অন্যদিকে ট্রাক ব্যবসার মালিক লোকটির ভাষা বেশ সোজা, নিটোল আর চমৎকার ছিল। তিনি প্রাত্যহিক জীবনের উপরেই নির্ভর করে কথা বলতে চাইছিলেন। তিনি আমাদের কোন বিষয় বলতে গিয়েই তার ব্যবসায় কি ঘটেছিল সে কথার উল্লেখ করলেন। তাঁর বক্তব্য আর বাচনভঙ্গীর সজীবতা দারুণ আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছিল শ্রোতাদের মনে।
আমি এ কাহিনীর উল্লেখ এজন্য করছি না যে কলেজীয় অধ্যাপক বা ট্রাক ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে এটা কোন বিশেষ ব্যাপার। আমার এ কাহিনী উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল শ্রোতাদের আকর্ষণ করার কাজে উদাহরণ সম্পন্ন বক্তব্য কেমন কাজ দেয় তাই বোঝাতে।
শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে বক্তব্যের বিষয়বস্তু তৈরি করতে যদি এই চারটি ধাপ তৈরি করতে পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে বলতে পারি শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবেনই।
১. আপনার বক্তব্য বিষয় সীমায়িত রাখুন
আপনার বক্তব্যের বিষয় যখন ঠিক মনস্থ করা হয়ে যাবে, তখন আপনাকে যা করতে হবে তা হল কতখানি কি বলবেন তা ঠিক করা আর সেই সীমানায় থেকে যাওয়া। একটা কথা, কখনই ভুল করে এর বাইরের এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। একবার একজন তরুণ বক্তা দু মিনিটে ‘খ্রষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের প্রথম থেকে কোরিয়ার যুদ্ধ’ পর্যন্ত বলার চেষ্টা করেছিল। এ এক হাস্যকার ব্যর্থ প্রচেষ্টা! তরুণ বক্তাটিকে এথেন্স নগরীর পত্তন অবধি বলেই বসে পড়তে হয়। এ হল একটা বক্তৃতার মধ্যে অনেক কথা বলার শিকারের উদাহরণ। অবশ্য এটা বড় বেশি বাড়াবাড়ি রকমের স্বীকার করছি। আমি জীবনে এমন হাজার হাজার বক্তৃতা ব্যর্থ হতে শুনেছি-কারণ তারা অস্পষ্ট বিষয় এক বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত করতে চেয়েছে। কেন এরকম ঘটে? এর উত্তর হল মানুষের পক্ষে এক ঘেয়ে ঘটনার কথা শুনে যাওয়া বিরক্তিকর। আপনার বক্তব্য যদি পুরনো দিনপঞ্জি কোন গ্রন্থের মত শোনায় তাহলে কিছুতেই শ্রোতাদের আকর্ষণ করাতে পারবেন না বেশিক্ষণ। শ্রোতাদের মন টেনে রাখতে হলে সহজ বিষয়ের অবতারণা করুন। যেমন, ইয়েলোস্টোন পার্ক ভ্রমণ বিষয়ই ধরা যাক। এর নানা বৈচিত্র্যের বর্ণনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট : বক্তা যদি রঙীন বর্ণনায় পার্কটির বন্য জীবজন্তু, উষ্ণ প্রস্রবণ, গাছপালা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি তুলে ধরতে পারেন তা হয়ে উঠবে স্মরণীয়।
এ ব্যাপারটা যে কোন বিষয়ের সম্পর্কেই প্রযোজ্য। তা সে বিক্রীর সম্পর্কেই হোক, কেক তৈরিই হোক বা ব্যালিষ্টিক মিশাইল তৈরি সম্পর্কেই হোক। আপনার বক্তব্য শুরু করার আগেই সীমানা বেঁধে নিতে হবে। আপনার বক্তব্যের বিষয়কে ছোট জায়গায় বেঁধে ফেলে সময়কে কাজে লাগাতে চেষ্টা করুন।
ছোট মাপের বক্তৃতায়, ধরুন সময় যেখানে পাঁচ মিনিটেরও কম, সেক্ষেত্রে প্রধান বিষয় নিয়ে শুধু উল্লেখ করাই সম্ভব। ত্রিশ মিনিটের মত দীর্ঘ বক্তৃতাতেও কোন ভাল বক্তা চার কি পাঁচটির বেশি প্রধান উল্লেখ্য বিষয়ের বেশি বলে সাফল্য পান না।
২. সঞ্চয় ক্ষমতা গড়ে তুলুন
ওপর ওপর ভাসা ভাসা কথা বলে বক্তব্য রাখার কাজটা বেশ সহজেই বলা চলে-বরং কঠিন হল গভীরে প্রবেশ করা। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার–যখন ভাসা ভাসা বক্তব্য রাখতে চাইবেন তখনই শ্ৰোতৃকূলের উপর আপনার প্রভাব পড়বে সামান্য বা একেবারেই না। আপনি যখন আপনার বক্তব্যের বিষয়বস্তুকে বেশ ছোট কোন সীমানায় বেঁধে রাখতে পারবেন, তখন আপনার পরের পদক্ষেপ হবে আপনার নিজের কিছু প্রশ্ন করা। এই প্রশ্ন আপনি যে বিষয় ঠিক করে রেখেছেন সেটা ভালভাবে বুঝতে আর তৈরি করতে দারুণ সাহায্য করবে। প্রশ্নটা হল, ‘এটা আমি কেন বিশ্বাস করি? বাস্তব জীবনে এর প্রমাণ কখন পেয়েছি? আমি সঠিক কি প্রমাণ করতে চাইছি? এটা ঠিক কিভাবে ঘটেছিল?’
এই ধরনের সব প্রশ্নের যে উত্তর দরকার তা পেলে আপনার মধ্যে সঞ্চয়িত শক্তির প্রকাশ ঘটেবে, যে শক্তি থাকলে লোকে উঠে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করতে চায়। লুথার বারব্যাঙ্ক, যিনি ছিলেন উদ্ভিদবিদ্যার যাদুকর, তাঁর সম্বন্ধে কথিত আছে মাত্র দুটো সেরা জাতের চারাগাছ হাজির করার জন্য তিনি দশলক্ষ চারাগাছ বাতিল করেছিলেন। কোন বক্তৃতার ব্যাপারেও তাই। বক্তব্য সাজাতে একশ রকম চিন্তা করুন, কিন্তু তার নব্বইটাই বাতিল করা চাই। এর অনেকগুলো বক্তব্য তথ্য হয়তো কাজে লাগবে না, তবুও সেগুলো সংগ্রহ করলে আরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে, নিশ্চিত হতে পারবেন। এ হলো নিজেকে তৈরি করার কাজে প্রাথমিক পথ, অথচ বক্তারা একে অবহেলা করেন তা সে জনসংযোগের ক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেই হোক।
আর্থার কান বলেছেন, আমি শয়ে শয়ে সেলসম্যান, ক্যানভাসার আর অন্যান্যদের নাড়াচাড়া করেছি, আর তা করে তাদের বেশির ভাগের মধ্যে যে দুর্বলতা লক্ষ্য করেছি তা হল তাদের সব বিক্রয় যোগ্য জিনিস পত্রের সম্বন্ধে সমস্ত রকম জ্ঞান নেই। বিক্রি শুরু করার আগে যেটা দরকার ছিল। তাদের অনেকেই আমার অফিসে এসে তাদের পণ্যদ্রব্যের এক লাইন বর্ণনা করে সঙ্গে সঙ্গে মাল বিক্রি করতে চেয়েছে। এই বিক্রয় প্রতিনিধিদের কেউ কেউ এক সপ্তাহও টেকেনি আর বেশির ভাগ আটচল্লিশ ঘন্টাও না। আমি ওই সব বিক্রয় প্রতিনিধিদের নানা শিক্ষা দিতে চেয়েছি। আমি তাদের প্রথমেই তাদের পণ্য দ্রব্য সম্বন্ধে সব জানতে বাধ্য করেছি, খাদ্যের প্রোটিন সম্পর্কে জানতে বাধ্য করেছি। নানা ক্লাসে শিক্ষাও তারা নিয়েছে। সেরা বিক্রয় সম্পর্কীয় বক্তৃতার জন্য পুরস্কারও দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এটাই হল বিক্রয় প্রতিনিধি হওয়ার প্রাথমিক কর্তব্য।