নিগ্রো আর চীনাদের কদাচিৎ এই ধরনের দুশ্চিন্তার কারণে হৃদরোগ হয়। কারণ তারা সবকিছুই শান্তভাবে মেনে নিতে অভ্যস্ত। খামারের কৃষকদের চেয়ে ডাক্তারদের মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা বিশগুণ বেশি। ডাক্তারদের জীবন দুশ্চিন্তায় কাটে বলে তারা উচিত মূল্য পেয়ে থাকেন।
উইলিয়াম জেমস বলেছেন, ঈশ্বর আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, কিন্তু আমাদের স্নায়ু তা করে না।
একটা আশ্চর্যজনক আর প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার শুনুন, আমেরিকায় সবচেয়ে ছোঁয়াচে রোগে যত লোক মারা যায় তার চেয়ে ঢের বেশি মারা যায় আত্মহত্যা করে।
কেন এরকম হয়? এর প্রধান কারণই হল : দুশ্চিন্তা।
চীনের নিষ্ঠুর সেনাধ্যক্ষরা তাদের বন্দীদের উপর অত্যাচার চালাতে তাদের খুঁটির সঙ্গে হাত–পা বেঁধে উপরে ঝোলানো চামড়ার ব্যাগ ভর্তি জলের নিচে রাখতেন–ওই ব্যাগ থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ত মাথায়। ….অনবরত …সারা দিন রাত ধরে। ওই জলের ফোঁটাকে শেষ অবধি মনে হত যেন হাতুড়ির আঘাত–মানুষ তাতে পাগল হয়ে যেত। হিটলারের আদেশে এই একই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয় স্পেনের বন্দী নিবাস আর জার্মানির কনসেনট্রেশান শিবিরে।
দুশ্চিন্তা ও অনেকটা এই অনবরত ঝরে পড়া জলের ফোঁটার মত, আর ক্রমাগত এই দুশ্চিন্তায় মানুষ উন্মাদ হয়ে যায় আর আত্মহত্যা করতে চায়।
মিসৌরীতে আমি যখন অল্পবয়সের ছেলে তখন বিলি সানডের কাছে পরজন্মের নরকাগ্নির কথায় দারুণ ভয় পেতাম। কিন্তু এই জীবনে শরীরে যে নরকাগ্নি জ্বলছে এবং তার যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে কেউ তার কথা কখনও বলেন নি। যেমন, আপনি যদি ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করেন তাহলে একদিন হয়তো এমন বেদনায় আক্রান্ত হতে পারেন যার নাম এঞ্জাইনা পেক্টোরিস অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের ব্যাথা।
এ রোগের আক্রমণ যে যন্ত্রণায় আর্তনাদ করবেন তাতে দান্তের ‘ইনফারনো’কেও মনে হবে ছেলেমানুষী। তখন আপনি নিজেই বলতে চাইবেন, হে ঈশ্বর, এ থেকে মুক্তি পেলে আর কখনই দুশ্চিন্তা করবো না। বাড়িয়ে বলছি কিনা পারিবারিক চিকিৎসককে প্রশ্ন করুন একবার ।
আপনি কি জীবনকে ভালোবাসেন? দীর্ঘদিন সুস্থ শরীরে বাঁচতে চান? তাহলে একটা কথা শুনে নিন। আমি আবার ডঃ অ্যালেক্সি ক্যারেলের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। তিনি বলেন, যারা এই আধুনিক শহর কোলাহলের মধ্যেও অন্তরের শান্তি বজায় রাখতে পারেন তাদের স্নায়ুর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আপনি আভ্যন্তরীণ সত্তাকে এভাবে শান্তিতে রাখতে পারেন কি? আপনি একজন স্বাভাবিক মানুষ হলে এর উত্তর হলো : হ্যাঁ। বা ‘অবশ্যই’। আমরা বেশির ভাগই অনেকাংশে শক্তিশালী, যদিও আমরা তা সব সময় বুঝে উঠতে পারি না। আমাদের মধ্যে যে ক্ষমতা আছে তাকে আমরা হয়তো কখনই খুঁজে বার করে কাজে লাগাইনি। থোরো তার অমর রচনা ‘ওয়ালডেন’ নামক বইটিতে লিখেছেন : আপন জীবনকে সচেষ্টভাবে উন্নত করার শক্তির উৎসাহব্যঞ্জক কথা আমার কাছে খুবই বড় বলে মনে হয়..দঢ়তা নিয়ে কেউ যদি তার স্বপ্নের দিকে এগুতে চেষ্টা করে, আর সেরকম জীবনযাপন করতে পারে তাহলে সে সাফল্য হবে অসামান্য।
ওলগা কে, জার্ভির মতো মনের জোর আর শক্তি এই বইয়ের পাঠকের অনেকেরই অবশ্য জানা আছে। তিনি বুঝেছিলেন অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থার মধ্যেও তিনি দুশ্চিন্তা সরিয়ে রাখতে পারতেন। আপনি বা আমিও তা পিরবো, এই বইয়ে যা আলোচিত হয়েছে সেই পুরনো সত্যগুলো যদি কাজে লাগাই। ওলগা কে, জার্ভি আমাকে যা লেখেন তা এই : সাড়ে আট বছর আগে আমি দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে মরতে বসেছিলাম। দেশের বিখ্যাত ডাক্তাররাও আমার জীবনের আশা নেই বলেন। আমার সামনে আসে বিরাট এক শূন্যতা। তখন আমার বয়স অল্পই ছিল। আমি মরতে চাইনি! হতাশায় আমার ডাক্তারকে ফোন করে সব জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ি। অধৈর্যের সঙ্গে তিনি বললেন, কী ব্যাপার ওলগা, লড়াই করার মত মনের জোর তোমার নেই? কাঁদলে নিশ্চিত মরবে। হ্যাঁ, সবচেয়ে খারাপই তোমার হয়েছে। ঠিক আছে সত্যের মুখোমুখি হও। দুশ্চিন্তা ত্যাগ করো; আর কিছু একটা করো! সেই মুহূর্তেই শপথ করলাম, আর দুশ্চিন্তা করব না। আমি আর কাঁদবো না। বস্তুর চেয়ে মনের জোর যদি বেশি হয় তাহলে আমি জয়ী হবই। আমি বেঁচে থাকবো!
রেডিয়াম আর দেওয়া যাচ্ছিল না তাই রঞ্জন রশি দেওয়া হতে লাগল ৪৯ দিন ধরে রোজ সাড়ে চোদ্দ মিনিট। আমার শরীরের হাড় দেখা যাচ্ছিল, আমার পা সীসের মত ভারি হয়ে গিয়েছিল। তবুও আমি দুশ্চিন্তা করিনি। হ্যাঁ, এমনকি জোর করে হাসতেও চাইছিলাম ।
আমি এমন মূর্খ নই যে ভাববো, হাসিতে ক্যান্সার নিরাময় হয়। তবে এটা জানি আর বিশ্বাস করি মানসিক অশান্তি থাকলে রোগ নিরাময়ে সুবিধা হয় না। যাই হোক দৈবের সাহায্যে যে ক্যান্সার সারে তা উপলব্ধি করলাম। গত ক’বছরে যে স্বাস্থ্য আমার আছে তেমন সুস্থ আগে কখনও থাকিনি। সেই কথাগুলোকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না : দুশ্চিন্তা ত্যাগ করো। কিছু একটা করো!
এই পরিচ্ছেদে ইতি টানবো আবার সেই ড, অ্যালেক্সি ক্যারেলের কথা দিয়ে : যে ক্যারেল কি আপনার কথা ভাবছিলেন?
হতেও পারে।
মহম্মদের ক্ষ্যাপা শিষ্যদের মধ্যে অনেকে কোরাণের বাণী উল্কি করে বুকের উপর লিখে রাখত। তাই আমারও ইচ্ছে এই কয়টি কথা মনের একান্ত গভীরে প্রবেশ করুক। “যে সমস্ত ব্যক্তিরা দুশ্চিন্তা প্রতিরোধ করতে পারেন না তাদের আয়ু অল্প।”
০৪. দুশ্চিন্তা সমাধানের পথ
আমার ছ’জন সৎ কর্মচারী আছে। (আমি যা জানি সব তারাই শিখিয়েছে)