে এসো। এর মধ্যে তার বিবিকে নিয়ে আমি শহরের পশ্চিম দরযার বাইরে ইনতেযার করতে থাকবো। তোমরা দু’জন ঘর থেকে সওয়ার হয়ে এসো ওখানে।’
আব্দুল্লাহ তার লেখা চিঠিখানা বের করে ইউসুফের হাতে দিয়ে বললেন, তোমরা এখান থেকে সোজা কায়রোয়ান চলে যাবে। ওখানকার সালারেআলা আমার দোস্ত ও নয়ীমের মকতবের সাথী। তিনি তোমাদেরকে স্পেন পর্যন্ত পৌঁছে দেবার বন্দোবস্ত করে দেবেন। স্পেনে পৌঁছে তেতলার সেনাবাহিনীর অধিনায়ক আবু ওবায়েদের। হাতে দেবে এ চিঠি। তিনি তোমাদেরকে ফউজে ভর্তি করে নেবেন। তিনি আমার, বিশ্বস্ত দোস্ত। তিনি তোমাদের পূর্ণ হেফাযত করবেন। নয়ীম আমার ভাই, তা তাকে বলবার প্রয়োজন নেই। আমি লিখেছি যে, তোমরা দু’জনই আমার দোস্ত। তোমাদের অবস্থা বলো না আর কারুর কাছে। কস্তানতুনিয়া থেকে ফিরে আমি আমীরুল মুমেনিনের ভুল ধারণা দূর করবার চেষ্টা করবো।’
ইউসুফ চিঠিখানা জিবের মধ্যে রেখে একটি সুন্দর বাড়ির সামনে এসে বললেন, যে নয়ীমের বিবি এখানে থাকেন।
আব্দুল্লাহ বললেন, আচ্ছা তুমি যাও। হুশিয়ার হয়ে কাজ করা।
বহুত আচ্ছা খোদা হাফিজ।’
‘খোদা হাফিয।’
ইউসুফ কয়েক কদম চলে যাবার পর আদুল্লাহ বাড়ির দরজায় করাঘাত করলেন। বারমাক ভিতর থেকে দরজা খুলে আব্দুল্লাহকে নয়ীম মনে করে খুশীতে উচ্ছল হয়ে তাতারী যবানে বললো, আপনি এসেছেন, আপনি এসেছেন? নার্গিস! নার্গিস! উনি এসেছেন।’
আব্দুল্লাহ প্রথম জীবনে কিছুকাল তুর্কিস্তানে কাটিয়ে এসেছেন। তাতারী যবান তিনি কমবেশী করে জানেন। বারমাকের মতলব বুঝে তিনি বললেন, আমি তার ভাই। এর মধ্যে নার্গিস ছুটে এসেছেন। কে এসেছেন?’ তিনি এসেই প্রশ্ন করলেন।
ইনি নয়ীমের ভাই।’ বারমাক জওয়াব দিলো।
‘আমি ভেবেছিলাম, তিনি। নার্গিস আর্তস্বরে বললেন, আমি মনে করেছিলাম, বুঝি তিনিই…..! নার্গিসের উচ্ছ্বসিত দীল দমে গেলো। তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না।
‘বোন। আমি নয়ীমের পয়গাম নিয়ে এসেছি। আব্দুল্লাহ বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করতে বললেন।
তার পয়গাম? আপনি তার সাথে দেখা করে এসেছেন? বলুন, বলুন। নার্গিস অ-সজল চোখে বললেন।
তুমি আমার সাথে যাবার জন্য জলদী তৈরী হয়ে নাও।
‘কোথায়?
নয়ীমের সাথে দেখা করতে।’
তিনি কোথায়?’
শহরের বাইরে তার সাথে দেখা হবে তোমাদের।’
নার্গিস সন্দেহের দৃষ্টিতে আব্দুল্লাহর দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি তো স্পেনে ছিলেন।’
আব্দুল্লাহ বললেন, আমি ওখান থেকেই এসেছি। আজই আমি জানলাম যে, নয়ীম কয়েদখানায় পড়ে রয়েছেন। তাকে বের করে আনবার ইনতেম আমি করেছি। তুমি জলদী করো।’
বারমাক বললো, “চলুন কামরার ভিতরে। এখানে অন্ধকার।
বারমাক, নার্গিস ও আব্দুল্লাহ বাড়ির একটি আলোকোজ্জ্বল কামরায় প্রবেশ করলেন। নার্গিস আব্দুল্লাহকে দীপালোকে ভালো করে দেখলেন। নয়ীমের সাথে তার আকৃতির অসাধারণ সাদৃশ্য তাকে অনেকখানি আশ্বস্ত করলো।
‘আমরা পায়দল যাবো?’ তিনি আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করলেন।
না, ঘোড়ায় চড়ে।’ বলে আব্দুল্লাহ বারমাকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন ‘ঘোড়া কোথায়?
সামনের আস্তাবলে রয়েছে। সে জওয়াব দিলো।
‘চলো আমরা ঘোড়া তৈরী করে নিয়ে আসি।’
আব্দুল্লাহ ও বারমাক আস্তাবলে গিয়ে ঘোড়ার জিন লাগালেন। এর মধ্যে নার্গিস তৈরী হয়ে এসেছেন। তাকে একটি ঘোড়ায় সওয়ার করিয়ে দিয়ে বাকী দুটি ঘোড়ায় সওয়ার হলেন আব্দুল্লাহ্ ও বারমাক। শহরের দরজায় পাহারাদাররা বাধা দিলো। আব্দুল্লাহ তাদেরকে বললেন যে, তিনি কস্তানতুনিয়াগামী ফউজের সাথে শামিল হবার জন্য যাচ্ছেন সেনাবাসের দিকে। প্রমাণস্বরূপ তিনি পেশ করলেন খলিফার হুকুমনামা। পাহারাদাররা আদরের সাথে সালাম করে দরজা খুলে দিলো। দরজা থেকে কয়েক কদম দূরে গিয়ে তারা তিনজন ঘোড়া থেকে নামলেন এবং গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ইনতেযার করতে লাগলেন ইউসুফ ও নয়ীমের জন্য।
উনি কখন আসবেন? নার্গিস বারংবার অস্থির হয়ে প্রশ্ন করেন। আব্দুল্লাহ সস্নেহে জওয়াব দেন, বাস্, এখখুনি এসে যাবেন।
তারা আরো কিছুক্ষণ ইনতেযারে কাটালেন এবং দরযার দিক থেকে ঘাড়ার পদধ্বনি শোনা গেলো।
‘ওরা আসছেন। আব্দুল্লাহ্ আওয়াজ শুনে বললেন। সওয়ারদের আগমনে আব্দুল্লাহ ও নার্গিস গাছের ছায়া থেকে বেরিয়ে দাঁড়ালেন সড়কের উপর।