দ্বিতীয় ধাপ : সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে ভাববার পর ঠিক করলাম ওই অবস্থাই মেনে নিতে হবে। নিজেকে বললাম : এই ব্যর্থতা আমার সুনামে আঘাত করবে আর চাকরিও হয়তো হারাব। তা যদি হয় অন্য কাজ পেয়ে যাব। অবস্থা তো আরও খারাপ হতে পারত, বিশেষ করে আমার নিয়োগ কর্তাদের–যাই হোক তারা তো পরীক্ষামূলকভাবে নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছিলেন, বিশ হাজার ডলার না হয় পরীক্ষার ব্যয়, এ ক্ষতি তারা সহ্য করতে পারবেন।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটা ভেবে নেওয়ার পর আমি বেশ হালকা বোধ করলাম আর মনের শান্তি ফিরে পেলাম, যা বেশ কটা দিনই ছিলো না।
তৃতীয় ধাপ : তখন থেকেই আমি শান্তভাবে আমার সময় ওই চরম যে খারাপ অবস্থাকে মেনে নিয়েছিলাম তা থেকে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা চালালাম।
এবার চেষ্টা করতে লাগলাম, যে ক্ষতি আমাদের হল সেই বিশ হাজার ডলারের চেয়ে ক্ষতিটা কতটা কম করতে পারি। নানারকম পরীক্ষা চালানোর পর দেখলাম আমার প্রতিষ্ঠান যদি আর পাঁচ হাজার ডলার বাড়তি যন্ত্রপাতির জন্য খরচ করে তা হলে সমস্যা মিটে যায়। আমরা তাই করলাম আর পনেরো হাজার ডলার বাঁচাতে সক্ষম হলাম ।
আমি সম্ভবত এটা করতে পারতাম না যদি শুধু দুশ্চিন্তাই করে যেতাম, কারণ দুশ্চিন্তা আমাদের মনঃসংযোগ নষ্ট করে দেয়। আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি তখন আমাদের মন এখানে ওখানে লাফ মেরে চলে আর আমরা মনস্থির করার শক্তি হারিয়ে ফেলি। আবার আমরা যখন খারাপ অবস্থাকে মনের দিক থেকে মেনে নিই আমরা তখন এলোমেলো চিন্তার হাত থেকে রেহাই পাই।
যে ঘটনার কথা বললাম সেটা বহু বছর আগে ঘটেছিল। সেটায় এমন চমৎকার ফল হয় যে আমি তখন থেকেই এটা কাজে লাগিয়ে চলেছি, আমার জীবনে আর দুশ্চিন্তা দেখা দেয়নি।
এখন উইলিস এইচ, ক্যারিয়ারের এই ঐন্দ্রজালিক পদ্ধতি এত মূল্যবান আর কার্যকর কেন মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে? তার কারণ দুশ্চিন্তার ধূসর কালো মেঘ আমাদের গ্রাস করলে এ তা থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারে। এ আমাদের পায়ের তলায় শক্ত মাটি দিতে পারে, আমরা কোথায় তা জানতে পারি। আমাদের পায়ের তলায় মাটি না থাকলে সমস্যার সমাধান করব কী করে?
ব্যবহারিক মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস বহুদিন মারা গেছেন। আজ তিনি বেঁচে থাকলে এবং এই নিয়মটির কথা শুনলে অবশ্যই সমর্থন করতেন।
একথা কীভাবে জানলাম? কারণ তিনি তার ছাত্রদের বলেছিলেন : যা ঘটে গেছে তাকে মেনে নাও… কারণ যা ঘটে গেছে তাকে মেনে নিলে তবেই দুর্ভাগ্য অতিক্রম করা যায়।
এই মতই আবার প্রকাশ করেছিলেন লিন ইয়াটুং তার বেচে থাকার গুরুত্ব, নামক বইটিতে। এই চীনা দার্শনিক বলেন, সত্যিকার মানসিক শান্তি আসে সবচেয়ে খারাপকে মেনে নিলে। মনস্তত্বের দিক থেকে আমি মনে করি এর অর্থ শক্তির মুক্তি।
সত্যিই তাই। কারণ সবচেয়ে খারাপকে মেনে নিলে আমাদের আর হারাবার কিছুই থাকে না। আর সঙ্গে সঙ্গে অর্থটা দাঁড়ায়–আমাদের সবটাই লাভ। উইলিস এইচ. ক্যারিয়ার বলেন, আমি এতেই মানসিক শান্তি পেয়েছি। আমি তখন থেকেই চিন্তাও করতে পেরেছি!
কথাটা ঠিকই মনে হচ্ছে, তাই না? তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন এই খারাপ অবস্থা না মেনে নিতে পেরে দুর্বিষহ করে তোলেন। তারা ভগ্নস্তূপ থেকে যেটুকু পাওয়া যায় তা গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিলেন । আপন ভাগ্যকে নতুনভাবে যা তৈরি করে তারা অভিজ্ঞতার সঙ্গে তীব্র লড়াই করেছেন–আর পরিণতিতে অবসাদে আক্রান্ত হন।
.
আর একজন কীভাবে উইলিস এইচ ক্যারিয়ারের যাদু পদ্ধতি নিজের সমস্যায় লাগানো জানতে চান? তবে শুনুন আমার একজন ছাত্র, নিউ ইয়র্কের এক তেল ব্যবসায়ীর কথা।
ছাত্রটি বলেছিল, আমাকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। সিনেমার বাইরে এটা যে সম্ভবপর–তা ভাবতে পারিনি, আমায় সত্যই ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। যা ঘটে তা এই : ওই সময় যে তেল কোম্পানির আমি প্রধান ছিলাম, তবে অনেকগুলো ডেলিভারি ট্রাক আর ড্রাইভার ছিল। সে সময় তেলের বন্টন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ছিলো আর আমরা ক্রেতাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেলই দিতে পারতাম। এ ব্যাপারটি আমি জানতাম না, ড্রাইভাররা জানত। তারা ক্রেতাদের এইভাবে কম তেল দিয়ে বাকি তেল নিজেদের লোককে বিক্রি করছিল।
বেআইনী ব্যাপারের কথাটা প্রথম জানতে পারলাম, যখন একজন লোক নিজেকে সরকারি পরিদর্শক হিসাবে পরিচয় দিয়ে এই কথা চাপা দেওয়ার জন্য টাকা চায়। লোকটার কাছে ড্রাইভারদের কীর্তির প্রমাণের কাগজপত্র ছিলো। সে আমায় ভয় দেখালো, যদি আমি টাকা দিতে রাজি না হই তাহলে ব্যাপারটা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নীর অফিসে জানিয়ে দেবে।
আমি অবশ্যই জানতাম আমার দুশ্চিন্তার কিছু নেই–অন্তত ব্যক্তিগতভাবে। তবে এও জানতাম কোন প্রতিষ্ঠান তার কর্মচারীদের কাজের জন্য দায়ী। তাছাড়া এও জানতাম ব্যাপারটা আদালতে গেলে খবরের কাগজে ছাপা হবে এবং তার ফলে আমার ব্যবসা নষ্ট করে দেবে। আমাদের ব্যবসা নিয়ে আমার গর্ব ছিলো–চব্বিশ বছর আগে আমার বাবা এটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এতই দুশ্চিন্তায় পড়লাম যে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তিন দিন তিন রাত খাওয়া বা ঘুমই হলো না। পাগলের মত ঘুরতে লাগলাম। টাকাটা কি দেওয়া উচিত–পাঁচ হাজার ডলার–না কি লোকটাকে বলে দেব যে চুলোয় যাক? দুটোর কোনটা ভেবেই কুল পেলাম না।