কয়েক সপ্তাহ পরে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে পারলাম। ছয় সপ্তাহ পরে কাজে যোগ দিতে পারলাম। বছরে বিশ হাজার ডলার আয় করেছিলাম, আর এখন যে সপ্তাহে ত্রিশ ডলার পেলাম তাতেই আমি খুশি। কাঠের টুকরো বিক্রি করাই আমার কাজ ছিলো। তবু আমি একটা শিক্ষা পেয়েছি–আর দুশ্চিন্তা নয়, অতীত নিয়ে ভাবনা নয়–যা গেছে তার জন্য দুঃখ একেবারে নয়। ভবিষ্যত নিয়েও কোন আতঙ্ক নয়। আমার সমস্ত শক্তি আর আগ্রহ দিয়ে কাঠের টুকরো বিক্রির কাজ করে চলোম।
এবার এডওয়ার্ড ইভান্স দ্রুত উন্নতি করলেন। কয়েক বছরেই তিনি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন ইভান্স প্রোডাক্টস কোম্পানি। কোনোদিন গ্রিনল্যান্ডে গেলে আপনি হয়তো ইভান্স ফিল্ডেই নামবেন–ঐ বিমান ক্ষেত্রটি তারই সম্মানে নামাঙ্কিত। এডওয়ার্ড ইভান্স এই সম্মান হয়তো পেতেন না যদি তিনি রোজকার জীবন যাপন করতেন।
হোয়াইট কুইন কি বলেছিলেন হয়তো জানেন আপনারা : গতকাল আর আগামীকালের রুটিতে মিষ্টি মাখান, কখনই আজকের রুটিতে নয়। আমরাও বেশিরভাগ এই রকম গতকাল আর আগামীকালের রুটিতে মিষ্টি মাখানোর কথা চিন্তা করি অথচ আজকের রুটিতে পুরু করে তা মাখাতে ভুলে যাই।
বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক মন্তেইনও এই ভুল করেন। তিনি বলেছিলেন; আমার জীবনে সাংঘাতিক সব দুর্ভাগ্যের ব্যাপারে পূর্ণ, যার বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটেনি। ঠিক সেইরকম আপনার আর আমারও তাই।
দান্তে বলেছিলেন, ভেবে দেখ, আজকের দিন আর আসবে না। জীবন দ্রুত এগিয়ে চলেছে অসম্ভব গতিতে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় উনিশ মাইল । আজ তাই আমাদের অশেষ মূল্যবান সম্পত্তি, এটাই আমাদের একমাত্র নিশ্চিত সম্পদ।
লাওয়েল টমাসের দর্শনও তাই। সম্প্রতি তার খামারে এক সপ্তাহ কাটিয়েছি। তার বেতার স্টুডিওতে বাইবেলের এই উদ্ধৃতিটি লেখা ছিলো, যেটা তার সব সময় নজরে পড়ত :
আজকের এই দিনটি ঈশ্বরই তৈরি করেছেন, আনন্দোৎসবের মধ্যে দিয়ে আমরা এতেই সন্তুষ্ট থাকবো।
জন রাস্কিনের টেবিলে একখণ্ড পাথরে লেখা থাকত : আজকের দিনটি। যদিও আমার টেবিলে কোন পাথরের টুকরো নেই, তবে আয়নায় একটা কবিতা আঁটা আছে যেটা দাড়ি কামাতে গিয়ে রোজই পড়ি–যে কবিতাটি স্যার উইলিয়াম অসলারও তার ডেস্কে রেখে দেন–বিখ্যাত ভারতী কবি ও নাট্যকার কালিদাসের লেখা কবিতা। কবিতাটির মর্মার্থ এই রকম :
‘আজকের জীবনই সব কিছু, এতেই রয়েছে জীবনের পরিপূর্ণতা। কারণ গতকাল তো শুধু স্বপ্ন আর আগামীকাল সে তো কল্পনা, শুধু আজকের মধ্যেই রয়েছে বেঁচে থাকার আনন্দ। আজ ভালো করে বেঁচে থাকলেই গতকালই সুখস্বপ্ন হয়ে ওঠে আর আগামীকাল হয় আশায় ভরপুর। তাই আজকের দিনকেই সানন্দে গ্রহণ কর। এই হল প্রভাত বন্দনা’।
অতএব দুশ্চিন্তা সম্পর্কে যা জানবেন আর তাকে জীবন থেকে সরিয়ে রাখতে যা করবেন তা হলো এই: অতীত আর ভবিষ্যৎকে লোহার কপাটে আবদ্ধ করে রাখুন। শুধু রোজকার জীবন যাপন করুন।
নিচের প্রশ্নগুলো নিজেকে করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন কি?
১. বর্তমানকে ছেড়ে কি ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই?
২. অতীতে যা হয়নি তা ভেবে কি অনুতাপ করি?
৩. সকালে উঠে কি চব্বিশটা ঘণ্টা কাটানোর কথাই ভাবি?
৪. আজকের জীবন কাটিয়ে কি আনন্দ আহরণ করি?
৫. কাজটা কবে শুরু করব? আগামী সপ্তাহে …কাল? …আজ?
০২. দুশ্চিন্তা কাটানোর ইন্দ্রজাল
আপনি কি দ্রুত কাজ দেয় এমন কোন দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় জানতে চান, যে কাজে লাগিয়ে এই বই পড়ার আগেই উপকার পেতে পারেন?
এটা চাইলে আসুন আপনাদের উইলিস এইচ. ক্যারিয়ারে কথা শোনাই। তিনি নিউ ইয়র্কের সিরাকিউসের পৃথিবী বিখ্যাত ক্যারিয়ার কর্পোরেশনের প্রধান। তিনি একজন দারুণ ইঞ্জিনিয়ার আর শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেন। দুশ্চিন্তা দূর করার যে গল্প তার কাছে আমি শুনেছিলাম আমার মতে সেটাই সকলের সেরা।
মিঃ ক্যারিয়ার বলেছিলেন, আমি যখন অল্প বয়সের তখন নিউ ইয়র্কের বাফেলো ফর্জ কোম্পানিতে কাজ করতাম। সে সময় লক্ষ লক্ষ ডলারের এক গ্যাস পরিস্কার যন্ত্র বসানোর জন্য কৃষ্টাল সিটির পিটসবার্গ প্লেট গ্লাস প্রতিষ্ঠানের কাজ পাই। কাজটা হলো ইঞ্জিনের ক্ষতি না করে কিভাবে গ্যাসের প্রয়োজনীয় মিশ্রণ বের করে দেয়া যায়। গ্যাস পরিষ্কারের এ পদ্ধতি ছিল নতুন। আগে মাত্র একবারই অন্য পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার হয়। আমার কাছে কৃষ্টালসিটিতে নানা অজ্ঞাত অসুবিধা দেখা দেয়। বিশেষ এক ক্ষেত্রে এটায় কাজ হল–তবে যে গ্যারান্টি দিয়েছিলাম সেভাবে হল না।
আমার ব্যর্থতায় হকবাক হয়ে গেলাম। মনে হলো কেউ যেন আমাকে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করেছে। আমার সারা শরীর গুলিয়ে উঠল। এতোই দুশ্চিন্তায় পড়লাম যে ঘুমোতে পারিনি।
শেষপর্যন্ত সাধারণ বুদ্ধিতেই বুঝলাম দুশ্চিন্তায় কোন লাভ হবে না। তাই ভাবতে লাগলাম দুশ্চিন্তা ত্যাগ করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করবো। তাতে দারুণ কাজ হল। আমি আমার এই দুশ্চিন্তাবিহীন কৌশল গত ত্রিশ বছর কাজে লাগিয়ে আসছি। খুবই সরল ব্যাপার। যে কেউ কাজে লাগাতে পারে। এতে তিনটে ধাপ আছে–
প্রথম ধাপ : আমি সব ব্যাপারটি নির্ভয়ে ভালো করে ভেবে বের করলাম, আমার বিফলতার জন্য সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে। কেউ আমাকে জেলে দেবে না বা গুলি করবে না, এটা নিশ্চিত। তবে এমন হতে পারে যে আমার চাকরি যেতে পারে, আর তা ছাড়াও কোম্পানিকে হয়তো যে মেশিন বসিয়েছি তা সরিয়ে নিতে হবে আর তাতে ক্ষতি হবে বিশ হাজার ডলার।