আচ্ছা এ তিন জনের মধ্যে বাহাদুর কে? এক নওজোয়ান প্রশ্ন করলো।
মুহম্মদ বিন কাসিম।’ একজন কিছুক্ষণ চিন্তা করে জওয়াব দিলো। একটি লোক ঘুমের নেশায় ঝিমুচ্ছিল। মুহাম্মদ বিন্ কাসিমের নাম শুনে সে বসলো হুশিয়ার হয়ে।
মুহাম্মদ বিন কাসিম? আরে, তিনি আবার বাহাদুর? সিন্ধুর ভীতু রাজাদের তাড়িয়েছেন, এইতো! তাতেই হলেন বাহাদুর! লোক যে তাঁকে ভয় করে, তার কারণ তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাতিজা। তার চাইতে রিক অনেক বড়ো, লোকটি এই কথা বলে চোখ মুদলো আবার।
তার কথা শুনে মুহম্মদ বিন কাসিমের সমর্থক বিরক্ত হয়ে বললো, চাঁদের দিকে থুথু ফেললে তা পড়ে নিজেরই মুখে। আজকের ইসলামী দুনিয়ায় কেউ নেই। মুহম্মদ বিন কাসিমের মোকাবিলা করবার মতো।
তৃতীয় এক ব্যক্তি বললো, মুহাম্মদ বিন্ কাসিমকে আমরা দেখি ইযযতের দৃষ্টিতে, কিন্তু এ কথা কখনো স্বীকার করবো না যে, ইসলামী দুনিয়ায় তাঁর মোকাবিলার যোগ্য নেই। আমার ধারণা, তারিকের মোকাবিলা করবার যোগ্য নেই আর কোন সিপাহী।’
চতুর্থ ব্যক্তি বললো, এও ভুল। কুতায়বা এঁদের দুজনেরই চাইতে বাহাদুর।’ তারিকের সমর্থক বললো,…..’লা হাওলা ওয়ালা কুওৎ। কোথায় তারিক আর কোথায় কুতায়বা। কুতায়বা মুহম্মদ বিন্ কাসিমের চাইতে বাহাদুর, এ কথা আমি মানি, কিন্তু তারিকের সাথে তার তুলনা চলে না।’
‘তোমার ছোট মুখে মুহাম্মদ বিন্ কাসিমের নামও শোভা পায় না। মুহাম্মদ বিন্ কাসিমের সমর্থক আবার বললো বিরক্তি স্বরে।
‘আর তোমার ছোট মুখে আমার সাথে কথা বলাও শোভা পায় না। তারিকের সমর্থন জওয়াব দিলো।
এরপর দুজনেই তলোয়ার টেনে নিয়ে পরস্পরের মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে গেলো। তাদের মধ্যে যখন লড়াই শুরু হয়ে যাচ্ছে, তখনই দেখা গেলো, আব্দুল্লাহ আসছেন ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে। আব্দুল্লাহ্ দূর থেকে এ দৃশ্য লক্ষ্য করে ঘোড়া হাঁকালেন দ্রুতগতিতে। দেখতে দেখতে তিনি এসে দাঁড়ালেন তাদের মাঝখানে এবং তাদের কাছে জানতে চাইলেন লড়াইয়ের কারণ।
এক ব্যক্তি উঠে বললো, তারিক বড়ো না মুহাম্মদ বিন কাসিম বড়ো, এই প্রশ্নের মীমাংসা করছে এরা।
থাম!’ আব্দুল্লাহ্ হেসে বললেন এবং যুদ্ধরত লোক দুটিও তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলো
‘তোমরা দুজনই ভুল করছে। মুহাম্মদ বিন্ কাসিম ও তারিক তোমাদের নিন্দা-প্রশংসার ধার ধারেন না। তোমরা কেন মুফতে একে অপরের গর্দান কাটতে যাচেছা? শোন, তারিককে কেউ মুহাম্মদ বিন্ কাসিমের চাইতে বড়ো বললে তিনি তা পছন্দ করবেন না, আর মুহাম্মদ বিন্ কাসিমও শুনে খুশী হবেন না যে, তিনি তারিকের চাইতে বড়ো। যারা জংগের ময়দানে যান আল্লাহর হুকুমের সব কিছু কোরবান করবার আকাংক্ষা নিয়ে, এমনি বাজে কথার ধার ধারেন না তারা। তোমরা তলোয়ার কোষবদ্ধ কর। তাদেরকে নিয়ে মাথা ঘামিও না।’
আব্দুল্লাহর কথায় সবাই চুপ করে গেলো এবং লড়াই করতে উদ্যত লোক দুটি লজ্জায় অপোবদন হয়ে তলোয়ার কোষবদ্ধ করলো। সবাই একে একে আব্দুল্লাহর সাথে মোসাফেহা করতে লাগলো। আব্দুল্লাহ্ এক ব্যক্তির কাছে নিজের বাড়ির খবর জানতে চাইলেন। সে জওয়াব দিলো, আপনার বাড়ির সবাই কুশলে আছেন। কাল আমি আপনার বাচ্চাকে দেখলাম মাশাআল্লাহ্, আপনারই মতে জোয়ান মরদহবে।
‘আমার বাচ্চা!’ আব্দুল্লাহ্ প্রশ্ন করলেন।
“ওহো, এখনও আপনি খবর পাননি। তিন চার মাস হলো, মাশাআল্লাহ আপনি এক সুদর্শন ছেলের বাপ হয়েছেন। কাল আমার বিবি আপনার বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে এলো। আমার বাচ্চা তাকে নিয়ে অনেকক্ষণ খেলা করেছে। চমৎকার স্বাস্থ্যবান ছেলে।
আব্দুল্লাহ লজ্জায় চোখ অবনত করলেন এবং সেখান থেকে উঠে বাড়ির পথ ধরলেন। তাঁর মন চায় এক লাফে বাড়িতে পৌঁছে যেতে, কিন্তু এতগুলো লোকের সামনে লজ্জায় তিনি মামুলী গতিতে ঘোড়া ছুটালেন। গাছ-গাছড়ার আড়ালে গিয়েই তিনি ঘোড়া ছুটালেন পূর্ণ গতিতে।
আব্দুল্লাহ্ বাড়িতে ঢুকে দেখলেন, উযরা খেজুরের ছায়ায় চারপায়ীর উপর শুয়ে রয়েছেন। তাঁর ডান পাশে শায়িত এক খুবসুরত বাচ্চা তার হাতের আঙ্গুল চুষছে। আব্দুল্লাহ্ নীরবে এক কুরসী টেনে উযরার বিছানার কাছে বসে পড়লেন। উযরা স্বামীর মুখের উপর লজ্জাভারাবনত দৃষ্টি হেনে উঠে বসলেন। আব্দুল্লাহ হেসে ফেললেন। উযরা দৃষ্টি অবনত করে বাচ্চাকে কোলে তুলে নিয়ে হাত বুলাতে লাগলেন তার মাথায়। আব্দুল্লাহ্ হাত বাড়িয়ে উযরার হাতে চুমো খেলেন। তারপর ধীরে বাচ্চাকে তুলে নিলেন এবং তার পেশানীতে হাত বুলিয়ে তাকে কোলে শুইয়ে দিয়ে তাকিয়ে রইলেন তার মুখের দিকে। বাচ্চা একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো আব্দুল্লাহর কোমরে ঝুলানো খনজরের চমকদার হাতলের দিকে। সে যখন এদিক-ওদিক হাত, চালিয়ে হাতলটি ধরলো, তখন আব্দুল্লাহ নিজে তাঁর খনজরের হাতল তুলে দিলেন তার হাতে। বাচ্চা হাতলটি মুখে নিয়ে চুষতে লাগলো।
উযরা তার হাত থেকে খনজরের হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে বললেন, ‘চমৎকার খেলা নিয়ে এসেছেন আপনি।
আব্দুল্লাহ্ হেসে বললেন, ‘মুজাহিদের বাচ্চার জন্য এর চাইতে ভালো খেলনা কি হবে?
‘যখন এ ধরনের খেলনা নিয়ে খেলবার সময় আসবে, তখন দেখবেন, ইনশাঅল্লাহ খারাপ খেলোয়ার হবে না ও।
উযরা, ওর নাম কি?