বেশ ক’বছর আগে আর একজন তরুণও তার কাজ নিয়ে একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হয়েছিল। তার কাজ ছিল কারখানার লেদ মেসিনে বল্ট তৈরি করা। ছেলেটির নাম ছিলো শ্যাম। কাজ ভালো লাগতো না বলেই শ্যাম কাজ ছেড়ে পালাতে চাইত, কিন্তু তার ভয় ছিল অন্য কাজ যদি না পায়। কাজটা তাই করে যেতে হবে বলেই শ্যাম ঠিক করলো কাজকে আনন্দময় করে তুলতে হবে এই ভেবেই সে তার পাশের মেসিন চালকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল। দুজনে পাল্লা দিয়ে বল্ট বানাতে আরম্ভ করলো। দুজনে দেখতে কে বেশি বানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা ফোরম্যানের নজরে পড়লো। তিনি শ্যামের কাজের গতিতে দারুণ খুশি হয়ে তাকে আরও ভালো কাজে লাগালেন। এই হলো পরপর কতকগুলো পদোন্নতির শুরু। ত্রিশ বছর পরে, শ্যাম–স্যামুয়েল ভকলেন–হলেন বণ্ডুইন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের প্রেসিডেন্ট। তিনি সারা জীবন ধরেই ওই মেকানিক থেকে যেতেন যদি না নিজের কাজকে আনন্দময় করে তুলতে চাইতেন।
বিখ্যাত বেতার সংবাদ ঘোষক এইচ. ভি. ক্যাপ্টেনবর্ণ একবার আমাকে বলেন কিভাবে তিনি নীরস একটা কাজকে আনন্দময় করে তোলেন। তার বাইশ বছর বয়সের সময় তিনি জাহাজে আতলান্টিক পাড়ি দেন। কিছু গবাদি পশুর তদারকির কাজ করেন। বাইসাইকেলে ইংল্যাণ্ড পরিক্রমার পর প্যারি শহরে পৌঁছন ক্যাপ্টেনবর্ণ। নিজের ক্যামেরা মাত্র পাঁচ ডলারে বাঁধা রেখে তিনি প্যারির সংস্করণ নিউইয়র্ক হেরাল্ডে একটা কাজের আবেদন করে বিজ্ঞাপন দেন। কাজও একটা জুটে যায়–ছবি দেখার ষ্টিরিওস্কোপ মেসিন বিক্রির। মেশিনের কথাটা বয়স্ক মানুষেরা সবাই জানেন দুটো ছবি ঘোরাতে থাকলে একটা হয়ে ত্রিস্তর ছবি হয়ে ওঠে।
ক্যাপ্টেনবর্ণ শেষ পর্যন্ত ওই মেসিন প্যারীর দরজায় ঘুরে বিক্রী করতে আরম্ভ করলেন–অসুবিধাও ছিলো কারণ ফরাসীতে তিনি কথা বলতে পারতেন না। তা সত্বেও কিন্তু তিনি প্রথম বছরেই পাঁচ হাজার ডলার কমিশন পেয়ে সে বছরে ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি আয়ের বিক্রেতা হয়ে উঠলেন। ক্যাপ্টেনবর্ণ আমায় জানিয়ে ছিলেন এমন কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব হয়েছিল একটা মাত্র কারণেই–আর সেটা হলো আত্মবিশ্বাস। হার্ভার্ডে এক বছর পড়াশুনা করার ফলেই এই আত্মবিশ্বাস তার মধ্যে জন্ম নেয়।
তাহলে ফরাসি ভাষা না জানা সত্বেও এ আত্মবিশ্বাস তাঁর এল কি করে? আসলে কিভাবে বিক্রীর সময় কথাগুলো বলতে হবে সেটা তাঁর নিয়োগকর্তা চোস্ত ফরাসীতে তাকে লিখে দেয়ার পর তিনি সেটা মুখস্থ করে রাখেন। কোন বাড়ির দরজায় ঘন্টা বাজিয়ে দিতে গৃহকত্রী দরজা খুললে, ক্যাপ্টেনবর্ণ সুন্দর উচ্চারণে সেই মুখস্থ করা ফরাসিতে কথা বলে মেশিনটা ইঙ্গিত করতেন আর ছবিও দেখাতেন।
গৃহকর্ত্রী বাড়তি প্রশ্ন করলে তিনি শুধু টুপি তুলে বলতেন আমেরিকান…আমেরিকান আর সঙ্গে লেখা সেই ফরাসী লেখাও দেখিয়ে দিতেন। গৃহকত্রীরা আমোদ পেয়ে হাসতেন আর তার কাজও সমাধা হয়ে যেত। ক্যাপ্টেনবর্ণ নিজেই স্বীকার করেছেন কাজটা আদৌ সহজ ছিলো না। তাহলে তার সাফল্যের কারণ কি? একটাই–নিজের কাজ সমাধা করার অদম্য উৎসাহ আর আনন্দময় করে তোলা। প্রতিদিন সকালে বাইরে বেরোনোর আগে তিনি একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতেন : ক্যাপ্টেনবর্ণ, যদি খেতে চাও তাহলে একাজ তোমাকে করতেই হবে। আর করতে যখন হবেই তখন আনন্দেই সেকাজ করোনা কেন? নিজেকে কোন অভিনেতা ভেবে নাও আর মনে কর কোন মজাদার চরিত্রের অভিনয় করছো।
মিঃ ক্যাপ্টেনবর্ণ নিজে আমায় বলেছেন প্রতিদিনের ওই স্বগতোক্তি তাকে যে কাজ একদিন ঘৃণা করতো তাতেই সফল হতে সাহায্য করেছে। আমেরিকান তরুণদের কাছে তার পরামর্শ হলো, প্রতিদিন কাজে নামা চাই। শারীরিক ব্যায়ামের মতো আমাদের দরকার মানসিক কিছু ব্যায়ামও। তাই প্রতিদিন কিছু স্বগতোক্তি করা ভালো।
এটা কি কোন হাস্যকর ব্যাপার? মোটেই না। এটা সম্পূর্ণ মনোবিদ্যার ব্যাপার। আমাদের জীবন হলো আমাদের মন যা তৈরি করে, আমরা ঠিক তাই। ঠিক মত চিন্তার মধ্য দিয়েই যে কোন কাজ আপনি কম নীরস করে তুলতে পারেন। শুধু ভাবতে চেষ্টা করুন কাজকে আনন্দময় করে তুলতে পারলে তার বদলে কি পাবেন আপনি। একবার ভাবুন এতে আপনার জীবনের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে উঠতে পারে কারণ আপনি আপনার জাগ্রত থাকার সময়ের শুধু অর্ধেকটাই কাজে ব্যয় করেন। মনে রাখার চেষ্টা করুন। আপনার কাজকে আনন্দময় করে তুললে তাতে পদোন্নতি বা আয়বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। আর তা না হলেও অন্তত আপনার দৈনন্দিন অবসাদ দূর হয়ে আনন্দের পরশ পেতে পারেন।
২৮. অনিদ্রার প্রতিকার
অনিদ্রার জন্য আপনার কি দুশ্চিন্তা হয়? তাহলে একথা জানতে আপনার হয়তো আগ্রহ জাগবে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ স্যামুয়েল উইন্টারমেয়ার জীবনে কখনও ভাল করে ঘুমোন নি।
স্যাম উইন্টারমেয়ার যখন কলেজে ঢোকেন তাঁর দুটো রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল–হাঁপানি আর অনিদ্রা। দুটোর কোনটাই তিনি সারাতে পারেন নি তাই তিনি ঠিক করেন জেগে থাকার ভালো সুযোগটাই নেবেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে তিনি পড়াশোনা করবেন ভাবলেন। ফল কি হয়? তিনি সব ক্লাসেই সম্মান লাভ করলেন আর নিউইয়র্কের কলেজের বিখ্যাত বালক পণ্ডিত হয়ে ওঠেন।