‘চমৎকার, ক্যানারিস উঠে দাঁড়ালেন। আমার মনে হয় তোমার উচিত হবে আমাদের বন্ধু প্রফেসার মুলারের সাথে সাক্ষাত করা। তুমি বরং আমাদের সাথে শহরে চল। পথে আমাকে নামিয়ে দিয়ে তোমরা সোজা বিশ্ববিদ্যালয় চলে যাও। এখন থেকে সব বিষয়ে ক্যাপ্টেন রিটারের সাথে তুমি পরামর্শ করবে।
‘আপনি যা আদেশ করেন, হের এডমিরাল।
“ঠিক আছে,’ বললেন ক্যানারিস। তারপর ঘুরে ওদেরকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন।
.
বিশ্ববিদ্যালয়ে মুলারের বিভাগটি সব ধরনের নৃতাত্ত্বিক আগ্রহের বস্তু দিয়ে পরিপূর্ণ একটি বিশাল হলে অবস্থিত। মিশরীয় মমি, রোম ও গ্রীস থেকে আনা স্ট্যাচু, ভূমধ্যসাগরের তলদেশ থেকে উদ্ধার করা প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত এমফোরা–সব কিছু রয়েছে সেখানে। রিটার আর রোমেরো ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখতে লাগল আর ততক্ষণ মুলার তার কাঁচ ঘেরা অফিস ডেস্কে বসে অপারেশন শেবা ফাইলটা পড়ল। পড়া শেষ হওয়ার পর সে ওদের সাথে যোগদান করল।
রিটার ঘুরে জিজ্ঞেস করল, তো আপনার কি মনে হয়?
মুলার অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। সে মুখে হাসি ফুটাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলল, ‘এটি একটি চমৎকার আইডিয়া, হের হপ্টম্যান। তবে আমি ভাবছিলাম এ কাজের জন্য আমি উপযুক্ত কি না, অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি আমি তো একজন প্রশিক্ষিত স্পাই নই। আমি কেবল একজন প্রত্নতত্তবিদ।
‘এ কাজটা করতেই হবে প্রফেসার, ফুয়েরারের সরাসরি নির্দেশ অনুযায়ী। এতে কি আপনার কোনো সমস্যা আছে?
‘হায় ঈশ্বর! না নেই।’ মুলারের মুখমন্ডল ছাইবর্ণ ধারণ করল।
রোমেরো তার কাঁধে একটা চাপড় দিয়ে বলল, কোন চিন্তা করবেন না প্রফেসর। আমি আপনার খেয়াল করব।’
রিটার বলল, তাহলে সব ঠিক আছে। যখন হস্পটার্মফুয়েরার রোমেরো ক্যাটালিনা নিয়ে লিসবন রওয়ানা দেবেন, আপনি তার সাথে গিয়ে সব কিছুর প্রস্তুতি নেবেন। আমি সব সময় যোগাযোগ রাখবো।’
রিটার তার লাঠিতে ভর দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে চলল। হলের মাঝ দিয়ে যখন ওরা প্রবেশ পথের দিকে যাচ্ছিল তখর রোমেরো বলল, বেচারা খুব বেশি নার্ভাস হয়ে গেছে রিটার।’
‘সে ঠিকই পথে চলে আসবে আর সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
মূল প্রবেশ পথের বাইরে এসে সিঁড়ির প্রথম ধাপের উপর ওরা দাঁড়াল। ‘আমি আজই তোমার, নোভাল আর কোন্ডের বদলির ব্যবস্থা করব। তোমরা কালই সাদা পোশাকে লিসবন রওয়ানা দাও। আমি লুফথানসা ফ্লাইটে তোমাদের জন্য প্রায়োরিটি সিটের ব্যবস্থা করে রাখবো। ক্যাটালিনা কেনার ব্যাপারে সেখানকার জার্মান দূতাবাসে আমাদের লোক তোমার ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে। প্লেনটা পরীক্ষা করার পর তুমি দূতাবাসের নিরাপদ টেলিফোনে আমাকে জানাবে। আশা করি বৃহস্পতিবারের মধ্যে তুমি কিছু একটা জানাতে পারবে।
‘হায় ঈশ্বর! তুমি কোন কিছুতেই দেরি করতে চাওনা, তাই না হান্স?
‘এটা না করার কোন কারণ তো আমি দেখি না এ কথা বলে রিটার সিঁড়ি বেয়ে অপেক্ষামান মার্সেডিসের দিকে এগিয়ে চলল।
.
কেউ কেউ বলে চওড়া উপসাগর আর অনেকগুলো নোঙ্গর-স্থান নিয়ে টাগুস নদীই লিসবনের অস্তিত্বের সত্যিকার কারণ। এখান থেকেই বিশাল আকৃতির ফ্লাইং বোট-বিশাল ক্লিপারগুলো আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এখানেই তীর থেকে প্রায় তিনশো গজ সাগরে দুটো বয়ার সাথে বাঁধা ক্যাটালিনাটিকে দেখতে পেল কার্লোস রোমেরো। উড়োজাহাজটির মালিকের প্রতিনিধি দ্যা গামা নামে লোকটির সাথে সাক্ষাতের জন্য জেভিয়ার নোভাল আর জুয়ান কোন্ডেকে নিয়ে দশমিনিট আগেই সে আভেনিদা দ্য ইন্ডিয়ার কাছে ডকে পৌঁছেছিল। ডকের কিনারায় দাঁড়িয়ে ওরা উভচর উড়োজাহাজটির দিকে তাকাল।
‘এটা দেখতো ভালই মনে হচ্ছে,’ বলল রোমেরোর প্রায় সমবয়সী শক্ত সমর্থ গড়নের নোভাল। তার পরনে একটা পুরনো ফ্লাইং জ্যাকেট।
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী মোটাসোটা কোন্ডে ওদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড়। সেও একটা ফ্লাইং জ্যাকেট পরেছিল। সে চোখের উপর হাত দিয়ে রোদ আড়াল করে ক্যাটালিনার দিকে তাকিয়ে ছিল।
‘তোমার কি মনে হয় জুয়ান? সামলাতে পারবে এটাকে?
‘দেখি একবার চেষ্টা করে।
একটা মোটর বোট ডকে এসে নাক ঠেকালো। বাদামি স্যুট আর পানামা হ্যাট পরা একজন লোক বোট থেকে হাত নাড়তে লাগল। লোকটি স্পেনিশে বলল, ‘সিনর রোমেরো? আমি ফার্ডিনান্ড দা গামা, বোটে উঠে আসুন।
তারা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে মোটরবোটে চড়তেই লোকটি বোটম্যানকে ইশারা করতেই সে বোট ছেড়ে দিল।
দা গামা বলল, দেখতে ভাল মনে হচ্ছে না?
‘অবশ্যই এটি দেখতে চমৎকার, রোমেরো বলল। এখন এর বিষয়ে বলুন।
‘স্থানীয় একটা শিপিং কোম্পানি ম্যাদেইরা দ্বীপে প্রতিদিন ফ্লাইট চালাতে চেয়েছিল। গত বছর ওরা যুক্তরাষ্ট থেকে একটা ক্যাটালিনা কেনে। চমৎকার সার্ভিস দিয়েছিল ওটা, কিন্তু ওদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাত্রী পরিবহন। তবে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা এত সীমিত ছিল যে তাতে কোন লাভের উপায় ছিল না। আচ্ছা কী উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করতে চান জানতে পারি কী?
রোমেরো প্রকৃত সত্যের কাছাকাছি কথাটা বলল–লোহিত সাগর আর এডেন উপসাগরে সাধারণ পণ্য আনা নেওয়া করা। এমনকি গোয়া পর্যন্ত যেতে পারি। এটা একটা নতুন ব্যবসা।