অভিনেত্রী জেনেট ম্যাগডোনাল্ড আমায় বলেছিলেন যে তাঁর মনে যখন অবসাদ নামত তখন দুশ্চিন্তার তাঁর ঘুম আসতো না। সে সময় বাইবেল পাঠ করে তিনি নিরাপত্তা বোধ করতেন।
কিন্তু আপনি যদি ধার্মিক না হন আর কঠিন ভাবেই জীবন কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে শারীরিক উপায় নিন। তাঁর মত হল শরীরের সঙ্গে কথা বলা। সব রকম সম্মোহনের গোড়ার কথাই হল কথা বলা। যখন আপনি অনেকদিন ধরে ঘুমোতে পারেন না তখন মনে হয় আপনি নিজেই আন্দ্রাজানত রোগটি এনেছেন। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনার একমাত্র পথ হল এই সম্মোহন থেকে নিজেকে মুক্ত করা। নিজের দেহের পেশীদের বলে আপনি কাজ উদ্ধার করতে পারেন। আমরা জানি যে আমাদের মনও স্নায় পেশীগুলোর কাঠিন্য হেতু সহজ হতে পারে না। তাই ঘুমের জন্য আমাদের পেশাগুলোকে সহজ করতে হবে। ডঃ ফিঙ্ক বলেছেন, কতগুলো বালিশ হাঁটু–এবং হাতের তলায় রেখে পাগুলো। সোজাসুজি করে আমাদের হাত, পা, চোখ এবং পেশীগুলো সহজ হতে অভ্যস্ত করতে পারলে খুব শীঘ্রই ঘুমিয়ে পড়া সম্ভব হয়। ঠিক এইভাবে অভ্যাস করে আমি ভাল ফল পেয়েছি।
অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় হল নিজেকে বাগান করা। টেনিস, সাঁতার, গলফ ইত্যাদি খেলার মধ্য দিয়ে নিজেকে ক্লান্ত করে তোলা। ঠিক এই রকমই করতেন থিয়োডোর ড্রেজার । লেখক হিসেবে যখন তিনি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন অনিদ্রার কথা ভেবে তিনি দুশ্চিন্তা করতেন। তারপর তিনি নিউইয়র্কের রেলে কাজ নিয়ে এমন পরিশ্রম করতেন যে ক্লান্তিতে ভালো করে খাওয়ারও সময় পেতেন না।
আমরা যদি যথেষ্ট ক্লান্ত থাকি তাহলে প্রকৃতিই হাঁটার ফাঁকেও আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দেবে। একটা উদাহরণ দিই, আমার যখন তেরো বছর বয়স আমার বাবা একটি গাড়ী ভর্তি শুয়োর মিসৌরির সেন্ট জো শহরে চালান করেছিলেন। তিনি দুটো রেলের পাস পাওয়াতে আমাকে সাথে নিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত আমি কোন চার হাজার লোকের বড় শহর দেখিনি। যখন আমি ষাট হাজার লোকের সেন্ট জো শহরে নামলাম তখন বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। ছ–তলা উঁচু বিশাল বাড়ি এবং মোটর গাড়ী দেখে আমি অবাক হয়ে ছিলাম। এখনও আমি মানসচক্ষে সেই গাড়ি এবং তার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। সেই দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ও রোমাঞ্চকর দিন। তারপর বাবা এবং আমি ট্রেনে করে মিসৌরির রেভেনউডে ফিরে আসি। রাত দুটোর সময় স্টেশনে নেমে চার মাইল হেঁটে আমার খামারে পৌঁছাই। এটাই হল গল্পের আসল সত্য : আমি তখন এমন ক্লান্ত হই যে,হাঁটবার সময় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম, যেন আমি চলতি কোন ঘোড়ার পিঠে বসেই ঘুমিয়েছি। আর এখনও আমি বেঁচে আছি।
মানুষ যখন প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকে তারা বজ্রপাতের শব্দেও ঘুমিয়ে পড়বে। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ ফস্টার কেনেডি আমায় বলেছেন ১৯১৮ সালে পঞ্চম বৃটিশ বাহিনী যখন পশ্চাৎপসরণ করে, তখন তিনি দেখেছেন সৈন্যরা ক্লান্ত হয়ে চলতে চলতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তাদের চোখের পাতা টেনে দেখা গেছে তাদের কোনসাড়া নেই, চোখের মণি উপর দিকে উঠে আছে। ডঃ কেনেডি বলেন, তারপর যখন আমার ঘুমের ব্যাঘাত হত, তখন আমার চোখের মণিকে ঠিক সেই অবস্থায় আনতে চেষ্টা করতাম এবং কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই হাই উঠে ঘুম আসতো। এর ওপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকতো না।
কোন মানুষ না ঘুমিয়ে আত্মহত্যায় সমর্থ হয়নি, কেউ পারবেও না। একটি মানুষের যতই মানসিক শক্তি থাক ঘুমুতে তাকে হবেই। প্রকৃতি আমাদের খাদ্য বা জল ছাড়া যতদিন বাঁচতে দেয়, না ঘুমিয়ে তার চেয়ে ঢের কম দিনই দেয়।
আত্মহত্যা প্রসঙ্গে আমার একটি কথা মনে করিয়ে দেয়, ডঃ হেনরি লিঙ্ক তার মানবের পুনরাবিষ্কার বইতে বলেছেন; একজন রুগী আত্মহত্যা করতে চাইছিল, ডঃ লিঙ্ক বুঝলেন কোন রকম উপদেশে কাজ হবে না। তারপর তিনি সেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষটিকে বলেছিলেন যদি আত্মহত্যা করতে চাও তাহলে বীরের মতই তা করার চেষ্টা কর। বাড়ির চারদিকে দৌড়তে থাক যতক্ষণ না পড়ে মারা যাও।
লোকটা তাই করে, আর একবার নয় যতবার করে ততবারই ভালো লাগতে থাকে। ডঃ লিঙ্ক যা চাইছিলেন, ততীয় রাত্রে লোকটি শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সে এতই শান্ত হয়ে পড়ে যে ঘমিয়ে পড়তে দেরি হয় না। তারপর তিনি শরীর শিক্ষা বিভাগে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি এত ভাল আছেন যে, চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন।
অতএব অনিদ্রার দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পেতে পাঁচটি নিয়ম হল :
১. যদি ঘুম না আসে তাহলে স্যামুয়েল উইন্টারমেয়ারের মতই করুন। উঠে বই পড়ুন বা কাজ করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার ঘুম পায়।
২. মনে রাখবেন ঘুমের অভাবে কেউ মারা যায়নি। অনিদ্রার নিয়ে দুশ্চিন্তাই অনিদ্রার বেশি ক্ষতি করে।
৩. প্রার্থনার চেষ্টা করুন।
৪. শরীরকে সহজ করুন।
৫. ব্যায়াম করুন–ক্লান্ত হলে সহজেই ঘুম আসবে।
২৯. টাকার দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়
সকলের অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় যদি আমার জানা থাকত তাহলে এ বই লিখতাম না। আমি তাহলে বসে থাকতাম হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের পাশে। তবে একটা কাজ আমি করতে পারি : এ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করতে পারি আর কিছু বইয়ের নাম করতে পারি।