কেইন বুঝতে পারল লোকটা মিথ্যা বলছে। তবে এ মুহূর্তে ছেড়ে দিল। ‘ডাক্তার হামিদ কি এখনো এখানে থাকেন?
কেরানি মাথা নাড়তেই কেইন বলল, দোতলার একটা কামরার চাবি দাও আর ডাক্তারকে ঘুম থেকে তোল। তাকে বল খুব জরুরি দরকার।’
কেরানি ডেস্ক ঘুরে এসে তার হাতে একটা চাবি দিল তারপর ওদের আগে আগে উপর তলায় চলে গেল। কেইন চাবির নম্বরটা দেখে কামরাটা খুঁজে বের করে দরজা খুলল।
জামাল জর্ডনকে অত্যন্ত যত্নসহকারে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। জর্ডনের সারা মুখ ঘামে ভিজে গেছে, কেইন উদ্বিগ্ন হয়ে ওর দিকে তাকাতেই দরজা খুলে গেল। লম্বাটে মুখের একজন আরব ভেতরে ঢুকল। তার পরনে ড্রেসিং গাউন আর হাতে একটা কালো ব্যাগ। সে কেইনের দিকে একবার মাথা নেড়ে তাকে সরিয়ে জর্ডনের দিকে ঝুঁকে তাকাল।
তারপর সোজা হয়ে তার ব্যাগটা খুলল। দেখতে যত খারাপ মনে হচ্ছে সেরকম নয়, পরিষ্কার ইংরেজিতে সে বলল। যদিও তার ভাগ্য ভাল বলতে হবে।
‘আমি তাকে আপনার কাছে রেখে যাচ্ছি, কেইন বলল। পরে এসে দেখবো সে কেমন আছে।’
ডাক্তার হামিদ অধৈর্য হয়ে মাথা নেড়ে তার কাজে লেগে পড়লেন। কেইন আর জামাল কামরা থেকে বের হয়ে গেল।
নিচে নেমে ওরা দেখল কেরানি ডেস্কের পেছনে বসে একটা খবরের কাগজ পড়ছে। কেইন সামনে এগিয়ে ডেস্কে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
লোকটা খবরের কাগজের উপর থেকে তার দিকে তাকিয়ে অনিশ্চয়তা নিয়ে মৃদু হাসল। আপনার জন্য আর কিছু করতে পারি, সাহিব?’
‘তুমি বলতে পারো স্কিরোজ কোথায় আছে, কেইন বলল।
সে কাঁধ ঝাঁকাল। আমিতো আপনাকে আগেই বলেছি সাহিব, মিস্টার স্কিরোজকে আমি কয়েকদিন ধরে দেখিনি।
‘সাধারণত আমি একজন ধৈর্যশীল মানুষ, কেইন বলল। “তুমি আমাকে এমন এক রাতে ধরেছো যখন আমি কাজের মধ্যে নেই। এখন হয় তুমি আমাকে বল স্কিরোজ কোথায় আর নয়তো আমি আমার বন্ধুকে বলব তোমার হাত ভেঙে দিতে।
কেরানি জামালের দিকে তাকাল তারপর ব্যথায় কুঁচকে উঠল। তার কোন দরকার হবে না সাহিব। সব কিছুরই একটা সীমা আছে–এমনকি বিশ্বস্ততারও। মিষ্টার স্কিরোজ এক ঘণ্টা আগে এখানে ছিলেন। তিনি তার অফিস থেকে অনেক কাগজপত্র আর সেফ থেকে অনেক টাকা নেন। আমাকে বলেন কিছুদিনের জন্য দূরে যাচ্ছেন। কেউ জিজ্ঞস করলে আমি যেন বলি আমি কিছুই জানি না।’
‘মেরি পেরেট কি তার সাথে ছিলেন?
কেরানি মাথা নাড়ল। তিনি দুটো টেলিফোন করলেন, ব্যস এই।’
কেইন সুইচবোর্ডের দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হাসল। তুমি নিশ্চয়ই শুনেছ তিনি কোথায় কথা বলেছেন।
কেরানি কাঁধ ঝাঁকাল। প্রথমটা ছিল প্রফেসর মুলারকে। মিষ্টার স্কিরোজ তাকে তাড়াতাড়ি করতে বললেন। তিনি জানালেন সব কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘আর দ্বিতীয়টা?
দ্বিতীয়টা ছিল কাস্টম চিফ, ক্যাপ্টেন গনজালেসকে। মিষ্টার স্কিরোজ তাকে বললেন খুব দ্রুত তার কাছে আসতে, আর তার কাছে যত টাকা আছে। সব নিয়ে আসতে।
‘তিনি কি এসেছিলেন?
‘তিনি বিশ মিনিট পরেই আসেন। খুব রেগেছিলেন, সাহিব। কিন্তু মিষ্টার স্কিরোজ তাকে ভয় দেখালেন।
“কি ব্যাপারে?’ কেইন বলল।
কেরানি মাথা নাড়ল। আমি ঠিক নিশ্চিত নই, সাহিব। তবে কথা শুনে মনে হচ্ছিল ওরা দুজন কোন ব্যবসায় অংশীদার ছিলেন।
কেইন এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়াল, তার ভুরু কুঁচকে উঠল। তারপর জামালের দিকে মাথা কাত করে হল পেরিয়ে বাইরে রাস্তার দিকে চলে গেল।
ওয়াটারফ্রন্ট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেক কিছুই তার মনে পরিষ্কার হলো। কানিংহামের এখানে আসার ব্যাপারে স্কিরোজ যে জানে, সেটা তার অস্বীকার করাটা বোধগম্য, তবে গনজালেস তাকে দেখেনি সে কথাটা সহজে বোঝা যায়নি। কাস্টম চিফ অলস আর দায়িত্বে অবহেলা করলেও, এ শহরের প্রতিটা ভিখারি তার স্পাই। এখানে খুব কম ঘটনাই ঘটে যা সে জানে না।
আর এতো দিন যে কেইন স্কিরোজের জন্য দাহরানে কারেন্সি বয়ে এনেছিল? গনজালেস একবারও তার বোট পরীক্ষা করেনি। স্বভাবতই স্কিরোজ তার সাথে বন্দোবস্ত করে রেখেছিল, তাই তারা কেইনকে আস্থায় নেওয়াটা প্রয়োজন মনে করে নি।
ওরা কাষ্টম চিফের বাসায় পৌঁছাল। কেইন খুব জোরে বেলের চেইন ধরে টানল। কিছুক্ষণ পর ওপাশে নড়াচড়ার আভাস পাওয়া গেল। গনজালেস গ্রিলের মধ্য দিয়ে তাকাল।
সে বলল, কে ওখানে?
কেইন বলল, “আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। খুব জরুরি।’
গজগজ করে গনজালেস দরজার চেইন খুলল। একটুখানি খুলতেই জামাল এক লাথিতে দরজাটা সম্পূর্ণ খুলে দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগালো।
কেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখল গনজালেস মাটিতে চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছে। সে রেগে বলল, এর মানে কী?
কেইন তাকে টেনে তুলে দাঁড় করাল, তারপর কাছে টানল। স্কিরোজ কোথায়?
তার মুখে ভয়ের ছায়া দেখা গেল। তারপরও শাসানির ভঙ্গিতে বলে উঠল, ‘তার আমি কি জানি?
কেইন তাকে এক হাতে ধরে জামালের দিকে ফিরল। সে পরিষ্কার আরবিতে বলল, এই কুকুর জানে কোথায় মিস পেরেটকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ওকে জানাতে বল।
জামাল তার বিশাল হাত বাড়িয়ে গনজালেসের কাঁধের চারপাশে শক্ত করে দুই হাত বাঁধল। এক সেকেন্ড পর তার বিশাল হাঁটুর উপর গনজালেসের পিঠ বাকা করে শোয়াল। সে একবার চিৎকার করে উঠতেই কেইন সামনে এগিয়ে জামালের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।