নার্গিস স্থিরকণ্ঠে জওয়াব দিলেন, আপনার ফিরে আসা পর্যন্ত আমি ওই উঁচু উঁচু বাড়িগুলো গুণতে থাকবো।’
নয়ীম কিছুক্ষণ খলিফার প্রসাদ দ্বারে প্রতীক্ষা করতে হলো। অবশেষে দারোয়ানের ইসারায় তিনি দরবারে হাযির হয়ে খলিফাঁকে সালাম করে দাঁড়ালেন আদবের সাথে। খলিফার ডানে বাঁয়ে কতিপয় বিশিষ্ট সভাসদ উপবিষ্ট। কিন্তু কারুর দিকেই তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন না। খলিফা সুলায়মান বিন্ আব্দুল মালিকের মুখে এমন এক তেজের দীপ্তি ফুটে বেরুতো যে, অতি বড় বাহাদুর লোকও তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবার সাহস করতেন না।
খলিফা নয়ীমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, তুমি তুর্কিস্তান থেকে এসেছো?
“জি হাঁ, আমীরুল মুমেনিন।’
কুতায়বা তোমায় পাঠিয়েছেন?
এ প্রশ্ন নয়ীমকে হয়রান করে তুললো। আমীরুল মুমেনিন, আমি নিজের মরীতেই এসেছি।’ তিনি জওয়াব দিলেন।
বলো কি বলবার আছে তোমার?
‘আমীরুল মুমেনিন, আমি আপনার কাছে.আরয করতে এসেছি যে, কুতায়বা আপনার এক ওফাদার সিপাহী। হয়তো মুহাম্মদ বিন কাসিমের মতো তাঁর সম্পর্কেও আপনার মনে কোনো ভুল ধারণা হয়ে থাকবে।
সুলায়মান তার কথা শুনে কুরসী থেকে খানিকটা উঁচু হয়ে উঠে ক্রোধে ঠোঁট কামড়ে আবার বসে পড়লেন ‘তুমি জানো? খলিফা আপনার কণ্ঠস্বর বদল করে বললেন, ‘তোমার মতো বেআদবের সাথে আমি কেমন করে থাকি, জানো তুমি?
দরবারে খিলাফত থেকে একটি লোক উঠে বললো, আমীরুল মুমেনিন? এ মুহাম্মদ বিন কাসিমে পুরানো দোস্ত। দরবারে খিলাফতের চাইতে এর বেশী সম্পর্ক সেই অভিশপ্ত খান্দানের সাথে।
নয়ীম বক্তার দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। সেই ইবনে সাদেক!
অবজ্ঞা-মিশ্রিত হাসি সহকারে সে তাকালো নয়ীমের দিকে। নয়ীম অনুভব করলেন যে, আজদাহা আবার মুখ খুলে দাঁড়িয়েছে। এবার আজদাহা আরও তীক্ষ্ণ দাঁত বের করে এগিয়ে আসছে। নয়ীম ইবনে সাদেকের দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে সুলায়মানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার ক্রুদ্ধ দৃষ্টি আমার সভ্যভাষণে বিরত করবে না। মুহাম্মদ বিন কাসিমের মতো সিপাহী আরব মাতা বারংবার জন্ম দেবে না। হ্যাঁ, তিনি ছিলেন আমার দোস্ত, কিন্তু আমার চাইতে বেশি তিনি ছিলেন আপনার দোস্ত। কিন্তু তাকে ভুল বুঝলেন আপনি। আপনি হাজ্জাজের প্রতিশোধ নিলেন তাঁর নিরপরাধ ভাতিজার উপর। আর এখন আপনি ইবনে সাদেকের মতো জঘন্য শয়তানদের ফাঁদে পড়ে কুতায়বা বিন মুসলিমের সাথেও সেই একই আচরণ করতে চাচ্ছেন। আমিরুল মুমেনিন, আপনি মুসলমানদের ভবিষ্যতকে ঠেলে দিচ্ছেন বিপদের মুখে। শুধু মুসলমানদের ভবিষ্যতই আপনি বিপন্ন করছেন না, আপনি নিজেও এক যবরদস্ত বিপদ ডেকে নিয়ে আসছেন। এ লোকটি ইসলামের পুরানো দুশমন। ওর কবল থেকে বাঁচবার চেষ্টা করুন।
‘খামোশ। খলিফা নয়ীমের দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে তালি বাজালেন। এক কোতোয়াল আর কয়েকজন সিপাহী নাংগা তলোয়ার হাতে এসে দেখা দিলো।
নওজোয়ান, আমি কুতায়বার চাইতে বেশী করে সন্ধান করছি মুহাম্মদ বিন কাসিমের দোস্তদের। খুব ভাল হলো যে, তুমি নিজে এসে ধরা দিয়েছে। ওকে নিয়ে যাও আর ভাল করে ওর দেখাশুনা করো গে,।
সিপাহী নাংগা তলোয়রের পাহারায় নয়ীমকে বাইরে নিয়ে গেলো। তখনো দরাজয় তাঁর কয়েকজন সাথী তার ইনতেযার করছে। নয়ীমকে বন্দী হতে দেখে তারা পেরেশান হলো। নয়ীম তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার জলদি ফিরে চলে যাও। বারমাককে বলবে, সে যেনো নার্গিসের কাছেই থাকে, আর কুতায়বাকে আমার তরফ থেকে বলবে তিনি যেনো বিদ্রোহ না করেন।’
কোতয়াল বললো, “আফসোেস, আমরা আপনাদেরকে বেশি সময় কথা বলবার এযাবত দিতে পারছি না।’
বহুত আচ্ছা’ নয়ীম কোতায়ালের দিকে তাকিয়ে হেসে জওয়াব দিয়ে এগিয়ে চললেন।
তের
সুলায়মান খলিফার মসনদে সমাসীন। তাঁর মুখের উপর চিন্তার রেখা সুপরিস্ফুট। তিনি ইবনে সাদেকের দিকে তাকিয়ে বললেন, এখনো তুর্কিস্তান থেকে কোনো খবর এলো না।’
‘আমীরুল মুমেনিন! নিশ্চিন্ত থাকুন। ইনশাআল্লাহ্ তুর্কিস্তান থেকে প্রথম খবরে সাথেই কুতায়বার শির আপনার সামনে হাযির করা হবে।
‘দেখা যাক।’ সুলায়মান দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন।
খানিক্ষণ পরেই এক দারোয়ান এসে আরয করলো, স্পেনে থেকে আব্দুল্লাহ নামে এক সালার এসে হাযির হয়েছেন।’
“হ্যাঁ তাকে নিয়ে এসো।’ খলিফা বললেন।
দারোয়ান চলে গেলে আব্দুল্লাহ্ এসে হাযির হলেন।
খানিকটা উঁচু হয়ে বসে খলিফা ডান হাতটি বড়িয়ে দিলেন। আব্দুল্লাহ এগিযে এসে খলিফা সাথে মোসাফেহা করে আদব সহকারে দাঁড়িয়ে গেলেন।
‘তোমার নাম আব্দুল্লাহ’?
‘জি হ্যাঁ, আমীরুল মুমেনিন।
‘স্পেন থেকে আমি তোমার বীরত্বের তারিফ শুনেছি। তোমায় অভিজ্ঞ নওজোয়ান বলে মনে হচ্ছে। স্পেনের ফউজে তুমি কবে ভর্তি হয়েছিলে’?
‘আমীরুল মুমেনিন, তারিকের সাথে আমি গিয়েছিলাম স্পেনের উপকূলে। তারপর থেকে আমি ওখানেই ছিলাম এতদিন।’
‘বেশ। তারিক সম্পর্কে তোমার ধারণা কি?
‘আমীরুল মুমেনিন, তিনি এক সত্যিকার মুজাহিদ।
‘আর মুসা সম্পর্কে তোমার মত?
‘আমীরুল মুমেনিন, এক সিপাহী অপর সিপাহী সম্পর্কে কোনো খারাপ মত পোষণ করতে পারে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি মুসার সমর্থক এবং তাঁর সম্পর্কে কোন খারাপ মত মুখ থেকে বের করা আমি গুনাহ্ মনে করি।