জামাল হাতের চাপ কমাতেই, গনজালেস এক হাত সোজা করে কেইনের দিকে চেয়ে অনুরোধ করল, “এই কালো শয়তানকে বল আমাকে ছেড়ে দিতে।’
কেইন কর্কশ কণ্ঠে বলল, যতক্ষণ না তুমি আমাকে জানাও, যা আমি জানতে চাই, তার আগে নয়।’
গনজালেস বলল, “স্কিরোজ আর মেয়েটা সেলিমের ধাউ ফারাহ’তে আছে। ওরা ভোরের জোয়ারের সময় চলে যাবে।
কেইন জামালকে ইশারা করতেই সে কাষ্টমস চিফকে মাটিতে ফেলে দিল। সে মাটিতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল।
.
কেইন দ্রুত ওয়াটারফ্রন্ট ধরে এগিয়ে জেটির দিকে মোড় ঘুরল। বেশ কয়েকটা ধাউ তীরে বাঁধা রয়েছে, কিন্তু ফারাহকে দেখা যাচ্ছে না। এক মুহূর্ত তার মনে আতংক ভর করল। আর ঠিক তখনই জামাল তার কাঁধ ছুঁয়ে সাগরের দিকে আঙুল তুলে দেখাল। ফারাহ বন্দরের মাঝখানে নোঙর করা রয়েছে। আশে পাশে আর কোন নৌকা নোঙর করা নেই। চাঁদের আলোয় সাগরের পানি রূপালি রং ধারণ করেছে।
বোটে করে এগোলে কারো না কারো চোখে পড়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। ওরা নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে জেটির শেষ মাথার দিকে এগোলো। হালকা একটা শব্দ শুনে কেইন থামল।
জেটির কিনারায় এগিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল অন্ধকার ছায়ায় দুটো ধাউয়ের মাঝে একটা ডিঙি নৌকার উপর একজন আরব বসে আছে। সাহিব এসেছেন নাকি? আরবটা মৃদু স্বরে ডাকল।
কেইন বুঝলো লোকটা ভুল করে তাকেই মূলার মনে করেছে। সে পেছন ফিরে লোহার সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে খুব চাপা স্বরে বলল, তোমার হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরে নামতে সাহায্য করো।
লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়াতেই সে অর্ধেক ঘুরে তার তলপেটে একটা লাথি কষালো। লোকটা গুঙিয়ে নৌকার মাঝখানে পড়ে গেল। আর কেইন তার পাশে নামল।
সে দ্রুত শার্ট খুলে ফেলল। ডেজার্ট বুটের ফিতা খুলতে খুলতেই জামাল তার পাশে নামল। জামাল তার পাশে আসন পেতে বসতেই কেইন দ্রুত তাকে প্ল্যানটা বুঝিয়ে বলল। তার বলা শেষ হতেই জামালের চেহারায় উদ্বিগ্ন ভাব দেখা গেল, তারপরও সে অনিচ্ছা নিয়ে ঘাড় কাত করল।
কেইনের পরনে এখন শুধু খাকি প্যান্ট। সে আরব মাঝির বেল্ট থেকে ছুরিটা নিয়ে নিজের কোমরে গুজলো। তারপর পানিতে নামল। নিঃশব্দে শক্তিশালী বেষ্ট স্ট্রোক দিয়ে সাগরে সাঁতার কেটে চলল।
নোঙর করা ধাউগুলোর ছায়া থেকে বের হয়ে চাঁদের আলোয় আলোকিত রূপালি পানির মাঝে পৌঁছার পর তার নিজেকে নগ্ন আর একা মনে হলো। সৌভাগ্যবশত সাগর থেকে বয়ে আসা মৃদু বাতাসে সাগরের পানিতে ছোট ছোট ঢেউ সৃষ্টি হয়ে তাকে লুকোতে সাহায্য করল।
ফারাহর কাছে এগোতেই সে দেখল কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে একজন নাবিক জাহাজের ডেকের মাথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেইন নিঃশব্দে পালের দড়ি বাঁধার খুঁটির নিচ দিয়ে সাঁতার কেটে এগিয়ে নোঙরের দড়ি শক্ত করে ধরে একটু বিশ্রাম নিল।
এক মুহূর্ত পর সে এক হাতের উপর অন্য হাত রেখে উপরে উঠতে শুরু করল। পাহারারত নাবিকটা ডেকের অন্য পাশে দাঁড়িয়ে জেটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কেইন রেইল টপকে নিঃশব্দ পায়ে এগোলো।
এক হাতের কানা দিয়ে সে লোকটার ঘাড়ে কারাতের কোপ মারল। টু শব্দটি না করে আরব লোকটা ডেকে লুটিয়ে পড়ল। কেইন রাইফেলটা তুলে পরীক্ষা করল, তারপর কাঠের সিঁড়ি বেয়ে জাহাজের নিচের দিকে নামল। ছায়ায় একটু থামল।
জাহাজের নাবিকরা হোল্ডের এক ধারে রয়েছে, সে হ্যাঁচের মধ্যে উঁকি দিল। নিচে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে আর কিছু রান্নার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সে রাইফেলটা নামিয়ে রাখল, তারপর ভারী স্টর্ম কভারটা হ্যাঁচের উপর রেখে ধাতব ব্রাকেটগুলো লাগিয়ে দিল।
রাইফেলের দিকে হাত বাড়িয়ে উঠে দাঁড়াবে, এমন সময় পেছনে মৃদু শব্দ হলো। একটা রিভলবারের ঠাণ্ডা নল আস্তে তার ঘাড় ছুঁলো, স্কিরোজ বলে উঠল। খুব চমৎকার বন্ধু। প্রায় সেরে ফেলেছিলে কাজটা।’
কেইন আস্তে আস্তে ঘুরল, জার্মান স্কিরোজ মৃদু হাসল। তাহলে বুড়ো মাহমুদ তোমাকে আটকে রাখবে বলে যে কথা দিয়েছিল, সে কথা রাখেনি।
কেইন বলল, যখন সে জানতে পারল তুমি মেরিকে নিয়ে গেছ, তখন তুমি তার আরব সম্মানে আঘাত করেছ।’
তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি মূলারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মনে হয় সে আর আসবে না।
কেইন বলল, না সে আর আসবে না।
স্কিরোজ আবার মৃদু হাসল। এক দিক দিয়ে তুমি আমার উপকার করেছ। সে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারতো। তুমি আমার আশা পূর্ণ করেছ।’
কেইন শুকনো কণ্ঠে বলল, তা আমি বিশ্বাস করি।
স্কিরোজ হ্যচের দিকে নির্দেশ করল। এখন তুমি আবার ওটা খুলে দাও। আমাদের যাত্রা দেরি করার আর কোন কারণ নেই।
কেইন যথাসম্ভব ধীরে ধাতব ব্রাকেটগুলো খুলল। হ্যাঁচের ঢাকনিটা উপরে তুলতেই স্কিরোজ ডেকে উঠল, ‘সবাই ডেকে উঠে এসো!’
নিচে থেকে আরব নাবিকগুলো উঠে এলো, তারা দলবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলতে লাগল আর কেইনের দিকে শত্রুভাবাপন্ন দষ্টিতে তাকাল। স্কিরোজ ওদের মধ্য থেকে মেটকে সামনে আসতে বলল এবং তাকে জাহাজ ছাড়ার নির্দেশ দিল। তারপর কেইনকে ঠেলতে ঠেলতে সে জাহাজের পেছন দিকে নিয়ে চলল।
পুপ-ডেকের নিচে ক্যাপ্টেনের কেবিনের দরজা খুলে সে কেইনকে ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢোকালো। সেই রাতে এখানে আসার কথা কেইনের মনে পড়ল, যে রাতে সেলিমের লোক ওর উপর আক্রমণ করেছিল। কেবিনটা একইরকম দেখাচ্ছে। একটা নিচু পিতলের টেবিলের চারধারে মাদুর আর কুশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে। আর বিশাল স্টার্ণ জানালার নিচে একটা শোয়ার কাউচ সদ্য পেতে রাখা হয়েছে।