“তবে খুব ভাল হয় যদি স্পেনিয় ক্রু পাওয়া যায়।
‘কোথায় পাবে এদের?’
‘এস, এস, সৈনিকদের মধ্যে অনেক স্পেনিয় ভলান্টিয়ার আছে।’
ক্যানারিস বললেন, তা অবশ্যই আছে, এটা একদম সঠিক হবে।’
‘আমি ইতিমধ্যেই একজন উপযুক্ত বৈমানিক খুঁজে বের করেছি। স্পেনিশ সিভিল ওয়ারে এর প্রচুর লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আছে। এখন এই লোকটি এস.এস এর অধীনে কুরিয়ার পাইলট হিসেবে কাজ করছে। আমি আজই গ্যাটো বিমান ঘাঁটিতে এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।’
‘ভাল। আমিও তোমার সাথে গিয়ে লোকটাকে দেখতে চাই, ক্যানারিস বললেন।
সাতাশ বছর বয়সি সুদর্শন যুবক–গোমরামুখো কার্লোস রোমেরো, মাদ্রিদের একজন ধনী মদ-ব্যবসায়ীর পুত্র। ষোল বছর বয়সে সে প্লেন-চালনা শিখে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই স্পেনিশ বিমান বাহিনীতে একজন ফাইটার পাইলট হিসেবে যোগদান করে। সিভিল ওয়ারের সময় সে জেনারেল ফ্রাংকোর পক্ষে যোগদান করে, তবে এই কারণে নয় যে সে একজন উৎসর্গকৃত ফ্যাসিস্ট। আসলে তাদের শ্রেণীর মানুষেরা তখন তাই করেছিল। সে এগারোটা প্লেন গুলি করে ভূপাতিত করেছিল। এরপর জার্মান কনডর লিজিয়নে প্লেন চালিয়েছিল। তারপর হঠাৎ করে সেটা বন্ধ হয়ে গেল, যা সে চায় নি। এমন সময় সে কানাঘুষা শুনতে পেল এস, এস, স্পেনিয় ভলান্টিয়ার খুঁজছে। পাইলট হিসেবে তার রেকর্ড দেখে ওরা কোন ধরনের দ্বিধা না করে তাকে নিযুক্ত করল। মূলত কুরিয়ার দায়িত্বে, এদের কাজ ছিল উচ্চ পদস্থ অফিসারদের বিভিন্ন স্থানে আনা নেওয়া করা।
এ মুহূর্তে সে বার্লিনের আকাশে এক হাজার ফুট উচ্চতায় একটা ছোট স্টর্ক স্পটার এরোপ্লেনের নিয়ন্ত্রণে বসে ছিল। গ্যাটো টাওয়ারে কল দিয়ে ল্যান্ড করার অনুমতি পেয়ে বিমান ঘাঁটির দিকে নামতে শুরু করল। এই একঘেয়েমি কাজে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।
স্পেনিশ ভাষায় সে ফিসফিস করে বলে উঠল, “হায় ঈশ্বর! এর চেয়ে ভাল কিছু নিশ্চয়ই আমার জন্য আছে।
.
তা অবশ্যই ছিল এবং তা সে জানতে পারল একটু পরেই। মেসে গিয়ে ফ্লাইং জ্যাকেট খুলতেই তার নিচে কালো রঙের এস এস ইউনিফর্ম বেড়িয়ে পড়ল। ইউনিফর্মের বাম কাঁধে একটা ছোট স্পেনিশ শিল্ড, স্পেনিশ অর্ডার অফ মেরিট ফর গ্যালাষ্ট্রি আর কনডরে তার বীরত্বসূচক কাজের জন্য আয়রন ক্রস ফার্স্ট ক্লাস লাগানো রয়েছে।
প্রথমে তার নজরে পড়ল ক্যানারিসকে তার উচ্চ পদমর্যাদার কারণে, যদিও তাকে সে চিনতে পারল না। তবে রিটারকে চিনতে পেরে খুশি হয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল।
‘হান্স রিটার, কী ব্যাপার!
রিটার তার হাতের লাঠিতে ভর দিয়ে সামনে এগিয়ে তার সাথে হাত মেলালো। তোমাকে বেশ ভালই দেখাচ্ছে। স্পেনের ঘটনা অনেক আগে গত হয়েছে মনে হচ্ছে।’
‘আমি তোমার পায়ের কথা শুনেছি। দুঃখিত বন্ধু।
রিটার বলল, এডমিরাল ক্যানারিস। এবহোয়ের চীফ।
রোমেরো গোড়ালি ঠুকে স্যালুট করল। আমি সম্মানিত বোধ করছি, হের এডমিরাল।
‘আমাদের সাথে এসো, হের হল্সটার্মফুয়েরার। ক্যানারিস মেস স্টুয়ার্ডকে ডেকে বললেন। বলিংগার শ্যাম্পেন আর তিনটে গ্লাস। তারপর তিনি রোমেরোর দিকে ফিরে বললেন। আমি জানি তুমি একজন কুরিয়ার পাইলট। কাজটা কি তোমার পছন্দ?
‘সত্যি বলতে কি হের এডমিরাল, এই সাধারণ কাজটা আমার জন্য একঘেয়ে হয়ে উঠেছে।
‘সেক্ষেত্রে আমরা দেখবো তোমার জন্য এর চেয়ে ভাল কাজ পাওয়া যায় কি না। ওকে খুলে বলল হান্স।
.
রোমেরো ফাইলটা পড়া শেষ করে বন্ধ করল। তার চেহারা বিবর্ণ আর উত্তেজিত হয়ে রয়েছে। ক্যানারিস বললেন, “তোমার কি এতে অংশ গ্রহণের ইচ্ছা আছে?
‘ইচ্ছা মানে?’ রোমেরো রিটারের কাছ থেকে একটা সিগারেট নিল, ওর হাত কাঁপছিল। এতে অংশগ্রহণের জন্য আমি নতজানু হয়ে অনুমতি ভিক্ষা করতে রাজি।
ক্যানারিস হেসে ফেললেন, না, তা করার দরকার নেই।’
রিটার বলল, ‘ক্যাটালিনা চালাতে তোমার কোন সমস্যা হবে না তো?”
রোমেরো চেয়ারে বসে বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করল। একজন দ্বিতীয় বৈমানিক আর ইঞ্জিনিয়ার হলে আমি এটা সামলাতে পারব।’
‘কোথায় পাবো আমরা এদের?’ ক্যানারিস জিজ্ঞেস করলেন।
“ঠিক এখানে এস এস এর স্পেনিশ লিজিয়নে এদের পাওয়া যাবে। আমার মতোই হের এডমিরাল। এই মুহূর্তে আমি দুজন উপযুক্ত পদপ্রার্থীর কথা ভাবছি। জেভিয়ার নোভাল একজন ভাল পাইলট আর জুয়ান কোন্ডে একজন প্রতিভাবান বিমান প্রকৌশলী।
রিটার নাম দুটো নোট করে নিল। চমৎকার। আমি তোমার সাথে। ওদেরকেও এবহোয়ের ডিউটিতে বদলি করে দেব।
‘বিস্ফোরক আর মাইনের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা?’ রোমেরো জিজ্ঞেস করল।
‘আমরা আমাদের সুবিধামতো কোন কার্গো জাহাজে করে ওগুলো ডেলিভারি দেবার ব্যবস্থা করব।’ রিটার ওদের জানাল। দাহরানের মতো জায়গায় আমার মনে হয় কোন সমস্যা হবে না। সেপ্টেম্বর থেকেই যাতায়াত করে তোমরা তোমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলবে। উপসাগরীয় এলাকায় ব্যবসা, পণ্য পরিবহন এই ধরনের ব্যবসা।
রোমেরো ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। তবে আমার একটা প্রস্তাব আছে। সময় হলে আমরা মাইনগুলো সাগরে নিয়ে যেতে পারব। আমি সহজেই কোন জাহাজের পাশে ল্যান্ড করতে পারব। সেখান থেকে সরাসরি ঘাঁটিতে উড়ে গেলে পুরো ব্যপারটা আরো সহজ হবে।