শিকাগো আর নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের প্রেসিডেন্ট রোল্যাণ্ড এল, উইলিয়ামস্ বলেন : কোন মানুষ যদি সহজে কাজ করতে চান তাহলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ফাঁইলপত্র ছাড়া তার টেবিলে জমা বাকি সব কাগজ সরিয়ে ফেলাই উচিত। আমি একে এক নম্বর ভালো কাজ করার পথ বলে মনে করি আর এটা সবচেয়ে সেরা যোগ্যতার মাপকাঠি।
আপনি যদি ওয়াশিংটন ডি. সি–র লাইব্রেরী অব কংগ্রেসে কখনও বেড়াতে যান তাহলে ছাদের নিচে কবি পোপের লেখা এই কটি কথা লেখা আছে দেখতে পাবেন :
“নিয়মানুবর্তিতাই স্বর্গের প্রথম নিয়ম।”
ব্যবসা জগতেও প্রথম কানুনটি হওয়া উচিত নিয়মানুবর্তিতা। কিন্তু সত্যিই তাই কি? না, কারণ গড়পড়তা ব্যবসাদারদের টেবিল কয়েক সপ্তাহ হাত পড়েনি এমন সব কাগজপত্রে বোঝাই হয়ে থাকে। ব্যাপারটা এমনই ঘটে। একবার নিউ অর্লিন্সের একজন প্রকাশক আমায় বলেন যে তার সেক্রেটারি তার টেবিল সাফ করতে গিয়ে একটা টাইপরাইটার খুঁজে পায় সেটা নাকি দু’বছর আগে হারিয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়!
টেবিলে স্থূপীকৃত কাগজপত্র দেখলেই বিরক্তি, উত্তেজনা আর চিন্তার উদ্রেক হতে চায় কিন্তু ব্যাপারটা তার চেয়েও খারাপ। সব সময় হাজার হাজার কাজের কথা আর সেগুলো করতে সময়ের অভাব শুধু যে উত্তেজনা আর ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয় তাই নয় বরঞ্চ এটা আপনার ব্লাড প্রেসার, হার্টের রোগ আর পেটের আলসার রোগেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. জন এইচ. স্টোক্স একবার আমেরিকান জাতীয় মেডিক্যাল কনভেনশানের সামনে একটা প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন–নাম ছিলো জৈবিক রোগের জটিলতার আসল কারণ। ওই প্রবন্ধে ডঃ স্টোক্স এগারোটি অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথমটা ছিলো এই রকম :
বাধ্যতামূলক কিছু করার ধারনা : সামনের অফুরন্ত কর্তব্য যা করতেই হবে। কিন্তু এই টেবিল সাফ রাখার মত সাধারণ কাজ করে আর কোন কাজের ধারণা মাথায় নিয়ে, কেমন করে এই উচ্চচাপ দূর করে যা করতেই হবে সেটা সমাধা করা যাবে? বিখ্যাত মনোসমীক্ষক ডঃ উইলিয়াম এল, স্যাডলার কোন এক রোগীর কথা জানিয়েছেন যিনি এই সহজ পথ গ্রহণ করার ফলে প্রায় স্নায়বিক অবসাদে ভেঙ্গে পড়ার হাত থেকে রেহাই পান। ভদ্রলোক শিকাগোর কোন প্রতিষ্ঠানের মস্ত একজন কর্মচারি। তিনি যখন ডঃ স্যাডলারের চেম্বারে আসেন তখন তিনি দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ আর স্নায়বিক দুর্বলতার শিকার হয়েছেন। তিনি জানতেন তাঁকে শিগগিরই মাটিতে পড়তে হতে পারে, কিন্তু কাজ ছেড়ে দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তাঁর তাই সাহায্যের দরকার ছিলো।
ভদ্রলোক যখন তার নিজের কাহিনী শোনাচ্ছিলেন, ড. স্যাডলার জানিয়েছিলেন : তখনই আমার টেলিফোন বেজে উঠল। ফোন এসেছিলো। হাসপাতাল থেকে। দেরী না করে আমি সে সম্বন্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবার বন্দোবস্ত করলাম। পারলে আমি সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শেষ করি। ফোনটা নামিয়ে রাখতে না রাখতেই আবার সেটা বেজে উঠলো। এবারেও জরুরি দরকার, তাই কথাবার্তা বলতে সময় লাগলো। তৃতীয়বার বাধা পেলাম আমার এক সহকর্মী যখন মারাত্মক রুগ্ন এক রোগীর জন্য পরামর্শ চাইতে এলেন। তাকে বিদায় দিয়ে যখন অপেক্ষারত ভদ্রলোকের কাছে এসে দেরী করিয়ে দেওয়ার জন্য মাপ চাইলাম, ভদ্রলোক উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন। তাঁর চোখে মুখে সম্পূর্ণ আলাদা অভিব্যক্তি দেখতে পেলাম।
মাপ চাইবেন না, ডাক্তার! ভদ্রলোক স্যাডলারকে বললেন, গত দশ মিনিটে মনে হয় বুঝতে পেরেছি আমার গোলমালটা কোথায়। আমি অফিসে ফিরে আমার কাজের ধারা বদলে ফেলতে চাই…কিন্তু যাওয়ার আগে, আপনার কি আপত্তি আছে আমি যদি আপনার কাজের ডেস্কটা একটু দেখি?
ডঃ স্যাডলার তাঁর ডেস্কের ড্রয়ারগুলো খুলে ধরলেন। সবই খালি–শুধু সামান্য–ওষুধ পত্র ছাড়া। বলছেন কি ডাক্তার, আপনার শেষ না হওয়া কাগজপত্র কোথায় রাখেন? ভদ্রলোক জানতে চাইলেন।
সব কাজ শেষ। স্যাডলার জানালেন।
জবাব না দেওয়া চিঠিপত্র কোথায় রাখেন?
সব জবাব দেওয়া হয়ে গেছে স্যাডলার জানালেন। আমার কাজমর্কের নিয়ম হলো, উত্তর না দিয়ে কোন চিঠি আমি ফেলে রাখি না। আমি আমার সেক্রেটারিকে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চিঠির উত্তর দিই।
সপ্তাহ দুয়েক বাদে ওই ভদ্রলোক ডঃ স্যাডলারকে তার অফিসে আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি বদলে গিয়েছিলেন–আর তাঁর ডেস্কও ঠিক তাই। তিনি ডেস্কের ড্রয়ার খুলে দেখালেন শেষ হয়নি এমন কাজ জমানো নেই। ছ’ সপ্তাহ আগে আমার তিনটে ডেস্ক দুটো আলাদা অফিসে ছিল–সেগুলো কাজের ফাঁকে পর্বত প্রমাণ হয়ে উঠেছিল। কখনই কাজ শেষ করতে পারতাম না। আপনার সঙ্গে দেখা করে আসার পর ওয়াগন বোঝাই করে প্রতিবেদন আর পুরনো কাগজপত্র সরিয়ে ফেলি। আর এখন আমি কোন কাজই ফেলে রাখি না, একটা ডেস্কে বসে কাজ করে চলি, জমানো কাজে ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তা আনতে দিই না। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো আমি সম্পূর্ণ সেরে উঠেছি। আমার স্বাস্থ্যে কোন গণ্ডগোল আর নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চার্লস্ ইভান্স হিউজেস বলেন : মানুষ অতিরিক্ত কাজের ফলে মারা যায় না। তারা মারা পড়ে বিক্ষিপ্ততা আর দুশ্চিন্তার জন্যই। হ্যাঁ, কথাটা সত্যিই, তাদের শক্তির বিক্ষিপ্ততার জন্যই–আর দুশ্চিন্তার জন্য। কারণ তারা কখনই তাদের কাজ শেষ করতে পারবে ভাবতে পারেনা।