দ্যা গামা বলল, এই এলাকা আমি চিনি। এ কাজের জন্য ক্যাটালিনা খুবই উপযোগী হবে।
ওদের মটরবোটটি ভাসমান একটা ডকের সাথে ঠেকতেই বোটম্যান ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল। নোভাল আর কোন্ডে একটা রশি ধরে তার সাথে বাধল। দা গামা কেবিনের দরজা খুলে পথ দেখিয়ে চলল। রোমেরো ককপিটের চারপাশে প্রীত হয়ে তাকাল এবং ককপিটের একটা আসনে বসে কন্ট্রোল প্যানেলের দিকে হাত বাড়াল। নোভাল অন্য আসনটিতে বসে ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলগুলো পরীক্ষা করতে শুরু করল।
কী সুন্দর।
দা গামা একটা ফাইল মেলে ধরল। তার কাঁধের ঠিক পেছনে কোন্ডে দাঁড়াল। ফাইল খুলে সে বলল, আমি আপনাদের এর আয়তন বলছি। দৈর্ঘ্য তেষট্টি ফিট, উচ্চতা বিশ, উইংস্প্যান একশো চার। দুটো প্র্যাট এত হুইটনি ইঞ্জিন, প্রত্যেকটা বারোশো অশ্বশক্তি সম্পন্ন। কুইজিং গতি ঘণ্টায় একশো আশি মাইল। বেশ চমৎকার রেঞ্জ। একবার জ্বালানী নিয়ে পণ্য বোঝাই ছাড়া এটি চারহাজার মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। আমি আর কোন উড়োজাহাজের কথা জানি না–যা এরকম করতে পারে।
‘আমিও তাই মনে করি, রোমেরো বলে উঠলো। আপনি এখন আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।’
মটরবোটটিতে গাদাগাদি করে সবাই বসতেই দা গামা সেই পুরনো গাধা বুলি আওড়ালো’–অবশ্য আরো কিছু লোক প্লেনটার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।’
মোটরবোটটি চলতে শুরু করতেই রোমেরো বলল, “ঐসব বিক্রেতা মার্কা বুলি ছেড়ে আপনি বরং একটা চুক্তিপত্র তৈরি করুন। আমি আপনাকে আমার উকিলের নাম দিচ্ছি। আমরা কালকেই চুক্তিপত্র সই করব আর আপনি যে দাম চেয়েছেন সে অংকেরই একটা চেক পাবেন। খুশি তো?’
দা গামাকে একটু অবাক দেখাল। অবশ্যই সিনোর।
রোমেরো একটা সিগারেট বের করল, নোভাল লাইটার দিয়ে সেটা জ্বেলে দিলে সে ক্যাটালিনাটার দিকে চেয়ে লম্বা একটা ধুয়া ছাড়লো।
‘মনে হচ্ছে আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেছে,’ সে বলল।
.
ব্যারন অসওয়াল্ড ভন হেইনিনজেন-হিউন ছিলেন লিসবনের জার্মান মিশনের মিনিষ্টার। তিনি একজন অভিজাত পরিবারের সন্তান, পুরোনো আমলের পেশাদার কূটনীতিক এবং নাৎসি নন। আর অধিকাংশ কর্মচারীর মতো বার্লিন থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকতে পেরে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন।
প্রথমদিকে এই অচেনা স্পেনিয় এসএস হল্সটার্মফুয়েরারটিকে দেখে একটু সতর্ক হলেও তিনি বার্লিনের নির্দেশ পালনে বাধ্য হলেন। একটু অবাক হলেও রোমেরোর প্রতি আকৃষ্ট হলেন।
স্পেনিয় লোকটি তার অফিসে প্রবেশ করতেই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন, ‘মাই ডিয়ার রোমেরো! সব কিছু ঠিকঠাক মতো হয়েছে তো?
‘এর চেয়ে আর ভাল হতে পারে না। আপনি যে আইনজীবীর কথা বলেছেন দা গামা তার সাথে যোগাযোগ করবে। আপনি টাকার ব্যবস্থা করলেই আমরা আগামীকালের মধ্যে সবকিছু সেরে ফেলব। ও হ্যাঁ,আমার এখুনি এবহোয়ের হেডকোয়ার্টারে ক্যাপ্টেন রিটারের সাথে কথা বলতে হবে।’
‘অবশ্যই।’ ব্যারন তার ডেস্কের লাল নিরাপদ ফোনটি টেনে নিয়ে একটা কল বুক করলেন। বেশি সময় লাগবে না।’ তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, কনিয়াক চলবে?
‘চলবে না কেন?
রোমেরো একটা সিগারেট ধরিয়ে একটা সোফায় বসল। ব্যারন তার হাতে একটা গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে উল্টো দিকে বসলেন। সব কিছু খুব গোপনীয় বিষয় তাই না?
‘হ্যাঁ, খুবই গোপনীয়।
না আমি কোন নাক গলাতে যাচ্ছিনা। সত্যি বলতে কি, আমি বরং কিছুই জানতে চাই না।’ তিনি গ্লাস তুলে বললেন। তবে যাইহোক আমি আপনার সাফল্য কামনা করি।
সেই মুহূর্তে ফোনটি বেজে উঠল। রোমেরো বলল, ‘অনুগ্রহ করে আপনার অনুমতি পেলে?
‘অবশ্যই। আমি বরং বাইরে যাচ্ছি।’
ব্যারন অফিসের বাইরে যেতেই রোমেরো ফোন তুলল-কে হান্স বলছো?
‘আর কে?’ রিটার বলল। তোমার কতদূর এগুলো?’
‘চমৎকার, রোমেরো তাকে সব খুলে বলল। অপূর্ব একটা উড়োজাহাজ। এর চেয়ে বেশি খুশি আমি আর হতে পারি না। এডমিরালকে বলল আমরা আমাদের পথে বেড়িয়ে পড়েছি।
.
রিটার দরজায় টোকা মেরে ভেতরে ঢুকল। ক্যানারিস কোলে একটা কুকুরছানা নিয়ে চা পান করছিলেন। তিনি তাকিয়ে বললেন, কী খবর, হান্স?
‘রোমোরা এখুনি লিসবন থেকে আমার সাথে কথা বলেছে, হের এডমিরাল। ক্যাটালিনা সম্পূর্ণ ঠিক আছে আর কালকেই তারা সেটা কেনার কাজ সেরে ফেলবে।
‘চমৎকার, ক্যনারিস ঘাড় নেড়ে বললেন। “তুমি সবশেষ ঘটনাবলির সমস্ত বিবরণ দিয়ে আরেকটা প্রতিবেদন তৈরি কর। আমরা আগামীকালই ফুয়েরারের সাথে দেখা করার এপয়েন্টমেন্ট করে ফেলব।’
‘এক্ষুণি সব করছি, হের এডমিরাল।
তারপর রিটার খোঁড়াতে খোঁড়াতে ফিরে যেতে উদ্যত হতেই ক্যানারিস তাকে ডেকে বললেন, “ওহো, আরেকটা কথা, আমরা মুলারকে আমাদের সাথে নেবো।’
কিন্তু তাদের প্রত্যাশার আগেই ওদের ডাক পড়ল। সে রাতেই দশটায় চ্যান্সেলারিতে তাদের সাক্ষাতের সময় নির্দিষ্ট করা হলো। পথেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা মুলারকে তুলে নিল। ফুয়েরারের সাথে দেখা করার কথা শুনে মুলার হতভম্ব হয়ে পড়ল।
হিটলারের সোয়ট-এর অভ্যর্থনা কাউন্টারে পৌঁছতেই সেখানকার দায়িত্বরত সহকারী উঠে দাঁড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাল। আশা করি আপনি ফুয়েরারের জন্য একটি প্রতিবেদন নিয়ে এসেছেন, হের এডমিরাল।’
হ্যাঁ তাই। ক্যনারিস বললেন।