কেইন পাশের সিটে হেলান দিয়ে রয়েছে, দাঁতের ফাঁকে জর্ডনের সিগারেট প্যাকেট থেকে নেওয়া একটা সিগারেট কামড়ে ধরে রয়েছে। অনেকক্ষণ ঘুমালেও সে তখনো ক্লান্ত ছিল, কিন্তু মনের ভেতরের কোন এক জায়গা থেকে সে গোপন কোন শক্তির উৎস খুঁজে পেয়েছে। রহস্যজনক কোন এক শক্তি–যা তাকে জাগ্রত রেখেছে তার কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য।
এক ঘণ্টা চলার পর সাগরের তীর থেকে বয়ে আসা জোর বাতাস পাহাড়ের মধ্য দিয়ে এসে সামনের মেঘের পর্দাটা সরিয়ে দিল। পূর্ণিমার চাঁদ উদয় হল। চাঁদের আলোয় উপত্যকার মধ্য দিয়ে ওদের পথ আলোকিত হলো।
এবার সামনের পথ পরিষ্কার দেখা যাওয়ায় জর্ডন স্পিড বাড়িয়ে দিল। শুষ্ক উপত্যকার মাঝে শক্ত মাটির উপর দিয়ে বড় বড় বোল্ডার পাশ কাটিয়ে ওরা-গাড়ি ছুটিয়ে চলল।
ঘণ্টাখানেক পর ওরা মানুষের হাতে তৈরি একটা পথে এল। পাহাড়ের এক পাশ দিয়ে কেটে তৈরি করা এবড়ো থেবড়ো রাস্তাটায় ছোট ছোট খোয়া ছড়ানো।
জর্ডন গিয়ার বদল করে আরো স্পিড বাড়াতেই পেছন থেকে একটা বিকট আওয়াজ এল। আর ট্রাকটা বিপজ্জনকভাবে রাস্তার এক পাশে কাত হয়ে পড়ল।
জর্ডন ইঞ্জিন বন্ধ করে ধুত্তরি’ বলে উঠল। “চাকার হাওয়া গেছে। এই অভিশপ্ত রাস্তায় বেশ কয়েকবারই যাওয়ার কথা।
দশ মিনিটের মধ্যে ওরা চাকা বদলে আবার রওয়ানা দিল। তবে এবার কেইন চালকের আসনে বসল। ওর সামনে কী আছে তা ভাবার মতো অবস্থা এখন আর নেই। সে এখন পুরোপুরি মনোযোগ দিল রাস্তার দিকে। ট্রাক আর সামনে রাস্তা ছাড়া আর কোন কিছু এখন তার মনে নেই। পাহাড়ের পাশ দিয়ে একেবেঁকে ওরা নেমে চলেছে সমুদ্রতীরের দিকে।
এই মনোযোগ সে রাখতে পারবে কী পারবে না সে প্রশ্ন ওঠার কোন সুযোগ নেই। মাইলের পর মাইল সে হুইলের পেছনে বসে ট্রাক চালাচ্ছে। ওর হাতের ঘামে হুইল ভিজে গেছে। তিনঘণ্টা পর ওরা সেই বিশাল উপত্যকায় পৌঁছলো যা সাগরের দিকে চলে গেছে।
.
ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেইন আর জর্ডন কোন কথা বলেনি। এবার দাহরান নজরে আসতেই কেইন বলল, ক’টা বেজেছে?
জর্ডন ঘড়ির দিকে তাকাল। প্রায় ভোর চারটে। তুমি কেমন বোধ করছো?
কেইন বেশ কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে মাথা পরিষ্কার করল, তারপর ঘাড় কাত করল। আমি ঠিক আছি।’
‘এরপর আমরা কী করব? জর্ডন বলল।
কেইন ভুরু কুঁচকালো। আমার মনে হয় ওরা হোটেলে যাবে না। মুলারের বাড়িতে যাবে। বাড়িটা নিরব এলাকায়।
এরপর ট্রাকটা নিয়ে সে বিমানক্ষেত্রের পাশের রাস্তাটা ধরে এগিয়ে চলল। শহরতলির বাড়িগুলোর মধ্য দিয়ে ওয়াটার ফ্রন্টের দিকে চলল। চারধার নিরব।
দাহরান পুরো অন্ধকার, সে হেডলাইট জ্বেলে সাবধানে আঁকাবাঁকা অলিগলির মাঝখান দিয়ে মুলারের বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল।
রাস্তার শেষ মাথায় পৌঁছে গাড়ি থামিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করল। এরপরের পথটুকু হেঁটে যাওয়াই ভাল।
সাব-মেশিনগানটা হাতে নিয়ে সে সবাইকে সাবধানে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। দেয়ালের মাঝে একটা দরজার উপর একটা ল্যাম্প ঝুলছে। আলোর নিচে দেখা গেল একটা ট্রাক পার্ক করা।
জর্ডন এগিয়ে গাড়ির বনেটের উপরটা ছুঁয়ে দেখল। এটা তখনও গরম রয়েছে। বেশিক্ষণ হয়নি ওরা এসেছে।
কেইন মাথা নাড়ল। জানি, আমরা বেশ তাড়াতাড়ি এসেছি।’
দরজা তালাবন্ধ। এক মুহর্ত সে ইতস্তত করল। তারপর জামাল তার কাঁধ চুলো।
কেইন ঘুরে দেখল জামাল দেয়ালে হেলান দিয়ে দুপা ফাঁক করে মাটিতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেইন মেশিন-গানটা কাঁধে ঝুলিয়ে জামালের পিঠে চড়লো। জামালের কাঁধে চড়তেই সে কেইনের দুই পায়ের গোড়ালির বাট ধরে তাকে উপরের দিকে ঠেলে তুলল।
কেইন দেয়ালের উপর ওঠে লাফ দিয়ে ভেতরে বাগানে নেমে পড়ল। বাড়ির ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছে। সে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে উপরে জানালার দিকে তাকাল। তারপর দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে দরজার তালা খুলল। এক মুহূর্ত পর জামাল আর জর্ডন ওর পাশে এসে দাঁড়াল।
কেইন দরজার তালা বন্ধ করে চাবিটা পকেটে ভরলো। তারপর ওরা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে বাড়িটার দিকে এগোলো।
.
১৮.
বাগান নিস্তব্ধ। সামনের দরজা থেকে কয়েকগজ দূরে একটা ঝোঁপের পেছনে কেইন হামাগুড়ি দিয়ে বসল। তারপর জর্ডন আর জামালকে পেছনে নিয়ে ছায়া থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠল।
সামান্য ছোঁয়াতেই দরজা খুলে গেল, কেইন সাব-মেশিনগান রেডি করে ভেতরে ঢুকল। আলো জ্বলছে আর দোতলা থেকে অস্পষ্ট নড়াচড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
সে ঘুরে জর্ডনের সাথে কথা বলতে যাবে এমন সময় হলের এক প্রান্তে ক্লিক করে একটা দরজা খুলে গেল। একটা সুটকেস হাতে সাদা আলখাল্লা পরা একজন আরব পরিচারক ঘরে ঢুকল। ওদের দেখার সাথে সাথে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে কোন চিৎকার করার আগেই জামাল তড়িৎ গতিতে সামনে এগিয়ে লোকটার চোয়ালে প্রচণ্ড একটা ঘুসি মারল। টু শব্দ না করে লোকটার। দেহ মাটিতে ঢলে পড়ল। সুটকেসটা হাত থেকে খসে পড়ল।
উপর থেকে চিৎকার শোনা গেল। মুলার সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে হাজির হলো। ‘জলদি কর!’ সে চেঁচিয়ে উঠল আর তখনই কেইনকে দেখতে পেল।
পকেট থেকে একটা লুগার রিভলবার বের করে সে আন্দাজে একটা গুলি ছুঁড়লো। গুলিটা দেয়ালে লেগে ছিটকে পড়ল। সাথে সাথে ওরা সবাই মাথা বাঁচাতে বসে পড়ল। মুলার পেছন ফিরে ওর স্টাডিতে ঢুকে দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।