সে ভাত আর খাসির গোস্ত মুখে পুরতে লাগল, টের পেল তার বেশ খিদে পেয়েছিল।
‘আর কোন কিছু ঘটেছে?
জর্ডন মাথা নাড়ল। কবরস্থানের মতো একদম নিরব। তুমি প্রায় আট ঘণ্টা ঘুমিয়েছো?’
‘আমাদের বন্ধুরা কি চলে গেছে?
‘ওরা ক্যাম্পের অন্য পাশে ছিল। আমার ধারণা বুড়ো শেখ এভাবেই বন্দোবস্ত করেছে। প্রায় দু’ঘন্টা আগে আমি ওদের গাড়ি চালিয়ে যাবার শব্দ পেয়েছি। তোমার কী মনে হয়, এখন ওরা কোথায় যাবে?
কেইন কাঁধ ঝাঁকাল। সোজা দাহরান যাবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে কিছু জানাবার আগেই কেটে পড়বে।’
‘তুমি কি ওদের থামাতে চেষ্টা করবে?
কেইন মাথা নাড়ল। মনে হয় না। ওরা চলে গেলেই আমি খুশি। এখানে ওদের কাজ কারবার শেষ। সে উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙলো। চল মাহমুদের সাথে দেখা করি।’
ওরা দেখল বুড়ো শেখ ওর তাঁবুতে আগুনের সামনে একটা ছাগলের চামড়ার আসনের উপর বসে টার্কিশ সিগারেট টানছে। চোখ আগুনের শিখার দিকে।
সে মৃদু হেসে ওদেরকে স্বাগত জানাল। তাহলে আমার বন্ধু সুস্থ হয়েছ? সে কেইনকে বলল।
কেইন তার পাশেই বসে পড়ল। তাহলে স্কিরোজ আর মুলার চলে গেছে?”
মাহমুদ মাথা কাত করল। আমি ওদেরকে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে এখানে একদিন ধরে রাখবো। এতটুকু ওদের জন্য আমার করার কথা।
‘স্কিরোজ একজন জার্মান, কেইন বলল। তার মতো একজন লোকের সাথে কাজকারবার করা কি বুদ্ধিমানের কাজ?
মাহমুদ মৃদু হাসল। তোমার বন্ধু একটা আমেরিকান তেল কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছে? যদি সে তেল পায় তাহলে কতদিনে আমরা তথাকথিত আমেরিকান সাহায্য পাবো?
‘সেটা কি খুব একটা খারাপ হবে? জর্ডন বলল।
মাহমুদ কাঁধ ঝাঁকাল। ওমানে ব্রিটিশরা আছে, ওরা ওদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করব। আর যদি জার্মানরা বোকার মতো আমাদের বিনা মূল্যে অস্ত্র দেয় সেটা আমরা নেবো।
কিন্তু সীমান্তের বেশিরভাগ উপজাতি গোষ্ঠি ঐ অস্ত্র দিয়ে ওমানে ব্রিটিশদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, কেইন বলল। আর জার্মানরা এটাই দেখতে চায়।’
বুড়ো কাধ ঝাঁকাল। সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।’
বোঝা গেল এই বিষয়ে আর কোন কথা বলে লাভ নেই। তাই কেইন বিষয় পরিবর্তন করল। আমি কি ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করতে পারি?
মাহমুদ মাথা নাড়ল। সে তাবুতে পাহারায় আছে। আমি নিজে তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো। ওদেরকে নিয়ে তাবু থেকে বের হবার সময় সে বলল। ‘তুমি যদি একজন বৃদ্ধ লোকের উপদেশ শুনতে চাও, তবে আমি বলবো দাহরান যাবার পর সাবধানে থেকো। স্কিরোজ কখনো ভুলবে না তুমি তার যা করেছ।’
মেরি পেরেটের তাঁবুর সামনে পৌঁছে সে একটু থামল। দরজার পাশেই ছায়ায় প্রহরি পা ভাজ করে বসে রয়েছে। তার মাথা বুকের উপর ঝুলছে। মাহমুদ বিরক্ত হয়ে সামনে এগিয়ে এক পা দিয়ে লোকটার গায়ে খোঁচা দিল।
লোকটা ঘাড় কাত করে সামনে বালতে গড়িয়ে পড়ল। সে তখনো জীবিত, তবে বাম কানের কাছে ঘাড়ে রক্ত দেখা যাচ্ছে। ভারি আঘাতের চিহ্ন।
তাবুতে ঢুকে কেইন দেখল ভেতরে কোন ধরনের ধস্তাধস্তি বা সংঘর্ষের আলামত নেই, তবে মেরিও সেখানে নেই। সে মাহমুদের দিকে ফিরে বলল। ‘ওরা তাকে ওদের সাথে নিয়ে গেছে।’
‘কিন্তু কেন?’ জর্ডন বলল।
‘এ দেশ থেকে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওকে জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করবে কিংবা আমার উপর একটা আঘাত দিল আর কি।’ কেইন কাঁধ ঝকাল। কারণটা জুরুরি নয়।’
মাহমুদ তার বাহু স্পর্শ করল, বুড়ো শেখের চোখে দুঃখের ছায়া ভেসে উঠল। আমি লজ্জিত যে এরকম একটা ঘটনা আমার ক্যাম্পে ঘটল। ওদেরকে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে একটা দিন আটকে রাখবো, এই ঘটনার পর এই প্রতিশ্রুতি থেকে আমি মুক্ত।
কেইন বলল, কারও দোষ নেই। তবে আমাদের এখুনি রওয়ানা হতে হবে। জামাল কোথায়?’
‘সে আমার দেহরক্ষীর সাথে ঘুমিয়েছিল, মাহমুদ বলল। আমি এখুনি তাকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি।’ সে তার তাঁবুর দিকে হাঁটতে শুরু করল। এদিকে কেইন আর জর্ডন তাড়াতাড়ি ওদের ট্রাকের দিকে এগোলো।
কানিংহামদের কী হবে? জর্ডন জিজ্ঞেস করল।
কেইন কাঁধে ঝাঁকি দিল। আপাতত ওরা নিজেরাই নিজেদের সামলাবে। এ ব্যাপারটা বেশি জরুরি।’
সে একটা সিগারেট ধরিয়ে পরিস্থিতিটা নিয়ে ভাবতে শুরু করল, এদিকে জর্ডন সবকিছু চালু আছে কিনা দেখে নিল। মাটির রাস্তায় এখান থেকে দাহরানের দূরত্ব প্রায় একশো বিশ মাইল, আবার জায়গায় জায়গায় রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। স্কিরোজ আর মুলার দু’ঘন্টা আগে রওয়ানা দিয়েছে। যদি পথে কোথাও ওদের গাড়ি বিকল না হয়ে থাকে তাহলে দাহরানের আগে ওদেরকে ধরা অসম্ভব।
জামাল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল, পিছু পিছু মাহমুদ তার কয়েকজন লোকসহ এল। জামাল পিছনের সিটে বসল আর জর্ডন চালকের আসনে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
ইঞ্জিন গর্জে উঠতেই মাহমুদ একটু সামনে ঝুঁকে কেইনের হাত ধরল। সবই আল্লাহর ইচ্ছা, বন্ধু।
পরে আবার দেখা হবে,’ কেইন বলল। জর্ডন গিয়ার বদল করতেই ট্রাকটা ধুলি উড়িয়ে এগিয়ে চলল।
প্রথম এক ঘণ্টা ওরা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে একটা পুরোনো উট চলার পথ দিয়ে চলল। জর্ডন অন্ধকারে সাবধানে নজর রেখে গাড়ি চালাচ্ছিল। অনেক সময় হেডলাইটের আলোয় কোন পাথর কিংবা অন্য কোন বাঁধা চোখে পড়তেই সাথে সাথে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে চলছিল।