যমররুদ! ওদিকে তাকও!’ নয়ীম একদিকে ইশারা করে বললো। যমররুদ তাকিয়ে দেখলো, এক শলকর এগিয়ে আসছে।
হয়তো কোন ফউজ আসছে। সে বললো।
নয়ীম বললেন, এই যে আমাদেরই ফউজ আসছে। আমি হমানের সাথে কয়েকটা কথা বলবার জন্য ফউজের আগে চলে এসেছিলাম।’
যমররুদ বললো, আপনি দেরী করুন। সে আজ রাত্রেই এসে পড়বে হয়তো।
‘এ মুহূর্তে আমার দেরী করা অসম্ভব। আমি আবার আসবো। নার্গিসের দীলে হয়তো কোন ভূল ধারণা পয়দা হয়েছে আমার সম্পর্কে। তুমি গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিও। ওর দীল এতটা কমজোর, তা জানতাম না। ওকে আশ্বাস দিও যে, আমি নিশ্চয়ই আসবো। ওর দীলের খবর আমি জানি।
কথায় যতোটা সম্ভব, আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে থাকি আগে থেকেই, কিন্তু এখন হয়তো ও আমার কথায় বিশ্বাস করবে না। হায়! আপনি নিজের মুখে যদি ওকে একটি কথা বলেও সান্ত্বনা দিতেন। এখন যদি আপনি ওর জন্য কোন নিশানী দিতে পারেন, তাহলে হয়তো ওকে সান্ত্বনা দিতে পারবো।’
নয়ীম এক লহমা চিন্তা করে জেল থেকে রুমাল বের করে দিলেন যমরুদের হাতে। তারপর বললেন, ‘এটা ওকে দিও।
বস্তির লোকেরা ফউজ আসার খবরে ঘাবড়ে গিয়ে এদিক ওদিক পালতে লাগলো। নয়ীম ঘোড়া ছুটিয়ে তাদের কাছে গিয়ে বললেন, কোন বিপদের কারণ নেই। তারা আশ্বস্ত হয়ে নয়ীমে আশে পাশে জমা হতে লাগলো। তিনি ঘোড়া থেকে নেমে তাদের প্রত্যেকের কাছে গিয়ে আলাপ করতে লাগলেন ঘনিষ্ঠ হয়ে। ইতিমধ্যে ফউজ এসে পৌঁছলো বস্তির কাছে। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বিচিত্র আকর্ষণ! বস্তির লোকেরা নয়ীমের সাথে গেলো ইসলামী ফউজকে অভ্যর্থনা জানতে। নয়ীম সিপাহসালারের সাথে প্রত্যেকের পরিচয় করিয়ে দিলেন। ফউজের লক্ষ্যের সাথে পরিচিত হবার পর কতক লোক জিহাদের যাবার আকাংক্ষা প্রকাশ করলো। সিপাহসালার তখনি তৈরী হয়ে নেবার হুকুম দিলেন তাদেরকে। এদের মধ্যে সব চাইতে বেশী আগ্রহ নার্গিসের চাচা বারমাকের। যিন্দেগীর পঞ্চাশটি বসন্ত ঋতু অতিক্রম করে আসার পরও তার সুগঠিত দেহ ও অটুট স্বাস্থ্য অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। বস্তির নয়া সিপাহীদের প্রস্তুতির জন্য খানিকক্ষণ দেরী করতে হলো ফউজকে।
খানিকক্ষণ পর বিশজন সিপাহী তৈরী হয়ে এলে ফউজকে এগিয়ে চলবার হুকুম দেওয়া হলো। বস্তির মেয়েরা ফউজের অগ্রগতির দৃশ্য দেখবার জন্য এসে জমা হলো এ পাহাড়ের উপর। নয়ীম সবার অগ্রগামী দলের পথনির্দেশ করে চলেছেন। নার্গিস ও যমররুদ আর সব মেয়েদের দল থেকে আলাদা হয়ে ফউজের আরও কাছে দাঁড়িয়ে পরস্পর কথা বলে যাচ্ছে। নার্গিসের হাতে নয়ীমের রুমাল।
নার্গিস, তোমার শাহযাদা তো সত্যি শাহযাদা হয়েই বেরিয়েছেন। নয়ীমের দিকে ইশারা করে যমররুদ বললো।
নার্গিস জওয়াব দিলো। আহা! তিনি যদি সত্যি আমার হতেন!
‘তোমার এখনও একিন আসছে না’?
‘একিন আসছে, আবার আসছে না। গম্ভীর হতাশার মধ্যে যখন একবার আশার প্রদীপ নিভে যায়, তখন তাকে আর একবার জ্বেলে নেওয়া বড়ই মুশকিল। সত্যি বলতে তোমার কথায়ও পুরোপুরি একিন আসে না আমার। যমররুদ! সত্যি করে বলো তো, তুমি আমার সাথে ঠাট্টা তো করছে না।
না, তোমার একিন না এলে ওঁকেই ডাকো’।. এখনও বেশী দূরে যাননি। কেমন?
না, যমররুদ, কসম খাও।’
‘কোন কসম খেলে তুমি বিশ্বাস করবে?
‘তোমার শাহযাদার কসম খাও।
‘কোন শাহযাদার?
হুমানের।
‘যে সে আমার শাহযাদা, তা তোমায় কে বললো?’
তুমিই বলেছো।
কবে?’
‘যে দিন সে ভালুক শিকার কতে গিয়ে যখমী হয়ে ফিরে এলো, আর তুমি সারা রাত জেগে কাটালে।’
তাতে তুমি কি আন্দায করলে?
যমররুদ! আচ্ছা, আমার কাছ থেকে কি গোপন করবে তুমি? এমন মুহূর্ত আমারও কেটেছে। উনিও যে যখমী হয়ে এসেছিলেন, তা তোমার মনে নেই?
‘আচ্ছা, তা হলে আমি ওর কসম খেলে তুমি বিশ্বাস করবে?’
“হয়তো করবো।’
আচ্ছা, হুমানের কসম করেই বলছি, আমি ঠাট্টা করছি না।’
যমরুরুদ! যমররুদ!! নার্গিস তাকে চেপে ধরে বললো, তুমি আমায় বারংবার সান্ত্বনা না দিলে, হয়তো আমি মরেই যেতাম! উনি কবে আসবেন, কেন জিজ্ঞেস করলে না তুমি?
“উনি খুব শিগগীরই আসবেন।
যদি শিগগীরই না আসেন তাহলে…. তাহলে?’ নার্গিস ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করলো।
যমদ সলজ্জভাবে বললো, তাহলে আমি তোমার ভাইকে পাঠিয়ে দেবো ওঁকে নিয়ে আসতে।
এগারো
ছয় মাস কেটে গেলো, কিন্তু নয়ীম আসেন না। ইতিমধ্যে কুতায়বা নাযককে কতল করে তুর্কিস্তানের বিদ্রোহের ধুমায়িত অগ্নিশিখা অনেকখানি ঠান্ডা করে এনেছেন। নাকের যবরদস্ত সমর্থক শাহে জর্জানও নিহত হয়েছেন। এই অভিযানে শেষ করে কুতায়বা সুগদের বাকী এলাকা জয় করতে গিয়ে পৌঁছলেন সিন্তানে। সেখানে থেকে আবার উত্তর দিকে এগিয়ে গেলেন খারেযম পর্যন্ত। খারেযম-শাহ জিযিয়া দেবর ওয়াদা করে শান্তি স্থাপন করলেন। খারেযম থেকে খবর পাওয়া গেলো যে, সমরকন্দবাসীরা চুক্তিভংগ করে চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহের প্রস্তুতি।
কুতায়বা ফউজের কয়েকটি দল সাথে নিয়ে হামলা করলেন সমরকন্দের উপর এবং শহর অবরোধ করলেন। বোখারার মতই সুদৃঢ় প্রাচীর ও মযবুত কেল্লা এ শহরটিকেও নিরাপদ করে রেখেছিলো। কুতায়বা আত্মবিশ্বাস সহকারে অবরোধ জারী রাখলেন। তিন মাস কেটে যাবার পর শাহে-সমরকন্দ পাঠালেন শান্তির আবেদন। জওয়াবে কুতায়বা সন্ধির শর্ত লিখে পাঠালেন। বাদশাহ্ শর্ত মন্যুর করে নিলে শহরের দরজা খুলে দেওয়া হলো।