ইবনে সাদেক জওয়াব দিলো, আপনি হয়েতো জানেন না, ওর মুক্তির অর্থই হচ্ছে আমার মওত ৷ ওর গদানে যতোক্ষণ জল্লাদের তলোয়ার না পড়ছে, ততোক্ষণ আমি স্থির হতে পারবো না।
ইবনে সাদেকের কথা শেষ হতেই আকস্মাত পিছনের কামরার দরযা খুলে গেলো। আব্দুল্লাহ বেরিয়ে আসতে আসতে বললেন, “আর এও তো হতে পারে যে, নয়ীমের মৃত্যুর আগেই তোমায় কবরের মাটিতে শুইয়ে দেওয়া হবে।’
ইবনে সাদেক চমকে উঠে পিছু হটলো। সে পালিয়ে বাঁচাবার চেষ্টা করলো কিন্তু ইউসুফ এগিয়ে গিয়ে তার পথ রোধ করে খনজর দেখিয়ে বললেন, এখন তুমি যেতে পারছে না।
ইবনে সাদেক বললো, “তোমরা জানো, আমি কে?
তা আমরা ভালো করেই জানি, আর আমরা কে, তাও এখনই তোমার জানতে হবে।’ বলে ইউসুফ তালি বাজালেন। তার গোলাম যেয়াদ ছুটে এসে ঢুকলো কামরায়। তাকে দৈর্ঘ্য প্রস্থে, রূপ ও আকৃতিতে মনে হলো, যেনো এক কালো দৈত্য। তার ভুড়িটি এতো বেড়ে গেছে যে, চলবার সময়ে তার পেট উপরে নীচে থলথল করছে। বিরাট এক মোটা নাক। নীচের ওষ্ট এতো মোটা যে, মাড়িশুদ্ধ দাঁতগুলো দেখা যায়, আর উপরের দাঁত ওষ্ঠের তুলনায় অনেকখানি লম্বা। চোখ দুটো ছোট অথচ উজ্জ্বল। সে ইবনে সাদেকের দিকে তাকিয়ে মনিবের হুকুমের ইনতেযার করতে লাগলো।
ইউসুফ একটা রশি নিয়ে আসতে হুকুম দিলেন। যেয়াদ তেমনি তার পেট উপর-নীচে নাচিয়ে-নাচিয়ে বাইরে গিয়ে রশি ছাড়া একটা চাবুকও নিয়ে এলো।
ইউসুফ বললেন, ‘যেয়াদ, ওকে রশি দিয়ে জড়িয়ে এই খুটির সাথে বেঁধে ফেলো।’
যেয়াদ আগের চাইতেও ভয়ংকর মূর্তি ধরে এগিয়ে গেলো এবং ইবনে সাদেকের বায়ু ধরে ফেললো। ইবনে সাদেক খানিকটা ধস্তাধস্তি করে শক্তিমান প্রতিদ্বন্দ্বীর মুঠোর চাপে অসহায় হয়ে পড়লো। যেয়াদ তার বায়ু ধরে এমন করে ঝাঁকুনি দিলো যে, সে বেঁহুশ ও নিঃসাড় হয়ে পড়লো। তারপর বেশ স্বস্তির সাথে সে তার হাতপা এক খুটির সাথে শক্ত করে বেঁধে দিলো। আব্দুল্লাহ্ জিব থেকে রুমাল বের করে তার মুখটা বেঁধে দিলেন মযবুত করে। ইউসুফ আব্দুল্লার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘এখন আমাদের কি করতে হবে?
আব্দুল্লাহ্ জওয়াব দিলেন, সব কিছুই আমি ভেবে রেখেছি। তুমি তৈরী হয়ে আমার সাথে চলো। নয়ীমের বিবি যে বাড়িতে থাকেন, তা তোমার জানা আছে?
‘জি হ্যাঁ, সে বাড়িটা এখান থেকে কাছেই।
বহুত আচ্ছা। ইউসুফ, তুমি এক দীর্ঘ সফরে চলেছে। জলদী তৈরী হয়ে নাও।’
ইউসুফ লেবাস বদলী করতে ব্যস্ত হলেন এবং আব্দুল্লাহ কাগজ-কলম নিয়ে জলদী এক চিঠি লিখে জিবের মধ্যে ফেললেন।
কার কাছে চিঠি লিখছেন?
‘এ ঘৃণিত কুকুরের সামনে তা বলা ঠিক হবে না। বাইরে গিয়ে আমি সব বলবো। তোমার গোলামকে বলে দাও, আমি যা বলি, সে যেন তেমনি করে। আজ ভোরে আমি ওকে সাথে নিয়ে যাবো।’
আর ওর কি হবে? ইউসুফ ইবনে সাদেকের দিকে ইশারা করে বললেন।
আব্দুল্লাহ জওয়াবে বললেন, ‘ওর জন্য তোমার চিন্তা করতে হবে না। তুমি যেয়াদকে বলে যাও, আমরা ফিরে আসা পর্যন্ত ওর হেফাযত করবে।…… তোমার এখানে কোনো বড় কাঠের সিন্দুক আছে, যা এই বিপদজ্জনক ইঁদুরের জন্য পিঁজরার কাজে লাগতে পারে?’
ইউসুফ আব্দুল্লাহর মতলব বুঝে হাসলেন। তিনি বললেন, জি হ্যাঁ, পাশের কামরায় একটা বড় সিন্দুক পড়ে রয়েছে। তাতে ওর জন্য চত্মকার পিজরা হবে এসো, তোমায় দেখাচ্ছি।’ ..
ইউসুফ আব্দুল্লাহকে অপর কামরায় নিয়ে এবং কাঠের এক সিন্দুকের দিকে ইশারা করে বললেন, আমার মনে হয়, এটি দিয়ে তোমার প্রয়োজন মিটবে।’
হ্যাঁ এটি চমৎকার। এটিকে শিগগীর খালি করো।’ ইউসুফ ঢাকনা তুলে ফেলে সিন্দুক উলটে দিয়ে জিনিসপত্র মেঝের উপর ঢেলে ফেললেন। আব্দুল্লাহ চাকু দিয়ে সিন্দুকের ঢাকনায় দু’তিনটি ছিদ্র করে বললেন, ব্যস, এবার ঠিক আছে। যেয়াদকে বলে দাও, এটাকে তুলে কামরায় দিয়ে যাক।’
ইউসুফ যেয়াদকে হুকুম দিলে সে সিন্দুকটি অপর কামরায় নিয়ে গেলো।
আব্দুল্লাহ বললেন, এখন তুমি যেয়াদকে বলল, সে ভালো করে ওকে দেখাশুনা করবে, আর যদি সে ছাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে, তাহলে ওর গলা টিপে দেয়’
ইউসুফ যেয়াদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যেয়াদ তোমায় কি করতে হবে, বুঝে নিয়েছে তো?’
যেয়াদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
উনি যা হুকুম করেন, তা আমারই হুকুম মনে করবে।’
যেয়াদ আবার তেমনি ঘাড় নাড়লো।
আব্দুল্লাহ্ বললেন, চলো দেরী হয়ে যাচ্ছে। ইউসুফ ও আব্দুল্লাহ্ বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ইউসুফ কি যেনো চিন্তা করে থেমে বললেন, হয়তো এ লোকটার সাথে আমার আর দেখা হবে না। আমার কিছু কথা আছে ওর সাথে।
আব্দুল্লাহ বললেন, এখন কথার সময় নয়।
‘কোনো লম্বা আলাপ নয়। ইউসুফ বললেন, ‘তুমি একটু দাঁড়াও। ইউসুফ ইবনে সাদেককে লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনার কাছে ঋনী। এখন আমি আপনার কার্য কিছুটা আদায় করে যাচ্ছি। দেখুন, আপনি মুহাম্মদ বিন কাসিমের মুখে থুথু দিয়েছিলেন, তাই আমি আপনার মুখে থুথু দিচ্ছি।—-বলে তিনি ইবনে সাদেকের মুখে থুথু দিলেন। আপনি তার হাতের উপর ছড়ি মেরেছিলেন, এই নিন—বলে ইউসুফ তাকে এক কোনো মারলেন। মনে পড়ে, আপনি নয়ীমের মুখে চড় মেরে ছিলেন, এই তার জওয়াব—বলে ইউসুফ জোরে চড় মারলেন তার গালে। আপনি নয়ীমের মাথার চুল উপড়ে দিয়েছিলেন। ইউসুফ তার দাড়ি ধরে জোরে জোরে ঝাঁকুনি দিলেন।..