তাঁর বক্তব্য ছিল, বহুবছর আগে যখন প্রথম বীমা করানোর কাজ নিই, তখন কাজে প্রচুর উৎসাহ আর আনন্দ পেতাম। তারপরেই কী যেন ঘটল। আমার এমনই হতাশা এল যে কাজকে ঘৃণা করতে শুরু করে ছেড়ে দেব ভাবলাম। হয়তো ছেড়েই দিতাম যদি না এক শনিবার সকালে আমার দুশ্চিন্তার মূলে পৌঁছতে চাইতাম।
১। প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম : ‘সমস্যাটা ঠিক কি?’ সমস্যা ছিলো, আমি প্রচুর ঘুরেও আশানুযায়ী আয় হচ্ছিলো না। কোন লোককে বীমা করানোর আগে পর্যন্ত ভালোই চলতো, কিন্তু কাজ শেষ হতো না। মক্কেল হয়তো বলতো, এ নিয়ে ভেবে দেখবো মিঃ বেটগার। পরে দেখা করবেন। আমার হতাশার কারণ হলো এই পরের ঘোরাঘুরির কাজ।
২। নিজেকে প্রশ্ন করলাম : ‘এর সম্ভাব্য সমাধান কী?’ তবে এর উত্তরের জন্য আমায় তথ্যগুলো দেখতে হবে, তাই গত বারো মাসের হিসেব দেখলাম।
আমি এক আশ্চর্য আবিষ্কার করলাম। দেখলাম পরিষ্কার কালি দিয়ে লেখা শতকরা সত্তর ভাগ বিক্রির কাজ প্রথম সাক্ষাতেই হয়ে গেছে! তেইশভাগ হয়েছে দ্বিতীয় সাক্ষাতে। আর মাত্র সাতভাগ তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ইত্যাদি সাক্ষাতে হয়েছে। এতেই আমার প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছিল, আমি মাত্র শতকরা সাতভাগের জন্য আমার অর্ধেক সময় নষ্ট করছিলাম!
৩। এর জন্য কি করা দরকার? উত্তর একটাই। আমি দ্বিতীয় বারের পর সাক্ষাতকার বন্ধ করে দিলাম, বাকি সময় নতুন কাজে লাগালাম। এর ফল হলো অবিশ্বাস্য। অল্প সময়েই আমি প্রতি সাক্ষাতের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলোম!
আগেই বলেছি দ্রলোক বীমা ব্যবসার নামী ব্যক্তি, তিনি বছরে প্রায় দশ লক্ষ ডলারের মত কাজ করেন। তিনি প্রায় কাজ ছাড়তে বসেছিলেন কিন্তু নিজেকে বিশ্লেষণ করে সাফল্যের পথেই এগোলেন।
আপনিও কি আপনার ব্যবসার সমস্যা সমাধানে এই প্রশ্নগুলো কাজে লাগাতে পারেন? সেই বাজি রাখার কথাই বলছি আবার–এগুলো আপনার দুশ্চিন্তা পঞ্চাশ ভাগ কমিয়ে দিতে পারে। প্রশ্নগুলো আর
একবার শুনুন :
১। সমস্যাটা কী?
২। সমস্যার কারণ কী?
৩। সমস্যাটি সমাধানের সম্ভাব্য উপায় কী কী?
৪। কোন সমাধান আপনার পছন্দ?
.
এ বই থেকে সেরা উপকার পেতে হলে, ন’টি পরামর্শ মেনে চলুন :
১। এ বই থেকে বেশি উপকার পেতে হলে একটা প্রয়োজনীয় জিনিসই আছে–এটা যদি আপনার না থাকে তাহলে হাজার হাজার নিয়ম পড়েও কিছুই লাভ হবে না। সেই জিনিসটা কি? ঠিক এই জিনিসটাই : কিছুই না–শুধু শেখার অদম্য বাসনা এবং দুশ্চিন্তা এড়ানোর আর বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
এধরণের আকাঙক্ষার জন্ম কেমন করে দেওয়া যাবে? বারবার নিজেকে জানানো এর প্রয়োজন কতখানি। নিজের কাছে সর্বদা একটা চিত্র হাজির করতে হবে, কেমন করে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার ফলে আরও সুন্দর ও সুখী জীবন কাটানো যায়। নিজেকে বারবার বলতে হবে : আমার মানসিক শান্তি, আমার সুখ, স্বাস্থ্য এবং সম্ভবত আমার আয়, এই বইয়ের পুরনো আর সহজ চিরসত্যের শিক্ষার উপর নির্ভরশীল।
২। প্রথমেই প্রতিটি পরিচ্ছেদে একবার চোখ বুলিয়ে নিন। পরের পরিচ্ছেদ তাড়াতাড়ি পড়ার ইচ্ছে জাগতেও পারে। একমাত্র আনন্দ পাওয়ার জন্য না পড়লে সেটা করবেন না। কিন্তু যদি দুশ্চিন্তা দূর করে সুখী জীবন যাপনে অভিলাষী হন তাহলে গোড়া থেকে প্রতিটি পরিচ্ছেদ মন দিয়ে পড়ুন। শেষ পর্যন্ত তাতে সময়ের সাশ্রয় আর ভালো ফল লাভ হবে।
৩। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পড়ার বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকুন নিজেকে প্রশ্ন করে জেনে নিন প্রতিটি পরামর্শ কিভাবে কাজে লাগাতে পারেন। খরগোশের পিছনে কুকুরের দ্রুতধাবনের মতো পড়া উচিত নয়, এতে ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
৪। হাতে লালকালির কলম বা পেন্সিল রাখবেন, যখনই দেখবেন কোন পদ্ধতিকে আপনি কাজে লাগাতে পারেন, তার নিচে দাগ দিন। কেন উপদেশ খুব ভালো লাগলে চারটে তারকা চিহ্ন দিন। দাগ দিয়ে পড়লে পড়ার আগ্রহ ঢের বেড়ে যায়।
৫। একজনকে জানতাম যিনি পনেরো বছর বিরাট এক বীমা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি তার অফিসে যত বীমা করা হয় তার শর্তগুলো বারবার পড়তে চাইতেন। কেন? কেননা এতে সব শর্ত মনে রাখা সহজ হয়।
আমি সভায় বক্তৃতা করার বিষয়ে একটা বই লেখার সময় দু বছর খেটেছিলাম, তাতে দেখেছিলাম, বারবার আমায় আগের পাতাগুলো পড়তে হয়েছে যাতে নিজের বইতে কি লিখেছি মনে থাকে। আমরা যে কত দ্রুত ভুলে যাই ভাবলেও আশ্চর্য হতে হয়।
এতএব, এবই থেকে যদি চিরস্থায়ী কোন উপকার পেতে চান তাহলে ভাববেন না একবার পড়লেই যথেষ্ট। ভালো করে পড়ে ফেলার পর আপনাকে প্রতিমাসে কয়েক ঘন্টা ঝালিয়ে নেওয়া দরকার, তাই এটা ডেস্কের সামনে রেখে দেবেন। সব সময় ভাবুন আপনি ভালো করতে পারবেন। মনে রাখবেন ক্রমাগত পড়ে এটা কাজে লাগানোর মধ্য দিয়েই উন্নতি সম্ভব। আর কোন উপায় নেই।
৬। বার্নার্ড শ একবার মন্তব্য করেন : কোন লোককে কিছু শেখাতে চাইলে সে কখনই শিখবে না। শ ঠিকই বলেছিলেন। শিক্ষা হলো একটা সজীব পদ্ধতি। আমরা কাজ করার মধ্য দিয়েই শিখি। অতএব এ বই পড়ে নীতিগুলো যদি আয়ত্ব করতে চান তাহলে কিছু করতে হবে। সুযোগ পেলেই নীতিগুলো কাজে লাগান। তা না করলে অচিরেই ভুলে যাবেন। যে জ্ঞান কাজে লাগানো যায় তাই মনে গেঁথে যায়।