তাহলে গ্যালেন লিচফিল্ডের কৌশল, দুশ্চিন্তা দূর করতে কাজে লাগান না কেন? এবার প্রশ্নগুলো দেখে নিন–পেন্সিল দিয়ে নিচের ফাঁকে তা লিখে ফেলুন :
১নং প্রশ্ন : কি জন্য দুশ্চিন্তা করছি?
২নং প্রশ্ন : এ ব্যাপারে আমি কি করতে পারি?
৩নং প্রশ্ন : আমি এ ব্যাপারে যা করতে যাচ্ছি তা এই।
৪নং প্রশ্ন : কাজটা কখন শুরু করব?
০৫. ব্যবসায় অর্ধেক দুশ্চিন্তা এড়ানোর উপায়
আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে হয়তো বলবেন, এই পরিচ্ছেদের নামটা খুবই হাস্যকর। আমি উনিশ বছর ব্যবসা চালাচ্ছি, আর এর উত্তর আমি ভালোই জানি। কেউ আমায় অর্ধেক দুশ্চিন্তা দূর করার পথ বাতলে দেবে ভাবাই অসম্ভব!
কথাটায় যুক্তি আছে–কবছর আগে এই রকম একটা অধ্যায় দেখলে আমিও তাই ভাবতাম। এতে প্রচুর বড় বড় কথা আছে বড় বড় কথা মানেই সস্তা ব্যাপার, কাজের কিছুই হয় না।
খোলাখুলিই বলি তাহলে : হয়তো আমি আপনার ব্যবসার পঞ্চাশভাগ দুশ্চিন্তা দূর করে সাহায্য করতে পারব না। শেষ পর্যন্ত নিজে ছাড়া আর কেউ তা পারে না। কিন্তু আমি যা করতে পারি তা হলো অন্য মানুষেরা যা করেছে তা আপনাদের দেখাতে পারি–বাকিটা আপনার করণীয়।
আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে আগে পৃথিবী বিখ্যাত ডাক্তার অ্যালেক্সি ক্যারেলের একটা কথা বলেছি যা হলো : যে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তা কিভাবে জয় করতে হয় জানেন না, তারা অল্পবয়সে মারা যান।
দুশ্চিন্তা যেহেতু এতটাই মরাত্মক, তাই অন্তত শতকরা দশভাগ যদি তা দূর করার পথ বাতলাতে পারি তাহলে কি খুশি হবেন না?…হ্যাঁ, হবেন?…চমৎকার! বেশ, এবার এক ব্যবসার কর্তাব্যক্তির কথা বলছি যিনি তার দুশ্চিন্তা পঞ্চাশভাগ কমান নি। বরং দুশ্চিন্তা দূর করতে যে শতকরা পঁচাত্তর ভাগ সময় সভায় কাটাতেন তা কমিয়ে ছিলেন।
আমি ‘অমুক’ বা অমুকের কথা বলতে চাইনা, যাদের নাম যাচাই করা যায় না। আমি সত্যিকার একজনের বিষয় বলছি–তার নাম লিও সিমকিন। বহুদিন যাবৎ তিনি ছিলেন সাইমন অ্যাণ্ড সুষ্টার কোম্পানী নামে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আর এখন হলেন নিউ ইয়র্কে পকেট বুকের প্রেসিডেন্ট।
তার অভিজ্ঞতার বিষয় তারই কথায় শুনুন :
পনেরো বছর ধরে আমি প্রতিদিনের অর্ধেক সময় কাটাতাম ব্যবসা সংক্রান্ত সভায়, আলোচনা হত সমস্যা নিয়ে। কোনটা করা উচিত নয় কোনটা উচিত ইত্যাদি দিয়ে; না কি কিছুই করব না? আমরা উত্তেজিত হতাম, চেয়ারে ছটফট করতাম, মেঝেতে পাক খেতাম। রাত নেমে এলে সাংঘাতিক ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। ভেবেছিলাম এধরনের কিছুই হয়তো সারাজীবনই এমন করে কাটবে। পনেরো বছর ধরে এটা করে চলেছিঝলাম, আমার ধারনাই ছিলোনা এর চেয়ে কোন ভালো পথ আছে। কেউ যদি আমায় বলতো আমি আমার উদ্বেগের চার ভাগের তিন ভাগ দূর করতে পারি, তার পথও আছে, তাহলে মনে করতাম অতি আশাবাদী কথাবার্তাই সে বলছে। তা সত্ত্বেও এমন উপায় বের করলাম তাতে ওই কাজই হলো। কৌশলটা আট বছর কাজে লাগাচ্ছি আর তা আমার দক্ষতা, স্বাস্থ্য এবং সুখের ব্যাপারে অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়েছে।
এটাকে যাদুবিদ্যা বলে মনে হচ্ছে–সব যাদুর খেলার মতই কৌশলটা জানলে দেখবেন কেমন সহজ।
গোপন কথাটা হলো এই : প্রথমেই গত পনেরো বছর যে সব সভা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে কাজ করছিলাম তা বাতিল করলাম–সভায় গিয়ে ব্ৰিত সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করা কি ভুল হয়েছে। এবার কি কর্তব্য? দ্বিতীয়, একটা নতুন নিয়ম করলাম–যে কেউ আমার কাছে কোন সমস্যা হাজির করতে চাইবে তাকে প্রথমেই নিচের চারটি প্রশ্নের জবাব তৈরি করে দিতে হবে :
প্রথম প্রশ্ন : সমস্যাটি কি?
(আগে আসল সমস্যাটি কি জানার চেষ্টাতেই কয়েক ঘন্টা সময় কেটে যেত। আমরা আমাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতাম কিন্তু আসল সমস্যা কি দেখার কোন চেষ্টাই করতাম না)।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : সমস্যার কারণ কি?
(পুরনো দিনের কথা ভাবলে আমার আতঙ্ক হয়, কিভাবে কত সময় নষ্ট করেছি সমস্যার গোড়ার কারণ খুঁজে পেতে না চেয়ে।)
তৃতীয় প্রশ্ন : সমস্যাটি সমাধানের সম্ভাব্য পথ কি?
(আগে সভায় একজন হয়তো কোন সূত্র দিয়েছে, অন্যজন তাতে আপত্তি করলে সভা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কেউই কিন্তু তাদের সম্ভাব্য সমাধান লিখে ফেলার চেষ্টা করেনি)।
চতুর্থ প্রশ্ন : আপনি কিভাবে সমাধান করতে চান?
(আমি সভায় যেতাম তারই সঙ্গে, যিনি কোন সমস্যার সমাধান সম্পর্কে প্রচুর ভেবেছেন। কিন্তু একবারের জন্যও সেই সমাধান লিখে ফেলেন নি)।
আমার সহযোগীরা ক্বচিৎ সমস্যা নিয়ে আসেন। কেন? কারণ তারা জানেন ওই চারটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তাদের অবস্থা সম্পর্কে ভাবতে হয়েছে। এটা করার পর তারা দেখেছেন চারভাগের তিনভাগ ব্যাপারেই তাদের আর আমার কাছে আসার দরকার নেই। বৈদ্যুতিক টেস্টার থেকে যেমন টেস্ট বেরিয়ে আসে তাদের সমাধান তেমনি সহজ হয়। সমাধানে পৌঁছতে আগের চেয়ে এক তৃতীয়াংশই সময় লাগে কারণ চিন্তাধারা একটা সুশৃঙ্খল, যুক্তিগ্রাহ্য পথ ধরে চলে।
পকেট বুক প্রকাশভবনে এখন দুশ্চিন্তা আর বিতর্ক অনেকটাই কম। এখন ভুলগুলো সংশোধন করতে অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে।
.
আমার বন্ধু ফ্রাঙ্ক বেটগার, যিনি আমেরিকার বীমার ব্যবসায়ে উচ্চ স্থানাধিকারী আমায় বলেছেন একই পদ্ধতিতে তিনি দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমিয়ে আনেন আর আয়ত্ত করেন দ্বিগুণ।