১. প্রতিদিন আমি বাঁচার মতোই বাঁচতে চাইতাম–সব কিছুরই তাই শেষ দেখতে চাইতাম।
২. যখনই কোনোরকম অবসাদে ভেঙে পড়তাম …সেই সময় ডেভিড অ্যালেক উইলসনের প্রেরণাদায়ক ‘কার্লাইলের জীবনী’ …বইয়ে এমনই মশুগুল হয়ে পড়তাম যে আমার সমস্ত দুশ্চিন্তার কথাই ভুলে যেতাম।
৩. যখনই কোনো কারণে মন ভালো থাকত না তখন শারীরিক পরিশ্রমের খেলায় অংশ নিতাম।
৪. কাজ করতে করতে বিশ্রাম নেয়াই আমার নীতি। এতেই আমার সব অবসাদ কেটে যায়।
৫. আমি সবসময় সমস্যাকে তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করতে চাই। দুমাস পরে যখন এ ব্যাপারে নিয়ে ভাবতে হবে তখন এই মুহূর্তে তা নিয়ে ভাবব কেন?
এবার আর. ভি. সি. বড়লের উদ্ধৃতি দিচ্ছি :
১৯১৮ সালে পৃথিবীর সবকিছুকেই আমি এড়িয়ে চলতে আরম্ভ করেছিলাম। এইসময় আমি আমেরিকা ছেড়ে চলে যাই পশ্চিম আফ্রিকায়, আর সেখানে গিয়ে আরবদের মধ্যে বাস করতে শুরু করি । সেখানে বাস করি প্রায় সাত বছর। থাকতে থাকতে ওখানকার যাযাবর মানুষদের ভাষাও আমি আয়ত্ত করে নিই। শুধু তাই নয়, তাদের পোশাকও পরতে আরম্ভ করি। তাদের মতো খাদ্যাভ্যাসও গড়ে তুলে তাদের জীবনধারণের নিয়মও মানতে থাকি। গত বিংশ শতাব্দী ধরে ওদের জীবনধারার কণামাত্রও পরিবর্তন ঘটে নি। ভেড়ার পালের মালিক হয়ে আমি ওদেরই মতো তাঁবুর মধ্যে মেঝেয় শুয়ে রাত কাটাতাম। বেশ মনোযোগ দিয়ে আমি দিয়ে ওদের ধর্মও লক্ষ করতে থাকি। এরপর আমি একটা বইও এ–সম্পর্কে লিখে ফেলি। বইয়ের নাম দি মেসেঞ্জার।
আমার বলতে কোনো বাধা নেই যে, ওই সাতটা বছরই হল আমার জীবনের সবচেয়ে শান্তিময় আর নিরবচ্ছিন্ন আনন্দের দিন।
আমার জীবনে বেশ ভালোরকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ ইতোমধ্যেই ঘটেছিল। আমার জন্ম প্যারি শহরে। আমার বাবা মা ইংরাজ। ফ্রান্সে আমি প্রায় নয় বছর বাস করেছিলাম। এরপর আমি ইটনে পড়াশোনা করি, পরে স্যান্ডহারে সেনা কলেজে। এরপর ব্রিটিশ সেনাদলের একজন সামরিক অফিসার হিসেবে আমি ভারতে যাই। ভারতে গিয়ে পোলো খেলে, শিকার করে, হিমালয় পর্বতের আনাচে কানাচে ঘুরে বেশ ভালভাবেই আমার সময় কেটেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণও আমি করি তারপর প্যারির শান্তি আলোচনাতে সামরিক অ্যাটাশে হয়ে অংশ নিই। সেখানে যা দেখি তাতে নিদারুণ আঘাত পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে যাই। চার চারটি বছর ধরে পশ্চিমী রণাঙ্গনে কশাই খানার মতো হত্যাকাণ্ড চালানোর পর মনে করেছিলাম মানষ বুঝি সভ্যতাকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করতে চাইছে। কিন্তু প্যারির শান্তি আলোচনায়। আমি দেখলাম স্বার্থপর মানুষ আর তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারা কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করে চলেছিলেন–প্রত্যেক দেশ তাদের নিজেদের স্বার্থে ঘা পড়ছিল তাই দখল করে চলেছিল। এই জঘন্য কাজের ফলশ্রুতিতে জন্ম নিতে চলেছিল জাতীয় বিরোধিতা আর গোপন কুটনৈতিক চাল এবং ষড়যন্ত্র।
যুদ্ধ, সেনাবাহিনী, সমাজ সবকিছুতেই আমার ঘৃণা জমে গেল। জীবনে এই প্রথম আমাকে নিদাবিহীন রাত কাটাতে হল, কী করব আমি ঠিক করে উঠতে পারলাম না। লয়েড জর্জ আমাকে বললেন রাজনীতি করতে। তাঁর উপদেশ অনুযায়ী কাজকরব ভাবার সময়েই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। আর ঠিক তারই ফলে পরের সাত বছরের জন্য আমার জীবনটাই বদলে গেল। উড লরেন্স অর্থাৎ লরেন্স অব অ্যারবিয়ার সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের কথাতেই সেটা ঘটে গেল। লরেন্স প্রথম বিশ্বয় করে, আশ্চর্য প্রতীক। আরব দেশেই তার কাজ আর জীবন কেটেছে। তিনি আমাকেও তাই করতে বললেন,
যাই হোক আমি সেনাবাহিনী ত্যাগ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। অন্য কেউ তো আমায় নোবে না, তাই লরেন্সের কথা মতই আরব দেশে চলে গেলাম আর ওদের মধ্যেই জীবন কাটাতে চাইলাম। ওরা জীবনকে সর্ব শক্তিমানের নির্দেশ বলেই ভাবে অযথা দুশ্চিন্তা করে না। আমাকে ওরা তাই করতে বলল। তবে বিপদের সময় তারা সাহসের সঙ্গেই তাকে মোকাবিলা করে। একবার সাহারায় প্রচণ্ড ঝাতেও তাই হয়। প্রচণ্ড সেই ঝাতেও তারা হাল ছাড়েনি। বহু ভেড়া মারা যায় তাদের, তবুও তারা ভেঙে পড়ে নি।
আর একবার মোটরে মরুভূমি পার হওয়ার সময় দেখা যায় তেল কম নেওয়া হয়েছে। আমি শঙ্কিত হয়ে উঠি কিন্তু আরবরা বলে ওঠে, ভয় পেও না, এটাই সর্ব শক্তিমানের ইচ্ছা। যা হওয়ার তাই হবে। এরপর আমাদের হেঁটে ফিরতে হয় কিন্তু ওরা ভেঙে পড়েনি। গান গাইতে গাইতেই সকলে দীঘ ওই মরুপথ অতিক্রম করে।
যে সাত বছর আমি সাহারায় ওদের সঙ্গে কাটাই সেই সময়ই আমার জীবনের সেরা সময়। যতদিন আমি সেখানে ছিলাম আমার কোন দুশ্চিন্তাই ছিল না। অনেকে বলেন দুর্ভাগ্যকে মেনে নেওয়া দুর্বলতা। হয়তো তাই, বা তাই নয়। তবে আমার জীবনেই আমি উপলব্ধি করেছি যে হাজার ওষুধ খেয়েও যে অবস্থা আমি পাইনি, সাত বছর সাহারায় থেকে আমি তাই পেয়েছি।