বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ভিকি ব্রাউন বলেন যে তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন কোন এক বৃদ্ধের সঙ্গে তাঁর দেখা হলে তিনি তাঁকে এমন একটা জিনিস শিখিয়ে দেন, যার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তিনি আর শোনেন নি। পড়ে গিয়ে তার হাটু ছড়ে গিয়েছিলো আর কব্জিতেও আঘাত লেগেছিল। বৃদ্ধ লোকটি তাকে তুলে ধরেছিলেন, তিনি এককালে সার্কাসের ক্লাউন ছিলেন। তার পোশাকের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বৃদ্ধ বলেছিলেন : পড়ে গিয়ে তোমার আঘাত লাগার কারণ হলো তুমি জানো না কেমন করে নমনীয় হতে হয়। তোমার ভাব দেখাতে হবে যেন তুমি পুরানো দলা পাকানো মোজার মতোই নড়বড়ে আর নরম। এসো, তোমায় শিখিয়ে দিচ্ছি কেমন করে সেটা করতে হয়। না সেই বৃদ্ধ এরপর শিশু ভিকিকে আর অন্যান্য বাচ্চাদের শিখিয়ে দেন কি করে পড়ে যেতে হয় আর কেমন করে গড়িয়ে গিয়ে ডিগবাজি খেতে হয়। বৃদ্ধ বারবার বলেছিলেন, একটা কথা সবসময় মনে রাখবে তুমি হচ্ছো পুরনো দলা পাকানো মোজা। তারপরই তোমায় নমনীয় হতে হবে।
আপনিও যখন তখন যে কোন মুহূর্তেই এই বিশ্রাম নিতে পারেন। শুধু বিশ্রাম নেওয়ার কোন চেষ্টা করবেন না। বিশ্রাম হলো সমস্ত রকম উদ্বেগ আর প্রচেষ্টার অনুপস্থিতি। সহজভাবে ভাবতে চেয়ে বিশ্রাম নিন। এটা শুরু করবেন আপনার চোখের আর মুখের পেশী নমনীয় করতে চেয়ে, সঙ্গে বারবার বলতে থাকবেন সব চলে যাক…চলে যাক,…বিশ্রাম চাই। আপনার মুখের পেশী বেয়ে অনুরণকে শরীরের অভ্যন্তরে থামতে অনুভব করতে থাকুন। শিশুর মতো সবরকম উদ্বেগ মুক্ত বলে নিজেকে ভাবতে থাকুন।
ঠিক এই রকমই করতেন বিখ্যাত গায়িকা গ্যাল্লি কুর্চি। হেলেন জেপসন নামে একজন মহিলা আমায় একবার বলেছিলেন যে তিনি কোন অনুষ্ঠানের ঠিক আগে গ্যাল্লি কুর্চিকে একটা চেয়ারে সমস্ত পেশী এলিয়ে দিয়ে বসে থাকতে দেখেছেন। তাঁর চোয়াল প্রায় মুখে পড়তো তখন। ভারি চমৎকার অভ্যাস এটা–এটা তাঁকে মঞ্চে প্রবেশের আগে সব উদ্বেগ আর স্নায়বিক দুর্বলতা মুক্ত করে দিত, এটা তার অবসাদও দূর করত।
শরীরে শিথিলতা এনে বিশ্রাম করার জন্য নিচের পাঁচটি উপদেশ মেনে চলতে পারেন :
এক। এ বিষয়ে কিছু ভালো বই পড়তে পারেন, যেমন ড. ডেভিড হ্যাঁরল্ড ফিঙ্কের স্নায়বিক উদ্বেগ থেকে মুক্তি। এছাড়াও আছে ড্যানিয়েল ডব্লিউ জোসেলিনের লেখা’ কেন ক্লান্ত হন বইখানা।
দুই। যখন তখন বিশ্রাম নিতে চেষ্টা করুন। পুরনো মোজার মত নিজেকে শিথিল করে ফেলুন। আমি আমার কাজের টেবিলে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য একটা পুরনো মোজা রেখে দিই। এ ছাড়া বিড়ালের কথাটাও মনে রাখবেন। ঘুমন্ত বিড়াল–ছানা কখনও হাতে নিয়ে দেখেছেন? তুলে নিয়ে দেখবেন কেমন তুলোর বস্তার মত লাগে। ভারতীয় যোগীরাও বলেন বিশ্রামের কৌশল আয়ত্ত করতে হলে বিড়ালের চালচলন লক্ষ্য করবেন। আমি কোনদিন অবসাদে ভেঙে পড়া বিড়াল দেখিনি।
তিন। বেশ আরাম করে বসে যতটা পারেন কাজ করবেন। মনে রাখবেন শরীরে উদ্বেগ থাকলে কাঁধ ব্যাথা হয় আর অবসাদ আসে।
চার। দিনের মধ্যে চার কি পাঁচ বার নিজেকে পরীক্ষা করুন আর নিজেকে প্রশ্ন করুন : আমি কি বেশি পরিশ্রম করছি? যে কাজে পেশীর প্রয়োজনে নেই তাতে কি তাই কাজে লাগাচ্ছি? এটা আপনাকে বিশ্রামের কৌশল আয়ত্ত করতে শেখাবে।
পাঁচ। এরপর দিনের শেষে নিজেকে আবার প্রশ্ন করুন : আমি কতখানি ক্লান্ত? আমি যদি ক্লান্ত হই সেটা আমার মানসিক কাজের বা পরিশ্রমের জন্য নয়, বরং আমি যেভাবে করেছি সেই জন্যেই। ড্যানিয়েল ডব্লিউ জোসেলিন বলেন : আমি দিনের শেষে নিজেকে প্রশ্ন করিনা আমি কতখানি ক্লান্ত বরং জানতে চাই আমি কতটা ক্লান্ত নই। আমি যখন দিনের শেষে কোনভাবে অবসাদগ্রস্ত বলে নিজেকে ভাবি বা কোনরকম বিরক্তি আসে আর বুঝি আমার স্নায়ু ক্লান্ত, তখন বুঝতে পারি ভালোভাবেই কাজটা বেশি করেই করেছি, যোগ্যতাও অভাব ছিলো। আমেরিকার ব্যবসাদারদের প্রত্যেকে যদি এটা খেয়াল রাখতেন তাহলে হয়তো উচ্চ রক্তচাপের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা ঢের কমে আসতো। এছাড়াও স্যানাটোরিয়াম আর উন্মাদাশ্রমে মানুষের সংখ্যাও কম হতো।
২৫. গৃহকর্ত্রী কীভাবে অবসাদ দূর করবেন
গত শরৎকালে আমার সহকারী বোস্টনে উড়ে গিয়ে বিচিত্র এক ডাক্তারি ক্লাসে যোগ দেয়। ডাক্তারি? বেশ, ভালো কথা। আসলে কিন্তু এটা মনস্তত্বের ক্লাস। এ ক্লাসের উদ্দেশ্য হলো যে সমস্ত মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তাদের চিকিৎসা। বেশির ভাগ রোগী হল এখানে অসুস্থ গৃহকত্রী।
এ ধরণের দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের ক্লাস শুরু হওয়ার গোড়ার কথাটা কি? শুনুন তাহলে ১৯৩০ সালে ডঃ যোশেক এইচ প্র্যাট–যিনি ডঃ উইলিয়াম অসলারের ছাত্র ছিলেন–লক্ষ্য করেন যে সমস্ত রোগী বোস্টন ডিসপেনসারীতে চিকিৎসার জন্য আসেন তাদের বেশির ভাগেরই কোন শারীরিক বৈষম্য থাকে না। এই সব রোগীদের অনেকেই নানা রকম ব্যথার কথা বলতেন। কেউ বলতেন পাকস্থলীতে ক্যান্সার হয়েছে। কেউ বলতেন পিঠে ব্যথা। অথচ ডাক্তারী পরীক্ষায় কোন রোগই ধরা পড়েনি। বহু প্রাচীনপন্থী ডাক্তারই এসব শুনে বলতেন সব রোগটাই মনের । ডঃ ভ্যাট জানতেন সকলকে রোগের কথা ভুলে বাড়ি যেতে বলা বৃথা। কারণ–ওই গৃহকত্রীরা কেউই অসুস্থ হতে চাননি। রোগের কথা ভোলা সম্ভব হলে তারা নিশ্চয়ই তাই করতেন। অতএব করণীয় কি?