দ্বিতীয় ভালো কাজের অভ্যাস; গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলি শেষ করুন।
রাজ্য জোড়া সিটিজ সার্ভিস কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা হেনরি এল, হার্টি একবার বলেন যে, যত মাইনেই তিনি দেন না কেন দুটো জিনিস লোকেদের কাছ থেকে পাওয়া তিনি অসম্ভব বলেই দেখেছেন।
সেই দুটি অমূল্য ক্ষমতা হলো : প্রথমটি, চিন্তা করার ক্ষমতা। দ্বিতীয়টি, গুরুত্বের ক্রম অনুসারে কাজ করার ক্ষমতা।
সামান্য অবস্থা থেকে মাত্র বারো বছরে ক্ষমতার শিখরে উঠে পেপসোডেন্ট কোম্পানীর প্রেসিডেন্ট হন যে ছেলেটি তার নাম চার্লস্ লাকম্যান। তিনি আয় করেছেন বছরে কয়েক লক্ষ টাকা আর জীবনে এছাড়াও করেছিলেন বহু লক্ষ টাকা। তিনি জানিয়েছিলেন যে হেনরি এল, ডুহার্টি যে দুটো গুণ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব বলে ভেবেছিলেন সেই দুটি গুণের প্রতিই তাঁর সাফল্যের জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানাতে চান। চার্লস লাকম্যান লেখেন : যতদূর আমার মনে পড়ে আমি ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে পড়তাম কারণ তখনই আমি অন্য সময়ের চেয়ে ভালো ভাবে চিন্তা করতে পারতাম। তখন ভালো ভাবে চিন্তা করে আমার সারাদিনের পরিকল্পনা করতে পারতাম আর কাজের গুরুত্ব অনুসারে কাজের ব্যবস্থা করতাম।
আমেরিকার সবচেয়ে সফল বীমার সেল্সম্যান ফ্রাঙ্ক বেটজার সারাদিনের কাজ করার পরিকল্পনা ভোর পাঁচটার পরে আদৌ করতেন না। আগের রাতেই তিনি তাঁর পরিকল্পনা ছক তৈরি করতেন–নিজের কাজের একটা সীমাও ঠিক করে রাখতেন–সীমা হলো পরের দিন আনুমানিক কত টাকার বীমা করাতে পারবেন। সেটা যদি করতে না পারতেন তাহলে টাকাটা পরের দিন যোগ করে নেন–এইভাবেই চলে।
.
আমি আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে জানি কারও পক্ষে কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী সবসময় কাজ করা সম্ভব হয় না, তবে আমি এটাও জানি যে প্রথম কাজ প্রথমে করার একটা কোন পরিকল্পনা করে রাখাও ভালো। আর সেই কাজ করতে করতে এগিয়ে চলা সবচেয়ে ভালো উপায়।
জর্জ বার্নার্ড শ যদি আগের কাজ আগে করার ব্রত না নিতেন, তাহলে হয়তো লেখক হিসেবে তিনি ব্যর্থই হতেন, এবং সারাজীবন একজন ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার হয়েই কাটাতেন। তাঁর প্রতিজ্ঞা ছিলো প্রতিদিন অন্তত পাঁচ পাতা লেখা। এই হৃদয়বিদারক পরিকল্পনা তাঁকে প্রায় নটা বছর ধরে দৈনিক পাঁচ পাতা করে লেখার প্রেরণা যুগিয়ে ছিলো, যদিও ওই নটা বছরে তিনি মাত্র ত্রিশ ডলার রোজগার করতে পেরেছিলেন–রোজ মাত্র এক পেনি। এমন কি রবিনসন ক্রুশোও রোজ কি করবেন তার একটা কার্যক্রম বানিয়ে রাখতেন।
তিন নম্বর ভালো কাজ করার অভ্যাস, কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে সঙ্গে সঙ্গেই সমস্যার সমাধান করুন, যদি প্রয়োজনীয় তথ্য পান অযথা ঝুলিয়ে রাখবেন না।
আমার একজন প্রাক্তন ছাত্র, এইচ. পি. হাওয়েল আমায় বলেছিলেন যে তিনি যখন আমেরিকার বোর্ড অব ষ্টীলের ডাইরেক্টর বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন তখন ওই বোর্ডের সভা বেশ সময় নিয়ে চলতো–অনেক সমস্যার আলোচনা হতো কিন্তু খুব কম সমস্যারই নিশ্চিত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। ফল কি হতো? বোর্ডের প্রত্যেক সদস্য গোছা গোছা কাগজ বাড়ি নিয়ে যেতেন পড়ার জন্য।
এ শেষ পর্যন্ত মিঃ হাওয়েল বোর্ডের ডাইরেক্টরদের রাজি করালেন এক এক সময় একটা করে সমস্যা নিয়ে আলোচনা এবং তার সমাধান করতে। কোন দীর্ঘসূত্রতা বা ফেলে রাখা চলবে না। হয়তো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হ’ল সমস্যাটি সমাধান করবার জন্য আরও বেশী তথ্যের প্রয়োজন। সমস্যার সমাধান নানা রকম হতে পারে–কিছু করা অথবা না করা, কিন্তু নিশ্চিত কোন সিদ্ধান্তে অবশ্যই আসতে হবে। তবে পরের কাজটি গ্রহণ করার আগে একটা সমাধান করতেই হবে। মিঃ হাওয়েল জানিয়েছেন এর ফলে যা ঘটলো তা অবিশ্বাস্য আর কোন কাজই বাকি থাকেনি। সব কিছুই পরিষ্কার। কোন সদস্যকেই আর কাগজের তাড়া নিয়ে বাড়ি যেতে হয়নি। আর কখনও অসমাপ্ত কিছু প্রস্তাব পড়েও থাকেনি।
আমেরিকার স্টীল দপ্তরের জন্যই শুধু ঐ নীতি নয়, এটা আপনার বা আমার জন্যেও এই নিয়ম প্রয়োগ করতে পারি।
ভালো কাজের চার নম্বর অভ্যাস :
বহু ব্যবসায়ী অকাল মৃত্যুর মুখোমুখি হন, কারণ তারা অন্য কাউকে কোন রকম দায়িত্ব না দিয়ে সব কিছুই নিজে করতে চান। এর ফলাফল কেমন হয়? ছোটোখাটো সব কিছু এবং গণ্ডগোল তাঁকে পাগল করে ছাড়ে। তার ভাগ্যে জোটে ছুটোছুটি, চিন্তা, উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা। দায়িত্ব অন্যের হাতে দেওয়ার কাজটা শেখা বেশ শক্ত। এটা আমর ভালোই জানা আছে। আমার পক্ষে কাজটা অত্যন্ত কঠিন মনে হয়েছিল। আমার অভিজ্ঞতায় আমি আরও জানি, ভুল মানুষের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে কি ভয়ানক সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে। তবুও দায়িত্ব দেওয়া কঠিন হলেও দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ আর ক্লান্তির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বড় পদে আসীন কাউকে এটা দিতেই হবে।
যে মানুষ বিরাট ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন অথচ সংগঠনের কাজ, দায়িত্ব দান আর পর্যবেক্ষণ জানেন না তিনি সাধারণতঃ পঞ্চাশে বা ষাটের কোঠায় পৌঁছে হৃৎপিণ্ডের গোলমালে ভোগেন–যে হৃৎপিণ্ডের গোলমাল উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তাতেই হয়। কোন জ্বলন্ত উদাহরণ চাইছেন? বেশ, তাহলে স্থানীয় সংবাদপত্রে শোকসংবাদ কলমে চোখ বুলিয়ে দেখুন।
২৭. একঘেয়েমি জনিত অবসাদ ও উদ্বেগ কাটানোর উপায়
অবসাদের অন্যতম প্রধান কারণই হলো একঘেঁয়েমি। উদাহরণ হিসেবে একজনকে হাজির করতে দিন। ধরুন এলিসের কথাটাই। আপনারই বাড়ির কাছে সে থাকে। পেশায় সে স্টেনোগ্রাফার। একরাতে সে বাড়ি ফিরলো অবসাদে প্রায় ভেঙে পড়ে মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে। মায়ের অনুরোধে সে খেতে বসল কিন্তু খেতে পারলো না। তখনই টেলিফোন বেজে উঠলো। ওর এক বয় ফ্রেন্ড ফোন করছিল! সে নাচের আসরে যেতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আনন্দে চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল এলিসের। ওর মন চনমনে হয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি উপরে গিয়ে পোশাক পালটে ও ছুটল। এরপর রাত তিনটে পর্যন্ত নাচ গান করে বাড়ি ফিরলো এলিস–ক্লান্তির কোন চিহ্নই ছিলো না। ওর এমন আনন্দ হচ্ছিল যে ঘুম আসছিল না।