এক সালার জওয়াব দিলেন, মুহাম্মদ বিন্ কাসিমের সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা-ই হবে।’
কিন্তু কেন?’ কুতায়বা তেজোদীপ্ত আওয়াযে বললেন, মুসলামানদের এখনো আমার খেদতমের প্রয়োজন রয়েছে। চীন জয় করবার আগে আমি কিছুতেই খলিফার কাছে আত্মসমর্পণ করবো না।
কুতায়বা আবার নকশা দেখতে শুরু করলেন।
আচানক নয়ীম এসে কামরায় প্রবেশ করলেন। কুতায়বা এগিয়ে তাঁর সাথে মোসাফেহা করে বললেন, “আফসোস! তোমায় এ অসময়ে তীফ দেওয়া হয়েছে। একা এসেছ, না-?
বিবিকেও আমি সাথে নিয়ে এসেছি। মনে করলাম, হয়তো আমার দামেস্ক যেতে হবে।’
‘দামেস্ক? না দূত হয়তো তোমায় ভুল খবর দিয়েছে। দামেস্কে তোমায় নয়, আমায় ডেকে পাঠান হয়েছে। নয়া খলিফার কেবল আমারই মস্তকের প্রয়োজন।
তাহলে তো আমিও যাওয়া জরুরী মনে করছি।’
নয়ীম! কুতায়বা সাদরে তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘আমার বদলে তুমি দামেস্কে যাবে, এজন্য তো আমি তোমায় ডাকিনি। তোমার জান আমার কাছে আমার নিজের জানের চাইতেও প্রিয়। বরং আমি আমার প্রত্যেক সিপাহীর জান আমার নিজের জানের চাইতে মূল্যবান মনে করি। তুমি অনেকখানি বিচক্ষণ বলেই আমি তোমায় ডেকে এনেছি। আমায় কি করতে হবে, তাই আমি তোমার ও অন্যান্য অভিজ্ঞ দোস্তদের কাছে জিজ্ঞেস করতে চাই। আমীরুল মুমেনিন আমার রক্তের পিয়াসী।’
নয়ীম স্থির কণ্ঠে জওয়াব দিলেন, ‘খলিফার হুকুম অমান্য করা কোন মুসলিম সিপাহীর পক্ষে শোভন নয়।
তুমি মুহাম্মদ বিন কাসিমের পরিণাম জেনেও আমায় দামেস্ক গিয়ে নিজ হাতে নিজের মস্তক খলিফার সামনে পেশ করতে বলছো?
আমার মনে হয়, খলিফাতুল মুসলেমিন আপনার সাথে হয়তো অতোটা খারাপ ব্যবহার করবেন না, কিন্তু যদি কোনো সম্ভাবনা আসে, তথাপি তুর্কিস্তানের সব চাইতে বড়ড়া সিপাহসালারকে প্রমাণ করতে হবে যে, আমীরের আনুগত্যে তিনি কারুর পেছনে নন।’
কুতায়বা বললেন, মওতের ভয়ে আমি ঘাবরাই না, কিন্তু আমি অনুভব করছি যে, ইসলামী দুনিয়ায় আমার প্রয়োজন রয়েছে। চীন জয়ের আগে আমি নিজে মৃত্যুর মুখে সমর্পণ করে দিতে চাই না। আমি বন্দীর মৃত্যু চাই না, চাই মুজাহিদের মৃত্যু।
দরবারে খিলাফতের হয়তো আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়ে থাকবে। খুবই সম্ভব, তা দূর হয়ে যাবে। আপাততঃ আপনি এখানেই থাকুন এবং আমায় দামেস্ক যাবার এজাযত দিন।’
কুতায়বা বললেন, ‘এও কি হতে পারে যে, আমি নিজের জান বাচাঁতে গিয়ে তোমার জান বিপদের মুখে ঠেলে দেবো? তুমি আমায় কি মনে করো?
‘হাঁ’ তাহলে আপনি কি করতে চান?
‘আমি এখানেই থাকবো। আমীরুল মুমেনিন যদি অকারণে আমার সাথে মুহাম্মদ বিন কাসিমের অনুরূপ আচরণ করতে চান, তাহলে আমার তলোয়ারই আমায় হেফাযত করবে।’
‘এ তলোয়ার আপনাকে দরবারে খিলাফত থেকে দেওয়া হয়েছিলো। একে খলিফার বিরুদ্ধে লাগানোর খেয়াল মনেও আনবেন না। আমায় ওখানে যাবার এযত দিন। আমার বিশ্বাস, খলিফা আমার কথা শুনবেন এবং আমি তাঁর ধারণা দূর করতে পারবো। আমার সম্পর্কে কোনো আশংকা মনে আনবেন না। দামেস্কে আমার পরিচিতি লোক কমই রয়েছে। ওখানে কোনো দুশমন নেই আমার। এক মামুলি সিপাহী হিসাবে আমি যাবো ওখানে।’
নয়ীম, আমার জন্য কোন বিপদে পড়বার এযাবত আমি তোমায় দেবো না।’
এ আপনার জন্য নয়। আমি অনুভব করছি, আমীরুল মুমেনিনের কার্যকলাপে ইসলামী জামাআতের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। আমার কর্তব্য আমি তাকে এ বিপদ-সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত করে দিই। আপনি আমায় এযত দিন।’
কুতায়বা অন্যান্য সালারের দিকে তাকিয়ে তাঁদের মত জানতে চাইলেন। হুবায়রা বললেন, তামাম জিন্দেগীর কোরবানীর পর যিন্দেগীর শেষ অধ্যায়ে এসে আমরা বিদ্রোহীর তালিকায় নাম লিখাতে পারি না। নয়ীমের যবান থেকে আমারা সব কিছুই . জেনেছি। আপনি ওঁকে দামেস্ক যাবার এযত দিন।’
কুতায়বা খানিকক্ষণ পেশানীতে হাত রেখে চিন্তা করে বললেন, আচ্ছা নয়ীম, তুমি যাও। দরবারে খিলাফতে আমার তরফ থেকে আরয করবে যে, আমি চীন জয়ের পরেই এসে হাযির হবো।
কাল ভোরেই আমি এখান থেকে রওয়ানা হবে।’
কিন্তু তুমি এই মাত্র বললে, তোমার বিবিকে তুমি সাথে নিয়ে এসেছে। ওঁকে তুমি..।
‘ওঁকে সাথেই নিয়ে যাবো আমি।’ কথার মাঝখানে নয়ীম জওয়াব দিলেন, দামেস্কে আমার কর্তব্য শেষ করে আমি ওঁকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আপনার খেদমতে হাযির হবো।’
পরদিন নয়ীম ও নার্গিস আরও দশজন সিপাহী সাথে নিয়ে রওয়ানা হলেন দামেস্কের পথে। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বারমাকেও তারা নিলেন সাথে করে।
দামেস্কে পৌঁছে নয়ীম তার সাথীদের থাকার ব্যবস্থা করলেন এক সারাইখানায়। নিজের জন্য এক বাড়ি ভাড়া নিয়ে নার্গিসের হেফাযত করবার জন্য বারমাককে নিযুক্ত করে খলিফার মহলে গিয়ে মোলাকাতের আবেদন জানালেন। সেখানে তার একদিন ইনতেযার কবরার হুকুম হলো। পরদিন দরবারে খিলাফতে হাযির হবার আগে তিনি বারমারকে বললেন,যদি কোনো কারণে দরবারে খিলাফতে আমার দেরী হয়ে যায় তাহলে ঘরের হেফাযত করবার ও নার্গিসের খেয়াল রাখবার ভার রইলো তোমার উপর। নার্গিসকেও তিনি আশ্বাস দিলেন, যাতে তাঁর অনুপস্থিতিতে তিনি ঘাবড়ে না যান। ওখানে কোনো বিপদের সম্ভাবনা নেই বলে তিনি বিদায় চাইলেন।