কেইন সাবধানে পা টিপে টিপে ল্যান্ডিংয়ে উঠে দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়াল। তারপর দ্রুত এগিয়ে দরজাটা খুলতে চেষ্টা করল। তালাবন্ধ। জামাল আর জর্ডন এসে অন্যপাশে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, কিন্তু মুলারের কোন সাড়া পাওয়া গেল না।
কেইন জামালের দিকে তাকিয়ে মাথা কাত করল। জামাল নিঃশব্দে এগিয়ে দরজার তালার উপর এক রাউন্ড গুলি ছুঁড়লো। দরজার তালা ছিন্নভিন্ন। হয়ে যেতেই সে এক লাথি মেরে দরজাটা খুলে ফেলল। তারপর একলাফ দেয়ালের আড়ালে আশ্রয় নিল। কিন্তু তবুও মুলারের কোন সাড়া নেই। এক মুহূর্ত পর কেইন কামরার চারপাশে উঁকি দিল। সব খালি আর দূরের দেয়ালে একটা দরজা হা করে খোলা।
এদিক দিয়ে পেছনের একটা সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। কেইন সবাইকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল, সাবধানে নিচে অন্ধকারে নামল। নিচের দরজাটা বন্ধ। ঠেলা দিতেই দরজা খুলে গেল, ওরা বাগানে এসেছে।
‘তোমার কি মনে হয় সে এখনো সেখানে আছে?’ জর্ডন ফিসফিস করল।
কেইন মাথা নাড়ল। থাকতেই হবে। আমি তালা বন্ধ করেছি। আর সে এতো বেঁটে যে কারও সাহায্য ছাড়া দেয়াল টপকাতে পারবে না।’
ঝোঁপের মধ্য থেকে একটা বুলেট শই শাই করে এসে ওদের কয়েক ফুট দূরে দেয়ালে ধাক্কা মারল। ওরা নিচু হলো, জামালও ওদের পাশে এলো।
‘বোকার মতো কাজ করো না মুলার,’ কেইন বলে উঠল। আমরা এখানে তিনজন আছি আর সবার হাতে বন্দুক আছে। তুমি কিছুই করতে পারবে না।’
অযাচিত শব্দে বিরক্ত হয়ে কোথাও একটা পাখি ঝোঁপের মাঝ থেকে উড়ে গেল। আর ছাদের কিনারায় রোজ রাতে যে কবুতরগুলো থাকতে আসে সেগুলো ঝটাপটি করে উঠল।
‘আমরা বরং দুদিকে চলে যাই,’ কেইন মৃদু কণ্ঠে জর্ডনকে বলল। এভাবে বসে থেকে কোন কাজ হবে না। আর দোহাই লাগে উল্টোপাল্টা গুলি ছুঁড়তে যেয়োনা। হয়তো মুলারের বদলে আমাকেই মেরে বসবে।’
জর্ডন দাঁত বের করে হাসল।ঠিক আছে, আমি সাবধান থাকব।’
জামাল ডানদিকে এগোলোলা আর কেইন সামনের দিকে ক্রল করে এগোতে শুরু করল। শিশির পড়ে মাটি ভেজা ছিল। সে একটা ডুমুর গাছের ছায়ার মাঝে উঠে দাঁড়াল। কান পেতে কোন শব্দ শুনতে চেষ্টা করল। তারপর আবার একটা বন্দুক ছোঁড়ার শব্দ পাওয়া গেল আর জর্ডন চেঁচিয়ে উঠল। সে গেটের দিকে যাচ্ছে কেইন! ওকে আটকাও!
কেইন দ্রুত সামনে এগিয়ে পথের উপর এসে দাঁড়াল। মুলার ওর বিশ কি ত্রিশ ফুট দূরে এসে হাজির হল। সে দৌড়ে গেটের কাছে গিয়ে গেটটা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। এদিকে জর্ডনও বের হয়ে কেইনের পাশে দাঁড়াল।
মুলার ওদের দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। তার চেহারায় হতাশা ফুটে উঠেছে। সে তার ডান উরুর সাথে লুগারটা চেপে ধরে রেখেছে। কেইন সাব মেশিনগানটা তুলে ধরল। কোন বোকামি করো না।
কিন্তু মুলার লুগারটা উঠিয়েই গুলি ছুড়লো। জর্ডন দম বন্ধ করে এক পাশে কেইনের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। মুলার আবার লুগারটা উঁচু করতেই জামাল ঝোঁপের মধ্য থেকে বের হয়ে সাব-মেশিনগান থেকে এক রাউন্ড গুলি ছুড়লো। গুলির ধাক্কায় মুলার গেটের গা ঘেষে পড়ে গেল।
যন্ত্রণায় জর্ডনের মুখ কুঁচকে রয়েছে আর কেইন ওকে ধরে বসাতেই জর্ডনের ক্ষত থেকে ওর হাতে রক্ত চুঁইয়ে পড়ল। সে জামালকে ডাকল। জামাল জর্ডনকে পাঁজাকোলে করে ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল।
কেইনও পিছু পিছু যাবে, এমন সময় মুলারের গোঙানি শোনা গেল। একটু ইতস্তত করে সে গেটের কাছে গিয়ে মুলারের পাশে হাঁটু গেড়ে বসল। মুলারের চোখ খোলা, সে যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে। বুকটা গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে গেছে।
কেইন নিচু হয়ে ওকে বলল, ‘মুলার শুনতে পাচ্ছো? আর সবাই কোথায়?
সে বৃথা সময় নষ্ট করল। মুলারের চোখ উল্টে গেল আর মুখ থেকে রক্ত বের হয়ে এল। মাথা এক পাশে হেলে পড়ল, তারপর সে স্থির হয়ে গেল।
কেইন এক মুহূর্ত একটু চিন্তা করল, তারপর মৃতদেহটা পথ থেকে সরিয়ে ঝোঁপের মাঝে টেনে নিয়ে গেল। তারপর গেটের তালা খুলে আবার বাড়ির দিকে ফিরে চলল।
জামাল জর্ডনের শার্ট খুলে ফেলেছিল। বুলেট তার বুকের নিচে বামদিকে জখম করেছে। তবে পরীক্ষা করে বোঝা গেল বুলেটটা পাজরের একটা হাড়ে লেগে সরে গেছে। মাংসে একটা গভীর ফুটো হয়ে সেখান থেকে রক্ত ঝড়ছে। এছাড়া বিপজ্জনক আর কিছু হয়নি।
জামাল শার্টটা ফালি ফালি করে ছিঁড়ে দ্রুত ক্ষতটায় একটা ব্যান্ডেজ বাঁধল। জর্ডন তখন চোখ মেলল। আমার জন্য চিন্তা করো না,’ সে বলল। ‘তোমরা স্কিরোজের পেছনে যাও।’
‘আগে তোমাকে ডাক্তারের কাছে দিয়ে তারপর যাবো, কেইন বলল।
জামাল তাকে কোলে তুলে নিতেই ভূতত্ত্ববিদ জ্ঞান হারালো। কেইন পথ দেখিয়ে বাগান পেরিয়ে ট্রাকের কাছে পৌঁছলো।
যেতে যেতে ওরা দেখল আশেপাশের সব বাড়িঘর নিরব, তখন কেইন ভাবলো ভাগ্য ভালো যে দাহরানে রাতের বেলা বন্দুকের গুলির শব্দ এমন কিছু নয় যে মানুষ জেগে উঠবে।
সে হোটেলের সামনে এসে থামল আর জামাল ওর পিছু পিছু জর্ডনকে কোলে তুলে নিয়ে এল। বারান্দায় কেউ নেই, শুধু একজন ভারতীয় কেরানি ডেস্কের পেছনে বসে দুলছে। কেইন তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে জাগাল।
‘স্কিরোজ কোথায়?
লোকটা দুদিকে দুহাত ছড়ালো। উনি দূরে গেছেন সাহেব। কয়েকদিন ধরে তিনি বাইরে আছেন।’